চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের বাসিন্দা সোহেল রানা। স্থানীয়ভাবে লোকজন সোহেল মাষ্টার হিসেবে ডাকেন। তিনি পেশায় শিক্ষক হলেও এর আড়ালে নানা অপরাধমূলক কাজের গডফাদার। কিশোর গ্যাং, ইভটিজিং, মাদকসহ বিভিন্ন কাজে জড়িত কিশোর ও তরুনদের নেতা এখন তিনি। যে কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি পরিচয়ে অফিস খুলে বসেছেন এলাকায়। সেখানে চলে বিচারকার্য থেকে শুরু করে সকল পরিকল্পনা। তবে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত নেতারা বলছেন-সাংগঠনিক কাঠামোর বাহিরে এমপির প্রতিনিধি পরিচয় দেয়া এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা বন্টন করার কোন বিধান নেই।
খোঁজ নিয়ে এবং স্থানীয় লোকজনের সাথ কথা বলে জানাগেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রত্যেক ইউনিয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাজ করার জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। তার মধ্যে সোহেল রানা একজন। তিনি পাশবর্তী রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রুস্তমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। কিন্তু এমপির প্রতিনিধি নিয়োগ পেয়ে শিক্ষকতার চাইতে রাজনৈতিক বলয় তৈরীর কাজে তিনি বেশি ব্যস্ত। তার সাথে রয়েছে একটি বড় ধরণের কিশোর গ্যাং। যারা এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিস থাকলেও সেটাতে ময়লা পড়ে আছে। বছরে একদিনও খোলা হয় না। কিন্তু পাশেই সোহেল রানা নিজে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নামে অফিস খুলে বসেছেন। সেখানে সরকারি টিআর, কাবিখা, বিভিন্ন ভাতা বন্টনের কাজ হয়। একই সাথে করা হয় স্থানীয়দের বিভিন্ন বিচারকার্য।
স্থানীয় খাজুরিয়া বাজারের চা দোকানী ফারুক মিজি ও কাঠের ব্যবসায়ী নজির জানান, আওয়ামী লীগ অফিস এখন আর খুলতে দেখি না। সোহেল মাষ্টার যে অফিস দিয়েছে সেটাইতে লোকজন বসেন। প্রতিদিন বিকেলে এসে সোহেল মাষ্টার ও তার অনুসারিরা এই অফিসে বসেন।
গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহিলা ইউপি সদস্য রোকেয়া বেগম জানান, আমাদের ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের লোকজনের মধ্যে কোন ভাগ ছিল না। সোহেল মাষ্টার নিজে অফিস দেয়ার পর ভাগ হয়েছে। আমরা ভাগ চাই না। আমরা সরকারের হয়ে সবাই মিলে সমাজের কাজ করতে চাই।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াছ বেগ জানান, কোন অনুষ্ঠান হলে অফিস খোলা হয়। না হয় বন্ধ থাকে। আমরা দলীয় লোক হলেও আমাদের কোন কাজ নাই। যারা আগে-পিছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-যুবকদের নিয়ে ঘুরতে পারে তাদের সাথে লোকজন ভিড়ছে। আমাদের অর্থ নেই, এই ধরণের কাজেও নেই। কারণ এসব ছেলেরা নেতাদের সাথে ঘুরে পরে অবার মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়। এদের দায়িত্ব কে নেবে?
শিক্ষক সোহেল রানা বলেন, আমি একজন শিক্ষক, আমার সমাজে সম্মান আছে। অফিস আমার না। এটি আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগীদের অফিস। কারণ বড়দের সাথে এসব ছেলেরা গিয়ে বসতে পারে না। এই জন্য আলাদা অফিস তৈরী হয়েছে। আমার সাথে তারা থাকে। আর বিচার কাজত আদালত করবে। আমরা কেন করব। তবে এলাকার লোকজন কোন সমস্যা নিয়ে আসলে তা সমাধান করার চেষ্টা করি। সব সমস্যার কথা নিয়ে এমপির কাছে যাওয়া যায় না। কিশোর গ্যাং, মাদক ও ইভটিজিং এর অভিযোগগুলো সঠিক না। আমাদের যারা প্রতিপক্ষ তারা এসব বলে। আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি সমাজের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে দুইজন করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি আছে। এই নিয়ম বাংলাদেশের কোথাও নেই। আমার মতে এমপির পরিচয়ে তারা একটি নিজস্ব বলয় তৈরী করার জন্য এই কাজটি করছে। তারা নিজস্ব অফিসে বসে টিআর, কাবিখা ও বিভিন্ন ভাতা বন্টন করে। থানার মধ্যে এসেও তারা বসে থাকে দালালি করতে। যেখানে আওয়ামী লীগের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ নেই। এটি সাংগঠনিক কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে না।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জহিরুল ইসলাম বলেন, এমপির পরিচয় দিয়ে কিংবা প্রতিনিধি হিসেবে কার্যক্রমের কোন সাংগঠনিক নিয়ম নেই। যদি কেউ করে থাকেন তাহলে এটি সংগঠনকে খাট করা হবে। কোন ব্যাক্তির পছন্দে এই ধরণের প্রতিনিধি নিয়োগ হতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি জনগণের মতামতে একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। সে ক্ষেত্রে কেন আবার আলাদা লোক নিয়োগ দিতে হবে। সব বিষয়ে সরাসরি কাজ হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান এর নিকট মুঠোফোনে জানানো হয় শিক্ষক সোহেল রানার অনিয়মের বিষয়ে। তিনি তার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়ে অনিয়ম করে বেড়াচ্ছেন জাননো হয়। সংসদ সদস্য জানান, আমিত তার পরিচয়ে চলি না। সে আমার পরিচয়ে চলে। সে যদি কোন অনিয়ম করে তার জবাব সে দিবে। সাংবাদিক হিসেবে আপনার যেটা করণিয় সেটি করতে পারেন।