গর্ভাবস্থায় যেভাবে সুস্থ থাকবেন

  • আপডেট: ০৬:৪৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৯
  • ৪৭

অনলাইন ডেস্ক:

কথায় বলে ‘শিশুর হাসিতে মায়ের খুশি’। আর এই হাসি দেখতে হলে মাকে গর্ভকাল থেকেই থাকতে হবে হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত। গর্ভবতী মায়ের নিজের প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর জন্য বাড়তি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এসম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন এ্যাপোলো হাসপাতালের পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।

তিনি বলেন, গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ভাত, মাছ (মলা, ঢেলা ইত্যাদি ছোট মাছ), সম্ভব হলে মাংস, ডিম, দুধ এবং ঘন ডাল, সিমের বিচি প্রভৃতি খেতে হবে। এছাড়া গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের শাকসবজি ও তাজা ফলমূল, বিশেষত পাকা আম, পেঁপে, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনারস, কচুশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, লালশাক, গাজর, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া এসব ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। কারণ ভিটামিন ‘এ’ শরীরে আয়রন (লৌহ) ব্যবহারে সাহায্য করে। আমলকি, পেয়ারা, বাতাবিলেবু, কামরাঙা, পাতি লেবু, কাগজী লেবু, কুল ইত্যাদি খেলে সহজেই ভিটামিন ‘সি’-র অভাব পূরণ হবে। শরীরে আয়রন (লৌহ) শোষিত হওয়ার জন্য ভিটামিন ‘সি’ অত্যন্ত জরুরি। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্যালসিয়ামও গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যালসিয়ামের অভাবে উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুধ, ঘি, মাখন, ডিমের কুসুম, ছোট মাছ (কাঁটাসহ) কলিজা, ডাল, মাংস এবং সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল ইত্যাদিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। কোনো কারণে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করা সম্ভব না হলেও বাড়িতে তৈরি স্বাভাবিক খাবার যেমন- একটু বেশি ভাত, বেশি পরিমাণ ঘন ডাল, তরকারি এবং পর্যাপ্ত ফলমূল খেলে এই প্রয়োজন মিটবে।

গর্ভাবস্থায় মাকে লৌহসমৃদ্ধ খাবার (যেমন- মাংস, ডিম, কলিজা, ডাল, কাঁচাকলা, কচুশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক) এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি ও টাটকা ফলমূল প্রতিদিন বেশি করে খেতে হবে। গর্ভবতী মায়ের খাদ্যে আয়োডিনযুক্ত লবণ এবং সামুদ্রিক মাছ ও সামুদ্রিক মাছের তেল থাকা উচিত।

প্রচুর শাকসবজি ও তাজা ফলমূল খেলেও আয়োডিনের অভাব পূরণ করা যায়। গর্ভকালীন সময়ে দৈনিক ১৫-২০ গ্লাস বিশুদ্ধ ও আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি পান করা উচিত। এসময় মায়েদের বারে বারে খেতে হয়।

প্রতিদিন ১০ঘণ্টা ঘুমাতে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে গর্ভবতী মাকে।
রক্তপাত, মাথা ব্যথা / চোখে ঝাপসা দেখা, দীর্ঘ সময় পেটের শিশু নড়াচড়া না করা, জ্বর, পা ফুলে যাওয়া এর যে কোনো একটা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
সম্ভব হলে গর্ভের প্রথম তিন মাস যে কোনো ধরনের লম্বা ভ্রমণ এড়িয়ে চলা উচিত। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে যৌন মিলনও না করাই উত্তম। গর্ভের শেষ ৬ সপ্তাহ ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।

নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ও ঢিলে ঢালা আরাম দায়ক পোশাক পরতে হবে।

গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, হসপিটাল, একটি গাড়ি, পর্যাপ্ত টাকা এবং একজন ব্লাড ডোনার আগে থেকেই রেডি রাখতে হবে। যেন যে কোনো সময় সাহায্যগুলো পাওয়া যায়।

একটি শিশুর সঙ্গে সঙ্গে জন্ম হয় একজন মায়েরও। একজন বাবাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন অনাগত সন্তানের জন্য। দুজনের ভালোবাসায় যে শিশু আসছে তার জন্য হবু বাবারও দায়িত্ব হচ্ছে, প্রতিটি মুহূর্ত গর্ভবতী স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা তাকেই নিতে হবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

