বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে এ দেশের সব মানুষের ত্যাগ ও তিতিক্ষা জড়িয়ে আছে। কারও একক প্রচেষ্টায় স্বৈরাচারী হাসিনামুক্ত হওয়া সম্ভব হয়নি। কাজেই যে যা কিছু করবেন, সব কিছুর হিসাব দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আফসার আহমেদ সিদ্দিকীর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতার তিনি এসব কথা বলেন।
অহংকারীকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না উল্লেখ করে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, যারা দেশের মানুষকে অবজ্ঞা করেছে, মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মেরেছে এবং মারার জন্য কোনো ধরনের অনুশোচনা বোধ করেনি, তারা আজকে কোথায়? কাজেই আমাদের কিন্তু মনে রাখতে হবে, আজকে অনেকে অনেক কথা বলছে, সব সময় সবাইকে মনে রাখতে হবে। আমি সবসময় বলি, ৪৭ না হলে ৫২ হতো না, ৫২ না হলে ৬৬ হতো না, ৬৬ না হলে ৬৯ হতো না, ৬৯ না হলে ৭১ হতো না এবং ৯০-এর গণ আন্দোলনসহ ২৪-এর মত প্রকাশের স্বাধীনতা হতো না। আপনারা এর কোনোটাকে যদি অস্বীকার করেন, তাহলে বলবো ওই ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। অর্থাৎ ইতিহাসকে অস্বীকার করলেন এবং আপনি নিজেও আমিত্বে ভুগলেন। যেই আমিত্বে ভুগেছিল পতিত স্বৈরাচার, আজকে তারা কোথায়?
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই পতিত সরকারের স্বৈরাচারীরা ২০০৬ সালে ওয়ান ইলেভেন তৈরি করে মানুষের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছিল। লগি বৈঠা দিয়ে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে নৃত্য করেছিলো। শেখ মুজিব যেভাবে লাল ঘোড়া দাবড়ে দিয়েছিল, শেখ হাসিনাও তেমনি দলীয় আনুগত্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য ও দলীয় গুন্ডাবাহিনীকে ব্যবহার করে দেশের ছাত্রজনতা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর বিগত ১৭ বছর একরকম আমিত্বের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন। তাদের পরাজয় কিভাবে হয়েছিল? কাজেই ভবিষ্যতেও কেউ যদি মনে করে, আমরা আপনারা যা কিছু করব, এটার কোনো হিসাব দিতে হবে না- সেটা ভুল। হিসাব আমাদের সবাইকেই দিতে হবে।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, আজকে যে বা যারা কর্তৃত্ববাদীতায়, আমিত্বে বিশ্বাস করছেন যে, আমিই সব করছি, আমরাই সব করেছি, দেশের মানুষ কিছু না- এটি ভুল। মনে রাখবেন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে যখন সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবদান ছিল, আর চব্বিশে নতুন কথা বলার স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতা, স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হওয়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে- এর সঙ্গেও জড়িত রয়েছে এ দেশের সব মানুষের ত্যাগ ও তিতিক্ষা। তাদের কাউকে ছোট করে দেখার চেষ্টা করা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, আফসার আহমেদ সিদ্দিকী দুই দুইবার সংসদ সদস্য ও পৌর চেয়ারম্যান থাকার পরেও ঢাকা শহরে তার কোনো সম্পদ নেই। মানুষ তাদের মতো রাজনীতি করলে এদেশের ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যেত না। তবে বর্তমান সরকারও এসব টাকা পাচারের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খুলনা বিভাগ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক জেরিন খান প্রমুখ।