কচুয়ায় সম্পত্তি হারিয়ে জীবন নাশের হুমকিতে সংখ্যালঘু পরিবার

  • আপডেট: ০৬:২৯:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০১৯
  • ২৩

মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ ॥
ভুলু রাণী ধর, বয়স আনুমানিক ৮০ হবে। স্বামী মারাগেছেন বহু বছর আগে। দুই পুত্র সন্তান নিয়ে কোন রকম অভাবের সংসারে দিন পার হচ্ছে তাদের। কিন্তু তাদের এই অবস্থায় থাকাটাও প্রভাবশালীদের সহ্য হচ্ছে না। বাড়ীর পাশের সড়কটি পাকা হওয়ার পরে নজর পড়ে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির উপর। প্রায় ৯শতাংশ জমি সিএনজি ফিলিং ও জালানি স্টেশন করার জন্য জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছেন প্রভাশালীরা। ছেলে খোকন চন্দ্র ধর ও উত্তম ধরের পরিবার নিয়ে বিধবা ভুলু রাণী এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। থানা ও জেলা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন সকলের কাছে গিয়েও কোন বিচার না পেয়ে শেষ আশ্রয় নিয়েছেন চাঁদপুর আদালতে।

ঘটনাটি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের সাচার গ্রামের ধর বাড়িতে। গত জুলাই মাসের ২৯ তারিখ সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে একই উপজেলার বিতাড়া ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত কাদের দর্জির ছেলে মো. সহিদ দর্জি তার ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের ভূমি দখল করে নেয়। বাঁধা দিতে আসলে তাদের জীবনে মেরে ফেলার হুমকিসহ বাড়ী থেকে উঠিয়ে দিবে বলে সহিদ ও তার লোকজন। ঘটনার পরে ওই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক খোকন ও উত্তম চাঁদপুরের পুলিশ সুপার, কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কচুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তাদের সম্পত্তির কাগজপত্র দেখে সকলে তাদের সম্পত্তি সঠিক বললেও আদালতের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে সহিদ দর্জি প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছে নিরীহ পরিবারটিকে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সকালে ঘটনাস্থল এলাকায় গিয়ে দেখাগেছে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলকারী সহিদ দর্জির নিজস্ব সম্পত্তি রয়েছে পাশে। সেখানেই তিনি সিএনজি ফিলিং স্টেশন করতে পারেন। কিন্তু তা না করে সংখ্যালঘুদের ৯শতাংশ ভূমিতে পাকা ভবন করার জন্য কাজ শুরু করেছেন। আদালতে মামলা করার কারণে এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

আরো পড়ুন :

https://notunerkotha.com/2019/08/26/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a6%bf/

খোকন চন্দ্র ধরের কলেজ পড়–য়া ছেলে অনিক চন্দ্র ধর বলেন, আমাদের ৯শতাংশ ভূমি শহীদ দর্জি ও তার স্ত্রী সালমা শহীদ জোর পূর্বক দখল করে নেয়। আমাদের দলিল, সিএস, আরএস, বিএস খতিয়ান ও খারিজ থাকলেও তাদের কোন কাগজ পত্র নেই। এই বিষয় নিয়ে থানা, উপজেলা ও বিভিন্ন স্থানে কয়েকবার শালিশ বৈঠক করলেও তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তাই আমরা এখন চাঁদপুর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছি।

ভূমির বর্তমান মালিক খোকন ও উত্তম চন্দ্র ধরের মা ভুলু রাণী ধর বলেন, একশ’ বছরেরও আগ থেকে আমার স্বামী অমৃত চন্দ্র ধর ও তার পূর্ব পুরুষগন এই ভূমি ভোগ দখল করে আসছেন। এত বছর পরে হঠাৎ করে প্রভাশালী লোকজন দখল করে নিয়েছে। আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি যেন আমাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয় এবং আমাদের জীবনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।

খোকন চন্দ্র ধরের স্ত্রী তাপসী রানী সরকার বলেন, তারা আমাদের সম্পত্তি থাকা সকল গাছ কর্তন করেছে। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে গেলে আমরা বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করি। তারা আমাদেরকে মারধর করতে তেড়িয়ে আসে। আমরা ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। সন্তান ও পরিবারের লোকজন নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। আমার স্বামী একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

এই বিষয়ে মো. শহিদ দর্জি বলেন, আমি ১৯৯৪ সালে দু’টি দলিলে খোকন চন্দ্র ধরের কাকা দিনেশ চন্দ্র ধরের কাছ থেকে ২৮ শতাংশ ভুমি ক্রয় করেছি। তারপর থেকে দখলেও আছি। এখন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কাজ শুরু করলে তারা তাদের সম্পত্তি বলে দাবী করে। আমি তাদেরকে কোন ধরনের হুমকি ধমকি দেইনি। তারা আদালতে মামলা করেছে, আমিও এডিএম কোর্টে মামলা করেছি। আমার কাগজপত্র সঠিক হলে আমি আমার সম্পত্তিতে নির্মাণ কাজ শুরু করবো। তারা যদি মালিক হয় এবং আদালত রায় দেয় আমার কোন আপত্তি নেই।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়ালি উল্যাহ ওলি বলেন, এই বিষয়ে আমি অবগত আছি। খোকন চন্দ্র ধর গংরা আদালতে মামলা করেছে। আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরে আমরা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না-রিজভী