যে কারণে পুরুষে ৪টি বিয়ের পক্ষে হীরা সুমরো

গর্ভাবস্থায় যেভাবে সুস্থ থাকবেন

আপডেট: ০৬:৪৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

কথায় বলে ‘শিশুর হাসিতে মায়ের খুশি’। আর এই হাসি দেখতে হলে মাকে গর্ভকাল থেকেই থাকতে হবে হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত। গর্ভবতী মায়ের নিজের প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর জন্য বাড়তি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এসম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন এ্যাপোলো হাসপাতালের পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।

তিনি বলেন, গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ভাত, মাছ (মলা, ঢেলা ইত্যাদি ছোট মাছ), সম্ভব হলে মাংস, ডিম, দুধ এবং ঘন ডাল, সিমের বিচি প্রভৃতি খেতে হবে। এছাড়া গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের শাকসবজি ও তাজা ফলমূল, বিশেষত পাকা আম, পেঁপে, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনারস, কচুশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, লালশাক, গাজর, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া এসব ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। কারণ ভিটামিন ‘এ’ শরীরে আয়রন (লৌহ) ব্যবহারে সাহায্য করে। আমলকি, পেয়ারা, বাতাবিলেবু, কামরাঙা, পাতি লেবু, কাগজী লেবু, কুল ইত্যাদি খেলে সহজেই ভিটামিন ‘সি’-র অভাব পূরণ হবে। শরীরে আয়রন (লৌহ) শোষিত হওয়ার জন্য ভিটামিন ‘সি’ অত্যন্ত জরুরি। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্যালসিয়ামও গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যালসিয়ামের অভাবে উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুধ, ঘি, মাখন, ডিমের কুসুম, ছোট মাছ (কাঁটাসহ) কলিজা, ডাল, মাংস এবং সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল ইত্যাদিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। কোনো কারণে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করা সম্ভব না হলেও বাড়িতে তৈরি স্বাভাবিক খাবার যেমন- একটু বেশি ভাত, বেশি পরিমাণ ঘন ডাল, তরকারি এবং পর্যাপ্ত ফলমূল খেলে এই প্রয়োজন মিটবে।

গর্ভাবস্থায় মাকে লৌহসমৃদ্ধ খাবার (যেমন- মাংস, ডিম, কলিজা, ডাল, কাঁচাকলা, কচুশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক) এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি ও টাটকা ফলমূল প্রতিদিন বেশি করে খেতে হবে। গর্ভবতী মায়ের খাদ্যে আয়োডিনযুক্ত লবণ এবং সামুদ্রিক মাছ ও সামুদ্রিক মাছের তেল থাকা উচিত।

প্রচুর শাকসবজি ও তাজা ফলমূল খেলেও আয়োডিনের অভাব পূরণ করা যায়। গর্ভকালীন সময়ে দৈনিক ১৫-২০ গ্লাস বিশুদ্ধ ও আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি পান করা উচিত। এসময় মায়েদের বারে বারে খেতে হয়।

প্রতিদিন ১০ঘণ্টা ঘুমাতে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে গর্ভবতী মাকে।
রক্তপাত, মাথা ব্যথা / চোখে ঝাপসা দেখা, দীর্ঘ সময় পেটের শিশু নড়াচড়া না করা, জ্বর, পা ফুলে যাওয়া এর যে কোনো একটা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
সম্ভব হলে গর্ভের প্রথম তিন মাস যে কোনো ধরনের লম্বা ভ্রমণ এড়িয়ে চলা উচিত। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে যৌন মিলনও না করাই উত্তম। গর্ভের শেষ ৬ সপ্তাহ ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।

নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ও ঢিলে ঢালা আরাম দায়ক পোশাক পরতে হবে।

গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, হসপিটাল, একটি গাড়ি, পর্যাপ্ত টাকা এবং একজন ব্লাড ডোনার আগে থেকেই রেডি রাখতে হবে। যেন যে কোনো সময় সাহায্যগুলো পাওয়া যায়।

একটি শিশুর সঙ্গে সঙ্গে জন্ম হয় একজন মায়েরও। একজন বাবাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন অনাগত সন্তানের জন্য। দুজনের ভালোবাসায় যে শিশু আসছে তার জন্য হবু বাবারও দায়িত্ব হচ্ছে, প্রতিটি মুহূর্ত গর্ভবতী স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা তাকেই নিতে হবে।