আবু মুছা আল শিহাবঃ
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে চাচাত ভাইয়ের ছুরির আঘাতে অপর চাচাত ভাই নিহত হয়েছে। ঘটনাটি উপজেলার সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের চেড়িয়ারা দেওয়ান বাড়িতে ঘটে।
বাড়িওয়ালাদের সূত্রে জানা যায়, গত ৩ জুন সোমবার সন্ধ্যায় ওই বাড়ির মৃত শহিদুল্লার পুত্র ছালে আহম্মদ ও তার স্ত্রীকে মারধর করে তাদের পুত্র নাঈম (১৮)। তাদেরকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে ছালে আহম্মদের ভাই কবির হোসেন ও তার স্ত্রীসহ বাড়ির লোকজন। নাঈমের এমন উগ্রতা দেখে তারা নাঈমকে বেঁধে রাখে। এক সময় কে বা কারা নাঈমকে ছেড়ে দেয়। ক্ষিপ্ত নাঈম ওই রাতেই ছুটে গিয়ে তারই চাচাত ভাই কবির হোসেনের ছেলে নুর হোসেন (২৫) কে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে শাহরাস্তি সরকারী হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেও তার অবস্থা বেগতিক দেখে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ওখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জুন বুধবার দিবাগত শেষ রাতে তার মৃত্যু হয়। নিজ এলাকায় তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ আর শোকের মিশ্রিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে তৃতীয় একটি পক্ষ এই মৃত্যুকে নানান দিকে প্রবাহিত করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই নৃশংস হত্যার ঘটনায় এলাকায় নিরব ক্ষোভে নারী পুরুষের মুখে হতাশার ছাপ বিরাজ করছে। উৎসুক মানুষগুলোর ভীড় আর তাদের চোখের পানি ঘটনার সত্যতা প্রকাশে সহায়তা করছে। এসময় ঘাতক নাঈমের পিতা ছালে আহাম্মদ ও তার স্ত্রী পলাতক ছিলো।
এবিষয়ে ওই এলাকার নির্ভরযোগ্য এক ব্যক্তি বলেন, নুর হোসেনের মৃত্যু ছুরিকাঘাতে হয়নি। তিনি অটোরিকশা এক্সিডেন্ট করে মৃত্যু বরণ করেছেন।
দলীয় এক নেতা মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি স্থানিয় সংসদসদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমকে জানানো হয়েছে এবং আমরা থানা ম্যানেজ করেছি। কোন সমস্যা হবে না। ছেলেটি পাগল ছিলো।
নিহত নুর হোসেনের জেঠা দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, যে হত্যা করেছে সে আমার ভাতিজা আর যে নিহত হয়েছে সেও ভাতিজা। তবে ঘাতক নাঈম মাদকাসক্ত ও পাগল ছিলো। থানা পুলিশের কাছে পাগলের সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমার ভাই ছালে আহম্মদ ও তার স্ত্রীকে মাদকের টাকার জন্য মারধর করে তাদের পুত্র নাঈম (১৮)। ঘটনার দিন তাদেরকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে আমার আরেক ভাই কবির হোসেন ও তার স্ত্রীসহ বাড়ির লোকজন। নাঈমের এমন উগ্রতা দেখে তারা নাঈমকে বেঁধে রাখে। এক সময় কে বা কারা নাঈমকে ছেড়ে দেয়। ওইদিন রাত ১১টায় নুর হোসেন তাদের ঘরের সামনে বসা ছিলো। নাঈম ক্ষিপ্ত হয়ে ছুটে গিয়ে নুর হোসেনকে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে। পরে আমরা তাকে স্থানিয় হাসপাতালে নিয়ে যাই আর ঘাতক নাঈম তখন পালিয়ে যায়।
ওই বাড়ির লোকজন বলেছেন, ঘাতক নাঈম মৃগী রোগি ছিলো। বছরে ৪/৫ বার এই রোগটি দেখা দিতো। এতে সে খুব অসুস্থ হতো। তবে সে মাদকাসক্ত থাকায় উশৃঙ্খল ছিলো। বাড়ির কাউকে মানতো না এমনকি তার বাবা মাকেও মারধর করতো।
এলাকাবাসী ও তার বন্ধুমহল বলেন, ঘাতক নাঈমের ছুরিকাঘাতে নিহত নুর হোসেন ছোট বেলা তার মাকে হারায়। সে অনেক পরিশ্রমী ও ভদ্র ছিলো। পিতার সংসারকে আগলে ধরে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। তার এমন মৃত্যুতে কবির হোসেনের পরিবার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মূখিন হয়েছে। তারা এমন নৃশংস হত্যার এবং হত্যাকারীর সুষ্ঠু বিচার কামনা করেন।
এঘটনায় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার এসআই মহসীন আলম ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করেছি। তদন্তের স্বার্থে গোপনীয়তা বজায় রেখেছেন বলে তিনি জানান।
এবিষয়ে শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, এটি একটি হত্যাকান্ড। ঘাতক যেই হোক অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এই রিপোর্ট লেখাকালীন সময়ে নুর হোসেনের লাশ শাহবাগ থানার অধিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ওখানে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ নিজ বাড়িতে আনা হবে বলে জানা যায়।