কচুয়ায় সম্পত্তি হারিয়ে জীবন নাশের হুমকিতে সংখ্যালঘু পরিবার

আপডেট: ০৬:২৯:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০১৯

মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ ॥
ভুলু রাণী ধর, বয়স আনুমানিক ৮০ হবে। স্বামী মারাগেছেন বহু বছর আগে। দুই পুত্র সন্তান নিয়ে কোন রকম অভাবের সংসারে দিন পার হচ্ছে তাদের। কিন্তু তাদের এই অবস্থায় থাকাটাও প্রভাবশালীদের সহ্য হচ্ছে না। বাড়ীর পাশের সড়কটি পাকা হওয়ার পরে নজর পড়ে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির উপর। প্রায় ৯শতাংশ জমি সিএনজি ফিলিং ও জালানি স্টেশন করার জন্য জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছেন প্রভাশালীরা। ছেলে খোকন চন্দ্র ধর ও উত্তম ধরের পরিবার নিয়ে বিধবা ভুলু রাণী এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। থানা ও জেলা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন সকলের কাছে গিয়েও কোন বিচার না পেয়ে শেষ আশ্রয় নিয়েছেন চাঁদপুর আদালতে।

ঘটনাটি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের সাচার গ্রামের ধর বাড়িতে। গত জুলাই মাসের ২৯ তারিখ সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে একই উপজেলার বিতাড়া ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত কাদের দর্জির ছেলে মো. সহিদ দর্জি তার ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের ভূমি দখল করে নেয়। বাঁধা দিতে আসলে তাদের জীবনে মেরে ফেলার হুমকিসহ বাড়ী থেকে উঠিয়ে দিবে বলে সহিদ ও তার লোকজন। ঘটনার পরে ওই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক খোকন ও উত্তম চাঁদপুরের পুলিশ সুপার, কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কচুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তাদের সম্পত্তির কাগজপত্র দেখে সকলে তাদের সম্পত্তি সঠিক বললেও আদালতের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে সহিদ দর্জি প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছে নিরীহ পরিবারটিকে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সকালে ঘটনাস্থল এলাকায় গিয়ে দেখাগেছে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলকারী সহিদ দর্জির নিজস্ব সম্পত্তি রয়েছে পাশে। সেখানেই তিনি সিএনজি ফিলিং স্টেশন করতে পারেন। কিন্তু তা না করে সংখ্যালঘুদের ৯শতাংশ ভূমিতে পাকা ভবন করার জন্য কাজ শুরু করেছেন। আদালতে মামলা করার কারণে এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

আরো পড়ুন :

https://notunerkotha.com/2019/08/26/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a6%bf/

খোকন চন্দ্র ধরের কলেজ পড়–য়া ছেলে অনিক চন্দ্র ধর বলেন, আমাদের ৯শতাংশ ভূমি শহীদ দর্জি ও তার স্ত্রী সালমা শহীদ জোর পূর্বক দখল করে নেয়। আমাদের দলিল, সিএস, আরএস, বিএস খতিয়ান ও খারিজ থাকলেও তাদের কোন কাগজ পত্র নেই। এই বিষয় নিয়ে থানা, উপজেলা ও বিভিন্ন স্থানে কয়েকবার শালিশ বৈঠক করলেও তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তাই আমরা এখন চাঁদপুর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছি।

ভূমির বর্তমান মালিক খোকন ও উত্তম চন্দ্র ধরের মা ভুলু রাণী ধর বলেন, একশ’ বছরেরও আগ থেকে আমার স্বামী অমৃত চন্দ্র ধর ও তার পূর্ব পুরুষগন এই ভূমি ভোগ দখল করে আসছেন। এত বছর পরে হঠাৎ করে প্রভাশালী লোকজন দখল করে নিয়েছে। আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি যেন আমাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয় এবং আমাদের জীবনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।

খোকন চন্দ্র ধরের স্ত্রী তাপসী রানী সরকার বলেন, তারা আমাদের সম্পত্তি থাকা সকল গাছ কর্তন করেছে। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে গেলে আমরা বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করি। তারা আমাদেরকে মারধর করতে তেড়িয়ে আসে। আমরা ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। সন্তান ও পরিবারের লোকজন নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। আমার স্বামী একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

এই বিষয়ে মো. শহিদ দর্জি বলেন, আমি ১৯৯৪ সালে দু’টি দলিলে খোকন চন্দ্র ধরের কাকা দিনেশ চন্দ্র ধরের কাছ থেকে ২৮ শতাংশ ভুমি ক্রয় করেছি। তারপর থেকে দখলেও আছি। এখন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কাজ শুরু করলে তারা তাদের সম্পত্তি বলে দাবী করে। আমি তাদেরকে কোন ধরনের হুমকি ধমকি দেইনি। তারা আদালতে মামলা করেছে, আমিও এডিএম কোর্টে মামলা করেছি। আমার কাগজপত্র সঠিক হলে আমি আমার সম্পত্তিতে নির্মাণ কাজ শুরু করবো। তারা যদি মালিক হয় এবং আদালত রায় দেয় আমার কোন আপত্তি নেই।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়ালি উল্যাহ ওলি বলেন, এই বিষয়ে আমি অবগত আছি। খোকন চন্দ্র ধর গংরা আদালতে মামলা করেছে। আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরে আমরা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।