মতলব উত্তরে সরিষার বাম্পার ফলন

  • আপডেট: ০৫:১৪:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ২৯

নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কুয়াশা ও শীত থাকলেও এ অঞ্চলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এতে করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মাটির উর্বরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমিতে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণুও।

উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোজ্যতেলের চাহিদাপূরণ ও ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে সরকার তেলজাতীয় ফসলের বৃদ্ধির জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গত বছরের ফেব্রæয়ারি মাস থেকে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তে কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করে অধিক ফসল উৎপাদন করতে হবে। বিশেষ করে সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, সয়াবিন উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষকের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন করাও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।

তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় মতলব উত্তর উপজেলার প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করা হয়েছে। ফলন বাড়াতে কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতাভুক্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান তোলার পর অনেক জমি পরবর্তী বোরো ধান বপনের আগ পর্যন্ত অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকত। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।

তারা জানান, সরিষা তোলার পর অনায়াসে বোরো বপন করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর রোগ-বালাই দমনেও তা কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

মতলব উত্তর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, আমি কৃষি বিভাগের কথামতো ৫০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। আগে তো জমিগুলো আমন আবাদের পর খালি পরি থাইকতো। এখন আবাদ করেছি। ফলন ভালো হইছে। বাজারে সরিষার দামও ভালো।

কৃষ্ণপুর এলাকার কবির হোসেন বলেন, আমি বারি সরিষা-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। নিজের আবাদ করা সরিষার তেল খেতে পারব, পাশপাশি অতিরিক্ত সরিষা বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকাও পাওয়া যাবে।

মধ্য ইসলামাবাদ গ্রামের কৃষক মাসুদ মিযাজী বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবার এক একর বিঘা জমিতে সরিষা লাগিয়েছি সরিষার ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে সরিষার দামও খুব ভালো।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. পাভেল খান পাপ্পু বলেন, এ অঞ্চলে আমন আবাদের পর বোরো লাগানোর আগপর্যন্ত জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলের জমিগুলোকে চাষের আওতায় এনে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে তেলের ঘাটতি পূরণ ও বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, সরিষা জমির জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী ফসল। সরিষা মাটি থেকে ধানের নিচের লেভেলের খাদ্য গ্রহণ করে। সরিষার আবাদের ফলে জমিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়। ধান কাটার পর ধানগাছের পড়ে থাকা গুঁড়িতে অনেক রকম রোগজীবাণু বাসা বাঁধে, যা পরবর্তী ফসলের ক্ষতি করে কিন্তু সরিষার আবাদের ফলে জমিতে থাকা রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

চাঁদপুরে ৪’শ নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

মতলব উত্তরে সরিষার বাম্পার ফলন

আপডেট: ০৫:১৪:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কুয়াশা ও শীত থাকলেও এ অঞ্চলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এতে করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মাটির উর্বরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমিতে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণুও।

উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোজ্যতেলের চাহিদাপূরণ ও ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে সরকার তেলজাতীয় ফসলের বৃদ্ধির জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গত বছরের ফেব্রæয়ারি মাস থেকে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তে কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করে অধিক ফসল উৎপাদন করতে হবে। বিশেষ করে সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, সয়াবিন উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষকের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন করাও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।

তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় মতলব উত্তর উপজেলার প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করা হয়েছে। ফলন বাড়াতে কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতাভুক্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান তোলার পর অনেক জমি পরবর্তী বোরো ধান বপনের আগ পর্যন্ত অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকত। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।

তারা জানান, সরিষা তোলার পর অনায়াসে বোরো বপন করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর রোগ-বালাই দমনেও তা কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

মতলব উত্তর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, আমি কৃষি বিভাগের কথামতো ৫০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। আগে তো জমিগুলো আমন আবাদের পর খালি পরি থাইকতো। এখন আবাদ করেছি। ফলন ভালো হইছে। বাজারে সরিষার দামও ভালো।

কৃষ্ণপুর এলাকার কবির হোসেন বলেন, আমি বারি সরিষা-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। নিজের আবাদ করা সরিষার তেল খেতে পারব, পাশপাশি অতিরিক্ত সরিষা বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকাও পাওয়া যাবে।

মধ্য ইসলামাবাদ গ্রামের কৃষক মাসুদ মিযাজী বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবার এক একর বিঘা জমিতে সরিষা লাগিয়েছি সরিষার ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে সরিষার দামও খুব ভালো।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. পাভেল খান পাপ্পু বলেন, এ অঞ্চলে আমন আবাদের পর বোরো লাগানোর আগপর্যন্ত জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলের জমিগুলোকে চাষের আওতায় এনে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে তেলের ঘাটতি পূরণ ও বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, সরিষা জমির জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী ফসল। সরিষা মাটি থেকে ধানের নিচের লেভেলের খাদ্য গ্রহণ করে। সরিষার আবাদের ফলে জমিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়। ধান কাটার পর ধানগাছের পড়ে থাকা গুঁড়িতে অনেক রকম রোগজীবাণু বাসা বাঁধে, যা পরবর্তী ফসলের ক্ষতি করে কিন্তু সরিষার আবাদের ফলে জমিতে থাকা রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।