মোদির জয় যে বার্তা দিল

  • আপডেট: ০২:২৭:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯
  • ৬০

ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচন ৩৯ দিনব্যাপী ৬ দফায় ভোট গ্রহণ সম্পন্নের পর ইতিমধ্যে যে ফল জানা গেছে তাতে স্পষ্ট, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ফের ক্ষমতাসীন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগেই বর্তমান শাসক মহলের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার আভাস মিলেছিল। এই নির্বাচনটি ভারতের রাজনীতির জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে কয়েকটি কারণে।

প্রথমত, ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান মোদির হাত ধরে ২০১৪ সালে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে, নরেন্দ্র মোদি সে সময়ে আবির্ভূত হয়ে এক ধরনের চমক সৃষ্টি করেছিলেন এবং এও ধারণা করা হয়েছিল, এই চমক হয়তো দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কিন্তু ভারতের ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলের মাধ্যমে সে দেশের রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি একটি শক্তিশালী দল হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

দ্বিতীয়ত, এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে শাসক দল বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনের প্রচারাভিযানকালে ব্যাপক কাদা ছোড়াছুড়ি ও দ্বন্দ্ব প্রকটভাবে লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে দলগুলোর নেতাদের মধ্যে অসহিষুষ্ণতা, পারস্পরিক আস্থাহীনতা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা গেছে, যা অতীতে তেমন করে দেখা যায়নি। এমনকি নির্বাচনে সহিংসতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছিল এবার।

তৃতীয়ত, অনেক রাজনৈতিক বিশ্নেষক আঞ্চলিক দলগুলোর ওপর নির্ভরশীলতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এমনকি নির্বাচন-পরবর্তীকালে বিজেপি এবং কংগ্রেসের বাইরে আঞ্চলিক দলগুলোর সমন্বয়ে সরকার গঠন করারও স্বপ্ন দেখেছে এবং সে রকম তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে আঞ্চলিক দলগুলোর মাধ্যমে সৃষ্ট মহাজোট যা মহাগঠবন্ধন নামে পরিচিত, এর মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়াবতী কিংবা চন্দ্রবাবু নাইডুর মতো ব্যক্তিত্ব ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু নির্বাচনের ফলে দেখা গেল, আঞ্চলিক দলগুলো তাদের আগের অবস্থানও ধরে রাখতে পারেনি। এক অর্থে আঞ্চলিক দলগুলোর ফল বিপর্যয়কর। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে উত্তর প্রদেশ। এমন দৃষ্টান্ত আরও আছে।

চতুর্থত, এই নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনেনি। দলটির শীর্ষ নেতারা চেষ্টা করেছিলেন, দলের প্রার্থীরা যাতে তুলনামূলক ভালো ফল করে। কিন্তু ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে একটি অন্যতম বিকল্প শক্তি হিসেবে তারা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়নি। নির্বাচনের চুলছেঁড়া বিশ্নেষণ করলে দেখা যাবে, কংগ্রেস নির্বাচনকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হিসেবে দেখেছে। বিজেপি ও ভারতের এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ কংগ্রেসকে সম্পূর্ণভাব নিশ্চিহ্ন করার কথা বলেছেন এবং তারা সে ধরনের ছক কষে কাজও করেছেন। কিন্তু নির্বাচনে ভারতের এই ঐতিহ্যবাহী দলটির ওপর জনআস্থা একেবারে নেমে যায়নি।

পঞ্চমত, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে গণতন্ত্রের দীর্ঘ চর্চার উদাহরণ সৃষ্টিকারী ভারতের রাজনীতির জন্য এই নির্বাচন একটি নেতিবাচক বার্তাও দিয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে ভারতের গণতন্ত্রের মূল প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনের প্রচারাভিযানে অনেক রাজনীতিবিদের ভাষা ও আচরণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিপরীত ছিল। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যে সবই সম্ভব, এরই প্রমাণ মিলেছে এবার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। বৈরী আচরণেরও এক ধরনের বৈধতা প্রদান করা হয়েছে, যা সুস্থ রাজনীতির জন্য অনুকূল নয়। বিশেষ করে ভারতের মতো গণতান্ত্রিক সমাজে এমনটি কাঙ্ক্ষিত নয়।

বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট পরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পথে থাকলেও বিজেপির এবারের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে বিভাজনের রাজনীতিকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির মেনিফেস্টোতে মূল বিষয় ছিল সুশাসন এবং যোগ্য নেতৃত্ব। ২০১৯ সালে এসে দলটি উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসনের বিষয়গুলো অনেকটা উপেক্ষিত থেকে গেছে। সম্ভবত এর প্রধান কারণ, গত পাঁচ বছরে ভারতে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, কৃষকদের ঋণ সংকট ইত্যাদি কারণ হিসেবে কাজ করেছে। ফলে জনগণের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও শঙ্কা পরিলক্ষিত হতে পারে এই ভেবে যে, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা ভবিষ্যৎ ভারতকে আরও প্রকটভাবে গ্রাস করবে।

ভারতের নির্বাচন নিয়ে এই কয়েকটি বিষয় ছাড়াও অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দ্বিতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদি কী ধরনের শাসক হিসেবে আবির্ভূত হবেন। এ ক্ষেত্রে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কতটাই-বা প্রভাবিত হতে পারে- এটিও প্রশ্ন। এ কথা নির্দি্বধায় বলা যায়, কংগ্রেসের পর বিজেপি নিজেকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক শক্তি এই মুহূর্তে তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং বিদ্যমান বাস্তবতা কঠিন হলেও বিজেপির প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়াই করে আবার যে কোনো সময় ক্ষমতায় আসতে পারে। তবে এর জন্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হিসাব করে দলটিকে এগোতে হবে। একইভাবে কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিজেপি ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখবে। এর ফলে ভারতের রাজনীতিতে একটি দ্বিদলীয় ব্যবস্থা পরিস্কারভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা এই নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক দলগুলোর ভূমিকা নতুনভাবে মূল্যায়িত হওয়ার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলো বিজেপি কিংবা কংগ্রেসের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে নাকি এক ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে, এটাও প্রশ্ন। বিষয়টি ভারতের রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে ভারতের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ, উদারবাদী শক্তিকে সহায়তা করা হবে নাকি উগ্র ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আরও তোষণ করা হবে, এ প্রশ্নও সামনে রয়েছে। ভারতের অন্তর্নিহিত শক্তি হচ্ছে দেশটির বহুত্ববাদ। তবে তা কতটুকু বজায় থাকবে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। ভারত একটি বহুজাতিক, বহুধর্ম, বহুভাষা ও বহুবর্ণের মানুষের দেশ।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বড় আকারে পরিবর্তনের সম্ভাবনা একেবারেই কম। গত এক দশকে কংগ্রেস ও বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, গত এক দশকে সীমান্ত সমস্যা, ছিটমহল বিনিময়, ট্রানজিট সুবিধা, বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। এর ওপর দাঁড়িয়েই আজ যখন ভারতে নির্বাচনের মাধ্যমে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট পুনরায় শাসনভার নিতে যাচ্ছে, তখন দুই দেশের সম্পর্কের জায়গাটি আরও শক্তিশালী হওয়ার আশা পোষণ করা যায়। তবে গভীর বিশ্নেষণে গেলে দেখা যাবে, দুই দেশের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য এবং অমীমাংসিত বিষয়ও রয়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের জায়গা থেকে বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ভারতের বর্তমান সরকার কয়েকটি বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেনি। এই বিষয়গুলো বাংলাদেশ কীভাবে ভারতের নতুন সরকারের কাছ থেকে আদায় করবে কিংবা মোদি তার দ্বিতীয় মেয়াদে কীভাবে এসব ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন, এর জন্য আমাদের আপাতত সামনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।

তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি অতীতের আশ্বাস কীভাবে দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনামলে বাস্তবায়ন করবেন, তাও দেখার বিষয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা আরও পুষ্ট ও শক্তিশালী করার জন্য অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে, বিশেষ করে তিস্তার ব্যাপারে দ্রুত চুক্তি সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, সেখানে ভারত আরও কতটা সহযোগিতা অর্থাৎ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে, সেটিও দেখার বিষয়। হঠাৎ করে পুনরায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। বিএসএফ কর্তৃক সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ভারতের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে শূন্য হত্যাকাণ্ড পরস্থিতি ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ভূমিকা নিয়ে ভারতের এক ধরনের প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে ভারতের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার পরিস্কার করে বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নই বাংলাদেশের কূটনীতির মূল ভিত্তি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। বিষয়টি ভারতের নতুন সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

কয়েক বছর ধরে ভারতের ভেতরের একটি অস্বস্তিকর বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যদিও তা তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়; তবুও এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তা হলো, বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা রাজ্যগুলোতে তথাকথিত অবৈধ বাঙালি অভিবাসীদের বিষয়টিকে রাজনীতিতে এবং নিরাপত্তা ভাবনায় টেনে নিয়ে আসা। এটি রাজনৈতিক কারণে হলেও বাঙালি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিজেপির শীর্ষ রাজনীতিবিদদের বক্তব্য এক ধরনের উৎকণ্ঠার জন্ম দেয়। আসামের মতো অন্যান্য রাজ্যে এনআরসি কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অতীতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে এ বিষয়টি যখনই সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে, তখনই দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা ও মতপার্থক্য বৃদ্ধি পেয়েছে। নরেন্দ্র মোদি তার দ্বিতীয় মেয়াদে এ ধরনের অগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়টি সঠিকভাবে মোকাবেলা করবেন, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, মোদি তার প্রথম শাসনামলে দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে ও বাইরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি বাস্তববাদী নীতি অবলম্বন করেছেন। যে কারণে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অনেক মতাদর্শিক, স্পর্শকাতর ও নেতিবাচক প্রবণতা পররাষ্ট্রনীতির ওপরে তেমন প্রভাব রাখেনি, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই বিষয়টি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ভবিষ্যতেও কাজ করবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যাপক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

ড. দেলোয়ার হোসেন

অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

চাঁদপুরে খাঁটি গরুর দুধ বিক্রর নামে প্রতারণা

মোদির জয় যে বার্তা দিল

আপডেট: ০২:২৭:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯

ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচন ৩৯ দিনব্যাপী ৬ দফায় ভোট গ্রহণ সম্পন্নের পর ইতিমধ্যে যে ফল জানা গেছে তাতে স্পষ্ট, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ফের ক্ষমতাসীন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগেই বর্তমান শাসক মহলের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার আভাস মিলেছিল। এই নির্বাচনটি ভারতের রাজনীতির জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে কয়েকটি কারণে।

প্রথমত, ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান মোদির হাত ধরে ২০১৪ সালে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে, নরেন্দ্র মোদি সে সময়ে আবির্ভূত হয়ে এক ধরনের চমক সৃষ্টি করেছিলেন এবং এও ধারণা করা হয়েছিল, এই চমক হয়তো দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কিন্তু ভারতের ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলের মাধ্যমে সে দেশের রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি একটি শক্তিশালী দল হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

দ্বিতীয়ত, এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে শাসক দল বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনের প্রচারাভিযানকালে ব্যাপক কাদা ছোড়াছুড়ি ও দ্বন্দ্ব প্রকটভাবে লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে দলগুলোর নেতাদের মধ্যে অসহিষুষ্ণতা, পারস্পরিক আস্থাহীনতা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা গেছে, যা অতীতে তেমন করে দেখা যায়নি। এমনকি নির্বাচনে সহিংসতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছিল এবার।

তৃতীয়ত, অনেক রাজনৈতিক বিশ্নেষক আঞ্চলিক দলগুলোর ওপর নির্ভরশীলতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এমনকি নির্বাচন-পরবর্তীকালে বিজেপি এবং কংগ্রেসের বাইরে আঞ্চলিক দলগুলোর সমন্বয়ে সরকার গঠন করারও স্বপ্ন দেখেছে এবং সে রকম তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে আঞ্চলিক দলগুলোর মাধ্যমে সৃষ্ট মহাজোট যা মহাগঠবন্ধন নামে পরিচিত, এর মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়াবতী কিংবা চন্দ্রবাবু নাইডুর মতো ব্যক্তিত্ব ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু নির্বাচনের ফলে দেখা গেল, আঞ্চলিক দলগুলো তাদের আগের অবস্থানও ধরে রাখতে পারেনি। এক অর্থে আঞ্চলিক দলগুলোর ফল বিপর্যয়কর। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে উত্তর প্রদেশ। এমন দৃষ্টান্ত আরও আছে।

