সৌদি আরবে নিহত ফরিদগঞ্জের সুমনের বাড়ীতে চলছে শোকের মাতম

  • আপডেট: ১২:৫০:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৯
  • ৪৪

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:

বদলের আশায় অর্থ উর্পাজন করে পরিবারের সুখের জন্য মাত্র ছ’মাস আগে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন প্রবাসে। স্বপ্ন ছিল অর্থ উর্পাজন করে পরিবারের দুঃখ ঘোচাবেন, কিন্তু সুখ যে শোকে পরিনত হবে কে জানতো। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মিরপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোঃ সুমনের(৩৮) জীবনের কথা এটি। তাঁর সুখ যেন কপালে সইলো না।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে ১১ আগস্ট সকলে যখন ঈদ-উল আযহা উদযাপনে ব্যস্ত তখনই ভাগ্যের কাছে পরাজিত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় সে। পরে গত ১৪ আগষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত হিসেবে ঘোষনা করে। এদিকে মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে সুমনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নার রোল থেকে মা বোন ভাই স্ত্রী সন্তান কাউকেই থামানো যাচ্ছে না।

জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মিরপুর গ্রামের বরকন্দাজ বাড়ির প্রয়াত মোখলেছুর রহমানের সাত সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সন্তান সুমন। দেশে থেকে ছোটখাটো ব্যবসা করে যখন দেখলেন সংসারের ঘানি টানতে কষ্ট হচ্ছে ঠিক তখন তাঁর মনে হলো প্রবাসে গিয়ে বুঝি ভাগ্য বদল করা যাবে। যেই কথা সেই কাজ এবছরের ১০ ফেব্রুয়ারী রোববার পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। সেখানে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে যখনই অর্থ উপার্জনের জন্য একটি বেশি মনোনিবেশ করবেন ঠিক তখনই ঘটলো এই দূর্ঘটনা। ১১ আগস্ট রাতে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয় সে। পরে পরদিন সকালে তাকে ভর্তি করা হয় সৌদি আরবের কিং আঃ আজিজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ আগস্ট মৃত্যু বরণ করে সে।

মিরপুর গ্রামে গিয়ে সুমনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দেশে থাকতে প্রায় দশ লক্ষ টাকার মত ঋণ করে গেছে সুমন। এসব ঋণের বোঝা এখন পরিবারের উপর এসে পড়েছে। স্ত্রী সুরাইয়া বেগম, দুই সন্তান সুমাইয়া আক্তার (১১) ও আরাফাত (৭) নিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন।

গর্ভধারীনি ‘মা’ রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার সন্তান বিদেশ গিয়া মইরা গেছে। আমার পোলার লাশটা আমি দেখতাম চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ আমার পোলার লাশটা দ্রুত আননের ব্যবস্থা কইরা দেন।’

সেীদিআরবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিহত সুমনের পরিবার

স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘দ্রুত আমার স্বামীর লাশ দেশে পাডাইয়া দিতে কন। আমার এহন কি অইবো। ছোড দুইটা পোলামাইয়ারে ছাইড়া তিনি চইলা গেলেন না ফেরার দেশে। এর উপর আবার ঋণের বোঝা তো আছেই। কিভাবে এত দেনা শোধ করমু ভাইবা ই পাই না। ’

সুমনের ভাই আনিছুর রহমান সুজন ঘটনা জানিয়ে বলেন, আমরা ভাইয়ের লাশ বাংলাদেশে আনতে পারিনি। সৌদি সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলে লাশটি দ্রুতই দেশে আনা যেত। তাছাড়া আমাদের পারিবারের আর্থিক অবস্থা ও খারাপ। ধার-দেনা করে সৌদিতে গিয়েছিলো। সে টাকাই এখনো শোধ করতে পারেনি।’

মেয়ে সুমাইয়া আক্তার হিমু বলেন,‘আমার বাবারে দেখতে চাই। বাবা কেন বিদেশে গেলো। বাবারে কতদিন দেখি না। আমার বাবারে ফিরাইয়া দেন।’বারবারই একথা বলছে আর কেঁদে উঠছে সুমাইয়া।’

চাচা ইলিয়াছ বলেন, ‘ভাতিজা আমার খুব ভালা আছিলো। বেশ কিছু টাকা ঋণ আছে তাঁর। দেওনের মত তেমন সামর্থ্য নাই পরিবারের। খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। কই থিকা এই ঋণের টাকা শোধ করবো। সুমনের পরিবারে অহন শোকের ছাঁয়া।’

