স্টাফ রিপোর্টার॥
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ কালিরবাজার কলেজে হাফিজ আল মামুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে থেকেই ‘অধ্যক্ষ’ পদে গোপনে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার (২১ জুন) অধ্যক্ষ পদে প্রার্থীসহ সকলের অগোচরে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন বলে জানাগেছে। এই কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালে দুইবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। চাঁদপুরের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক চাঁদপুরজিমন”-এ পুন: বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ হয় ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার।
খোঁজ নিয়ে ও বিশ^স্থ সূত্রে জানাগেছে, দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় ২০১৯ সালের মার্চ মাসের ২৩ অথবা ২৪ তারিখে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তিটি জনসম্মুখে আসেনি। কারণ ওই বিজ্ঞপ্তির পত্রিকা লুকিয়ে রাখা হয়। আর এই কারণে অধ্যক্ষ পদে প্রার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন থেকে বঞ্চিত হয়।
গত রোববার (২৩ জুন) কলেজে গিয়ে দেখা যায় কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র করনিকের কক্ষ খোলা রয়েছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও একমাত্র এই কলেজটিই কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সিদ্ধান্তে বন্ধছিলো।
স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতার সাথে দেখা হলে তিনি জানান, তার এক আত্মীয় এইচএসসি ভর্তি ইচ্ছুককে নিয়ে ভর্তি করানোর জন্য এসেছেন। কিন্তু বিনা নোটিশে কলেজ বন্ধ থাকায় তিনি ভর্তি পক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি। পরে ওই ব্যাক্তি কলেজের ভর্তি কার্যক্রমে দায়িত্বরত এক শিক্ষকের বাড়িতে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, ২১ জুন ঢাকা খিলগাঁও গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষা ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। নিয়োগ নামে নাটক সাজিয়ে ৬জন প্রার্থী অংশ গ্রহন করেন। এর মধ্যে ৪জন প্রার্থী সাজানো পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেনও পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। তবে পরীক্ষার পুরো আনুষ্ঠানিকতাই ছিলো পূর্বপরিকল্পিত।
শিক্ষকরা জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জাতীয় বহুল প্রচারিত পত্রিকায় প্রকাশ না হয়ে নাম জানেন না এমন ধরনের পত্রিকায় প্রকাশ হয়। এই কারণে প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
অপরদিকে কলেজের শিক্ষকসহ সকলেই জানেন হাফিজ আল মামুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। কিন্তু তিনি নিজের অনুসারী একজনকে গোপনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। পরে এই বিষয়ে কলেজে আলোচনা ও সমালোচনা হলে জানতে পারেন এস.এম.এনায়েত নামে একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেয়া হয়েছিলো। কলেজে হাফিজ আল-মামুন এর চাইতে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ শিক্ষক থাকলেও অন্য শিক্ষকদের মধ্যে বর্তমানে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শিক্ষকরা জানান, মঙ্গলবার (২৫ জুন) হাফিজ আল মামুন অধ্যক্ষ পদ পেয়ে কলেজে আসেন। কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিট কলেজে উপস্থিত থেকে জরুরি কাজ আছে বলে চলে যান। মূলত তিনি তার এমপিও পাকাপোক্ত করণের কাজেই এখন বেশী ব্যস্ত।
কলেজের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক স্বপন জানান, আমরা অধ্যক্ষ নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর জেনেছি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকেই অধ্যক্ষ নেয়া হবে এমন প্রস্তুতি গভর্নিং বডির পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা থাকার কারণে এই পদ্ধতি গ্রহন করেছেন। আমি ট্রেনিং থাকার কারণে বিষয়টি শিক্ষক প্রতিনিধি সালেহা বেগমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও বলেন আমি কিছুই জানিনা। অধ্যক্ষ পদে যারা আবেদন করেছেন অনেককেই কার্ড ইস্যু করা হয়নি।
অর্থনীতি বিষয়ের শিক্ষক প্রবীর বলেন, এই বিষয়ে গভর্নিং বডিই সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা শিক্ষক থাকলেও জানিন না। এমন কিছু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে, যে সব পত্রিকা বহুল প্রচারিত না। এই কারণে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অনেকেই জানতে পারেনি।
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ হাফিজ আল-মামুন এর বক্তব্যের জন্য তার কক্ষে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যাক্তিগত দু’টি মোবাইল ফোনে বার বার চেষ্টা করে সংযোগ পাওয়া যায়নি, বন্ধ পাওয়া যায়।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তসলিম উদ্দিন এই বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে জানান, কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে হয়েছে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অসুস্থ্য থাকার কারণে আমাদের সম্মতিতে খিলগাঁও গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে চাঁদপুর মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিনিও এইসব বিষয়ে জানেন।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপনে ছাপানো হয়েছে এই বিষয়ে সভাপতি বলেন, সরকার নিয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন করায় এটি একাধিকবার ছাপানো হয়েছে। এর মধ্যে পদ্ধতিগত ভাবে অনেকের আবেদন গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। গোপনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরেকজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন এই বিষয়ে সভাপতি বলেন, এই বিষয় কি মাইকিং করে বলতে হয় নাকি?
তিনি আরো বলেন, আমাদের কলেজটি উপজেলার মধ্যে ভাল ফলাফল করে। কিন্তু আমাদের চাইতে ভাল করে গৃদকালিন্দিয়া কলেজ। তাদের ফলাফল কেন ভাল সেটা আপনারাও জানেন।
নিয়োগ পরীক্ষায় সরকারের প্রতিনিধি চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ (বর্তমানে অধ্যক্ষ) মাসুদুর রহমান বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার দুইদিন আগেও আমি এই বিষয়ে কিছুই জানিনা। কারণ প্রতিনিধি ছিলেন আমাদের অধ্যক্ষ। তিনি বদলী হয়ে যাওয়ার কারণে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া কোন কোন পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে এইসব বিষয়েও আমার জানা নেই।