চতুর্থত, এই নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনেনি। দলটির শীর্ষ নেতারা চেষ্টা করেছিলেন, দলের প্রার্থীরা যাতে তুলনামূলক ভালো ফল করে। কিন্তু ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে একটি অন্যতম বিকল্প শক্তি হিসেবে তারা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়নি। নির্বাচনের চুলছেঁড়া বিশ্নেষণ করলে দেখা যাবে, কংগ্রেস নির্বাচনকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হিসেবে দেখেছে। বিজেপি ও ভারতের এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ কংগ্রেসকে সম্পূর্ণভাব নিশ্চিহ্ন করার কথা বলেছেন এবং তারা সে ধরনের ছক কষে কাজও করেছেন। কিন্তু নির্বাচনে ভারতের এই ঐতিহ্যবাহী দলটির ওপর জনআস্থা একেবারে নেমে যায়নি।

পঞ্চমত, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে গণতন্ত্রের দীর্ঘ চর্চার উদাহরণ সৃষ্টিকারী ভারতের রাজনীতির জন্য এই নির্বাচন একটি নেতিবাচক বার্তাও দিয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে ভারতের গণতন্ত্রের মূল প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনের প্রচারাভিযানে অনেক রাজনীতিবিদের ভাষা ও আচরণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিপরীত ছিল। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যে সবই সম্ভব, এরই প্রমাণ মিলেছে এবার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। বৈরী আচরণেরও এক ধরনের বৈধতা প্রদান করা হয়েছে, যা সুস্থ রাজনীতির জন্য অনুকূল নয়। বিশেষ করে ভারতের মতো গণতান্ত্রিক সমাজে এমনটি কাঙ্ক্ষিত নয়।

বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট পরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পথে থাকলেও বিজেপির এবারের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে বিভাজনের রাজনীতিকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির মেনিফেস্টোতে মূল বিষয় ছিল সুশাসন এবং যোগ্য নেতৃত্ব। ২০১৯ সালে এসে দলটি উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসনের বিষয়গুলো অনেকটা উপেক্ষিত থেকে গেছে। সম্ভবত এর প্রধান কারণ, গত পাঁচ বছরে ভারতে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, কৃষকদের ঋণ সংকট ইত্যাদি কারণ হিসেবে কাজ করেছে। ফলে জনগণের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও শঙ্কা পরিলক্ষিত হতে পারে এই ভেবে যে, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা ভবিষ্যৎ ভারতকে আরও প্রকটভাবে গ্রাস করবে।

