• ঢাকা
  • সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর, ২০২১
সর্বশেষ আপডেট : ১১ ডিসেম্বর, ২০২১

ডা. মুরাদ তাহলে কি দেশে ফিরে আসছেন?

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]
ডা. মুরাদ ফাইল ছবি।

সদ্য পদত্যাগী তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কোথায় আছেন তা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। নারীর প্রতি অশোভন মন্তব্যসহ নানামুখী বির্তকে জড়িয়ে পড়া ডা. মুরাদ গত ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে দেশত্যাগ করেন। এরপর কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলেও তাকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো সূত্রে ডা. মুরাদের অবস্থানের কথা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

করোনাকালীন চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র না দেখাতে পারায় তাকে কানাডার টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠিয়েছে কানাডার বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স। দেশটির স্থানীয় বাংলা অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, কানাডায় বসবাসরত তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তবে কানাডার সরকারি সূত্র থেকে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কানাডা বর্ডার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।

জানা যায়, মুরাদ হাসান আমিরাতের একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পরে তাকে মধ্যপ্রচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়।

মুরাদ হাসানের কানাডা সফর নিয়ে সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি এদেশে এসেছেন কিনা- ঢুকতে পেরেছেন কিনা কিংবা ঢুকতে পারলে কোথায় আছেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি বলেন, মুরাদ হাসানের কানাডা সফর সম্পর্কে বিভিন্ন খবর আমরা পত্রিকায় দেখেছি। একটি পত্রিকা বলছে, তাকে ইমিগ্রেশনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আবার আরেকটি পত্রিকা বলছে তিনি মন্ট্রিলে আছেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সরকার তার সফর সম্পর্কে দূতাবাসকে কিছু জানায়নি। এর আগে তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কানাডা সফরকালে আমাদের অবহিত করা হয়েছিল। মুরাদ হাসান এখন সংসদ সদস্য। অনেক সময় সংসদ সদস্যরা কানাডা সফর করলে আমাদের জানান বিভিন্ন ধরনের প্রটোকল সুবিধার জন্য। কিন্তু মুরাদ হাসান তার সফর সম্পর্কে আমাদের কিছু জানাননি।

কানাডার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি উল্লে­খ করে খলিলুর রহমান বলেন, কানাডার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ আছে। কানাডায় বাংলাদেশি কেউ বিপদে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।

এ বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডীয় হাইকমিশনার বেনোই প্রেফনটেইন বলেন, এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে করোনাকালীন ভ্রমণের বিষয়ে বেশকিছু বিধিনিষেধ আছে, যা দেশটিতে ভ্যালিড (বৈধ) ভিসা থাকা সব ভ্রমণকারীর জন্য প্রযোজ্য। তবে কোনো ব্যক্তির ভিসা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশটির ইমিগ্রেশন ও বর্ডার এজেন্সি।

এদিকে কানাডায় প্রবেশ করতে না পেরে ডা. মুরাদ হাসান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।যদিও তথ্যটির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।

ওই সূত্র বলছে, ডা. মুরাদ বর্তমানে দুবাইতেই থেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন যদি দেশটির ইমিগ্রেশন তাকে প্রবেশে সুযোগ দেয়, তাহলে তিনি সেখানেই আপাতত অবস্থান নেবেন। আর যদি প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি শেষমেশ দেশেই ফিরে আসতে পারেন বলে ধারণা সূত্রটির।

ডা. মুরাদ প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জাহিদ নাঈম তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকতেন। শনিবার একাধিকবার ফোন দিলেও তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে। এর বাইরে মুরাদের ঘনিষ্ট আরও দুইজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা নিশ্চিত কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।

আসলে মুরাদ হাসানের বিষয়টি এখন পুরোপুরিই ধুঁয়াশার মধ্যে রয়েছে।তার বিষয়টি পরিষ্কার হতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।এখন দেখার বিষয় ড. মুরাদকে শেষমেশ দেশেই ফিরতে হয় কিনা?

সম্প্রতি এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদের অশালীন ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এই সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে ওইদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একইদিনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।এ ছাড়া মুরাদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়েও দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে ডা. মুরাদ হাসান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে এমিরেটসের ফ্লাইটে যাওয়ার কথা থাকলেও ফ্লাইটটি ছেড়ে যায় রাত ১টার দিকে। দুবাই হয়ে কানাডার পথে রওনা দেন তিনি। সংসদ সদস্য হিসেবে মুরাদ কূটনৈতিক পাসপোর্টের অধিকারী। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভিসা আবেদন করার পরে গত সেপ্টেম্বরে তিনি ব্যক্তিগত সফরে কানাডায় গিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

error: Content is protected !!