• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ২৬ আগস্ট, ২০১৯

ডিসি অফিসের পিয়নের চাকুরী পেয়েই বদলে যায় সাধনার জীবন

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

অনলাইন ডেস্ক:

জামালপুর জেলা প্রশাসকের অফিসে দোর্দন্ড প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াতেন অফিস সহকারী (পিয়ন) সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। তার প্রভাব এতটাই ছিলো, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকতেন সবসময় তটস্থ। শুধু কর্মচারীরাই নন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও কোনও পাত্তাই দিতেন না এই ক্ষমতাধর অফিস সহকারী। চাকরি হারানোর শঙ্কায় প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না কেউ।

সম্প্রতি যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশের পর ওএসডি করা হয় ডিসি আহমেদ কবীরকে। তারপরে থেকেই ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বের হয়ে আসছে একের পর আহমেদ কবীর-সাধনার নানা কীর্তি-কাহিনী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্দ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সাথে দেখা করেন সাধনা। সে সময় সাধনার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন ডিসি আহমেদ কবীর। পরে উন্নয়ন মেলা চলাকালে আহমেদ কবীরের সঙ্গে সখ্য আরও গভীর হয়। একপর্যায়ে সে সখ্য রূপ নেয় শারীরিক সম্পর্কে। সম্প্রতি সেই অবৈধ সম্পর্কের একটি ভিডিওচিত্র ভাইরাল হয়। তারপর থেকে ‘টক অব দি কান্ট্রি’তে পরিণত হন তারা।

জানা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারিতে ডিসি অফিসে ২৭ জনকে অফিস সহায়ক (পিয়ন) পদসহ ৫৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই সম্পকের্র সূত্র ধরে ডিসি অফিসে পিয়ন (অফিস সহকারী) পদে নিয়োগ পান সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। সেই সঙ্গে তার দুই আত্মীয় রজব আলী ও সাবান আলীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেন।

অফিস সহায়ক বা সহকারী পদে সাধনা যোগদান করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষের পাশে ‘খাসকামরা’ হয়ে ওঠে মিনি বেডরুম। যেখানে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে সাজ-সজ্জা করা হয়। সে রুমেই চলত আহমেদ কবীর-সাধনার রঙ্গলীলা। অফিস চলাকালে তাদের রঙ্গলীলা অবাধ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে সেই কামরার দরজায় বসানো হয় লাল ও সবুজ বাতি। রঙ্গলীলা চলাকালে ‘লালবাতি’ জ্বলে উঠত। সে সময় দরজার সামনে পাহারায় থাকতেন তাদেরই বিশ্বস্ত কোনও অফিস সহকারী। লালবাতি জ্বলাকালীন সাক্ষাৎপ্রার্থী তো দূরের কথা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। এ সময় তার অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাক্ষাৎপ্রার্থীরা। লীলা শেষ করে পরিপাটি হয়ে যখন চেয়ারে বসতেন, তখন জ্বলে উঠত সবুজ বাতি। ‘সবুজ বাতি’ জ্বলে ওঠার পরই শুরু হতো তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম।

ডিসি অফিসে গুঞ্জন রয়েছে,অবৈধ রঙ্গলীলার সুবাদে আর আহমেদ কবীরের আশকারা পেয়ে ‘ছায়াডিসি’ হয়ে গিয়েছিলেন সাধনা। ডিসির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন দফতরে বদলি, নিয়োগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। সামান্য ওই অফিস সহকারীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত কাজে স্বার্থসিদ্ধি হাসিলের জন্য সবার আগে সাধনাকে ম্যানেজ করতেন সুবিধাভোগীরা। তাকে সামনে রেখে কাজ আদায় করা হতো। এ কারণে সবার মাঝেই ‘ছায়াডিসি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন সাধনা।

সাধনার জন্ম জামালপুর শহরের পাথালিয়া গ্রামে। মা ফেলানী বেগম। বাবা অহিজুদ্দিন। বাবার পেশা ছিলো ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা-নেয়ার। সাধনার জন্মের সময় অহিজুদ্দিনের ঘরে দেখা দেয় অভাব। সাধনার বয়স যখন ৭ দিন, তখন অভাবের তাড়নায় তাকে দত্তক দেন মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের সুখনগরী গ্রামের নিঃসন্তান খাজু মিয়া ও নাছিমা আক্তার দম্পতির কাছে। তাদের লালন-পালনে বেড়ে ওঠা সাধনার লেখাপড়া চলাকালেই বিয়ে হয় একই উপজেলার জোনাইল গ্রামের বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারী জাহিদুল ইসলামের সাথে। তাদের ঘরে পূর্ণ নামের এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।

২০০৯ সালে মারা যান সাধনার স্বামী। স্বামীর মৃত্যুর পর তার পালক পিতামাতার সাথে জামালপুর শহরের বগাবাইদ গ্রামে বসবাস শুরু করেন। পরে টাঙ্গাইলের এক পুলিশ কনস্টেবলের সাথে পালিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। সাধনার উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন ও অবাধ চাল-চলনের কারণে টেকেনি দ্বিতীয় বিয়েটিও। দ্বিতীয় বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর তিনি নিজ ঘরেই দোকান দিয়ে বিক্রি করতেন দেশি-বিদেশি প্রসাধনী। সেই ব্যবসাতেও টিকতে না পেরে শুরু করেন হস্তশিল্পের ব্যবসা। ২০১৮ সালের উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্দ নিয়েই ডিসি আহমেদ কবীরের সাথে গড়ে সম্পর্ক। আর সেখান থেকে ধীরে ধীরে রূপ নেয় আহমেদ কবীর-সাধনার রঙ্গলীলা।

আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হবার পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন সাধনা। রোববার অফিস খোলার পরও অফিসে আসেনি তিনি। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সাহা বলেন, তিনি অফিসে অনুপস্থিত। কোনো ছুটির আবেদন করেননি।
শহরের শেখেরভিটায় তার ভাড়াটিয়া বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়ির মালিক বলেন, সুখনগরীতে একবার নদী ভাঙার পর তারা বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থাকতো। পরে একটা বাড়িও করেছে। প্রায় তিন বছর ধরে মা-বাব এবং ছেলেকে নিয়ে আমার বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি। আমি যতদূর জানি, এক বছর আগে ডিসি অফিসের পিয়ন পদে তার চাকরি হয়েছে। আমি তাকে সবসময় ভালো হিসেবেই দেখেছি। কখনো তার খারাপ কিছু আমার চোখে পড়েনি।

সাধনার গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার সুখনগরী গ্রামে গিয়েও তার খোঁজ মেলেনি। তার পরিবারের লোকজন জানান, তিনি তার খালার বাড়িতে আছেন। তার মনের অবস্থা ভালো নেই।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

error: Content is protected !!