ভারতের নির্বাচন নিয়ে এই কয়েকটি বিষয় ছাড়াও অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দ্বিতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদি কী ধরনের শাসক হিসেবে আবির্ভূত হবেন। এ ক্ষেত্রে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কতটাই-বা প্রভাবিত হতে পারে- এটিও প্রশ্ন। এ কথা নির্দি্বধায় বলা যায়, কংগ্রেসের পর বিজেপি নিজেকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক শক্তি এই মুহূর্তে তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং বিদ্যমান বাস্তবতা কঠিন হলেও বিজেপির প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়াই করে আবার যে কোনো সময় ক্ষমতায় আসতে পারে। তবে এর জন্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হিসাব করে দলটিকে এগোতে হবে। একইভাবে কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিজেপি ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখবে। এর ফলে ভারতের রাজনীতিতে একটি দ্বিদলীয় ব্যবস্থা পরিস্কারভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা এই নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক দলগুলোর ভূমিকা নতুনভাবে মূল্যায়িত হওয়ার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলো বিজেপি কিংবা কংগ্রেসের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে নাকি এক ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে, এটাও প্রশ্ন। বিষয়টি ভারতের রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে ভারতের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ, উদারবাদী শক্তিকে সহায়তা করা হবে নাকি উগ্র ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আরও তোষণ করা হবে, এ প্রশ্নও সামনে রয়েছে। ভারতের অন্তর্নিহিত শক্তি হচ্ছে দেশটির বহুত্ববাদ। তবে তা কতটুকু বজায় থাকবে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। ভারত একটি বহুজাতিক, বহুধর্ম, বহুভাষা ও বহুবর্ণের মানুষের দেশ।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বড় আকারে পরিবর্তনের সম্ভাবনা একেবারেই কম। গত এক দশকে কংগ্রেস ও বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, গত এক দশকে সীমান্ত সমস্যা, ছিটমহল বিনিময়, ট্রানজিট সুবিধা, বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। এর ওপর দাঁড়িয়েই আজ যখন ভারতে নির্বাচনের মাধ্যমে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট পুনরায় শাসনভার নিতে যাচ্ছে, তখন দুই দেশের সম্পর্কের জায়গাটি আরও শক্তিশালী হওয়ার আশা পোষণ করা যায়। তবে গভীর বিশ্নেষণে গেলে দেখা যাবে, দুই দেশের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য এবং অমীমাংসিত বিষয়ও রয়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের জায়গা থেকে বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ভারতের বর্তমান সরকার কয়েকটি বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেনি। এই বিষয়গুলো বাংলাদেশ কীভাবে ভারতের নতুন সরকারের কাছ থেকে আদায় করবে কিংবা মোদি তার দ্বিতীয় মেয়াদে কীভাবে এসব ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন, এর জন্য আমাদের আপাতত সামনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।

তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি অতীতের আশ্বাস কীভাবে দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনামলে বাস্তবায়ন করবেন, তাও দেখার বিষয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা আরও পুষ্ট ও শক্তিশালী করার জন্য অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে, বিশেষ করে তিস্তার ব্যাপারে দ্রুত চুক্তি সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, সেখানে ভারত আরও কতটা সহযোগিতা অর্থাৎ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে, সেটিও দেখার বিষয়। হঠাৎ করে পুনরায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। বিএসএফ কর্তৃক সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ভারতের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে শূন্য হত্যাকাণ্ড পরস্থিতি ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ভূমিকা নিয়ে ভারতের এক ধরনের প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে ভারতের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার পরিস্কার করে বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নই বাংলাদেশের কূটনীতির মূল ভিত্তি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। বিষয়টি ভারতের নতুন সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

কয়েক বছর ধরে ভারতের ভেতরের একটি অস্বস্তিকর বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যদিও তা তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়; তবুও এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তা হলো, বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা রাজ্যগুলোতে তথাকথিত অবৈধ বাঙালি অভিবাসীদের বিষয়টিকে রাজনীতিতে এবং নিরাপত্তা ভাবনায় টেনে নিয়ে আসা। এটি রাজনৈতিক কারণে হলেও বাঙালি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিজেপির শীর্ষ রাজনীতিবিদদের বক্তব্য এক ধরনের উৎকণ্ঠার জন্ম দেয়। আসামের মতো অন্যান্য রাজ্যে এনআরসি কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অতীতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে এ বিষয়টি যখনই সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে, তখনই দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা ও মতপার্থক্য বৃদ্ধি পেয়েছে। নরেন্দ্র মোদি তার দ্বিতীয় মেয়াদে এ ধরনের অগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়টি সঠিকভাবে মোকাবেলা করবেন, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, মোদি তার প্রথম শাসনামলে দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে ও বাইরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি বাস্তববাদী নীতি অবলম্বন করেছেন। যে কারণে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অনেক মতাদর্শিক, স্পর্শকাতর ও নেতিবাচক প্রবণতা পররাষ্ট্রনীতির ওপরে তেমন প্রভাব রাখেনি, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই বিষয়টি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ভবিষ্যতেও কাজ করবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যাপক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

ড. দেলোয়ার হোসেন

অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়