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না-রিজভী

সৌদি আরবে নিহত ফরিদগঞ্জের সুমনের বাড়ীতে চলছে শোকের মাতম

আপডেট: ১২:৫০:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৯

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:

বদলের আশায় অর্থ উর্পাজন করে পরিবারের সুখের জন্য মাত্র ছ’মাস আগে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন প্রবাসে। স্বপ্ন ছিল অর্থ উর্পাজন করে পরিবারের দুঃখ ঘোচাবেন, কিন্তু সুখ যে শোকে পরিনত হবে কে জানতো। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মিরপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোঃ সুমনের(৩৮) জীবনের কথা এটি। তাঁর সুখ যেন কপালে সইলো না।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে ১১ আগস্ট সকলে যখন ঈদ-উল আযহা উদযাপনে ব্যস্ত তখনই ভাগ্যের কাছে পরাজিত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় সে। পরে গত ১৪ আগষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত হিসেবে ঘোষনা করে। এদিকে মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে সুমনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নার রোল থেকে মা বোন ভাই স্ত্রী সন্তান কাউকেই থামানো যাচ্ছে না।

জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মিরপুর গ্রামের বরকন্দাজ বাড়ির প্রয়াত মোখলেছুর রহমানের সাত সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সন্তান সুমন। দেশে থেকে ছোটখাটো ব্যবসা করে যখন দেখলেন সংসারের ঘানি টানতে কষ্ট হচ্ছে ঠিক তখন তাঁর মনে হলো প্রবাসে গিয়ে বুঝি ভাগ্য বদল করা যাবে। যেই কথা সেই কাজ এবছরের ১০ ফেব্রুয়ারী রোববার পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। সেখানে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে যখনই অর্থ উপার্জনের জন্য একটি বেশি মনোনিবেশ করবেন ঠিক তখনই ঘটলো এই দূর্ঘটনা। ১১ আগস্ট রাতে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয় সে। পরে পরদিন সকালে তাকে ভর্তি করা হয় সৌদি আরবের কিং আঃ আজিজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ আগস্ট মৃত্যু বরণ করে সে।

মিরপুর গ্রামে গিয়ে সুমনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দেশে থাকতে প্রায় দশ লক্ষ টাকার মত ঋণ করে গেছে সুমন। এসব ঋণের বোঝা এখন পরিবারের উপর এসে পড়েছে। স্ত্রী সুরাইয়া বেগম, দুই সন্তান সুমাইয়া আক্তার (১১) ও আরাফাত (৭) নিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন।

গর্ভধারীনি ‘মা’ রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার সন্তান বিদেশ গিয়া মইরা গেছে। আমার পোলার লাশটা আমি দেখতাম চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ আমার পোলার লাশটা দ্রুত আননের ব্যবস্থা কইরা দেন।’

সেীদিআরবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিহত সুমনের পরিবার

স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘দ্রুত আমার স্বামীর লাশ দেশে পাডাইয়া দিতে কন। আমার এহন কি অইবো। ছোড দুইটা পোলামাইয়ারে ছাইড়া তিনি চইলা গেলেন না ফেরার দেশে। এর উপর আবার ঋণের বোঝা তো আছেই। কিভাবে এত দেনা শোধ করমু ভাইবা ই পাই না। ’

সুমনের ভাই আনিছুর রহমান সুজন ঘটনা জানিয়ে বলেন, আমরা ভাইয়ের লাশ বাংলাদেশে আনতে পারিনি। সৌদি সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলে লাশটি দ্রুতই দেশে আনা যেত। তাছাড়া আমাদের পারিবারের আর্থিক অবস্থা ও খারাপ। ধার-দেনা করে সৌদিতে গিয়েছিলো। সে টাকাই এখনো শোধ করতে পারেনি।’

মেয়ে সুমাইয়া আক্তার হিমু বলেন,‘আমার বাবারে দেখতে চাই। বাবা কেন বিদেশে গেলো। বাবারে কতদিন দেখি না। আমার বাবারে ফিরাইয়া দেন।’বারবারই একথা বলছে আর কেঁদে উঠছে সুমাইয়া।’

চাচা ইলিয়াছ বলেন, ‘ভাতিজা আমার খুব ভালা আছিলো। বেশ কিছু টাকা ঋণ আছে তাঁর। দেওনের মত তেমন সামর্থ্য নাই পরিবারের। খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। কই থিকা এই ঋণের টাকা শোধ করবো। সুমনের পরিবারে অহন শোকের ছাঁয়া।’