মতলব উত্তর প্রতিনিধি:
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী শারমিন আক্তার কাকুলীকে হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করে শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। গত ২২ এপ্রিল রাতে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাকে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে জবানবান্দি দেয় আসামী সাইফ উদ্দিন (১৫)। সে একই উপজেলার সুজাতপুর গ্রামের রাসেল মিয়ার ছেলে।
আসামীর জবানবন্দির সূত্র ধরে ওসি মো. নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, প্রথমে কাকুলীকে সাইফ উদ্দিন ও তার বন্ধু মিলে ধর্ষন করে। পরে হত্যা এবং তারপরে হত্যা নিশ্চিত করতে মাথা কেটে আলাদা করে খালে ফেলে দেয়। ওসি বলেন, স্কুলছাত্রী শারমিন আক্তার কাকুলীর গ্রামেই আসামী সাইফ উদ্দিন তার নানার বাড়ি থাকতো। সেই সুবাদে ৬ মাস আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ক চলাকালীন আবার রংপুর থেকে আসা এক রাজমিস্ত্রী ছেলের (আইনগত ভাবে নিষেধ থাকায় তার নাম প্রকাশ করা গেল না) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কাকুলীর। বিষয়টি সাইফ উদ্দিন টের পেয়ে যায়। তারপর ওই রাজমিস্ত্রির সাথে যোগাযোগ করে বন্ধুত্ব পেতে কাকুলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে দুই বন্ধু।
আরো পড়ুন; ত্রিভূজ প্রেমের কারণে ২ বন্ধু মিলে গলা কেটে হত্যা করে কাকলীকে
গত ২৮ মার্চ সকালে তাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে সুজাতপুর বাজারে ডেকে আনে। বাজারে ও আশপাশে কিছু সময় ঘুরাফেরা করে সময় পার করে তারা। দুপুরে তাকে নির্জন জায়গায় অক্সফোর্ড কিন্ডার গার্টেনে নিয়ে যায় তারা। সেখানে প্রথমে দুই বন্ধু পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বিকালে তাকে দুই বন্ধু মিলে গলা টিপে হত্যা করে। পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে ও তার মৃতদেহ যাতে কেউ না চিনতে পারে সেজন্য পূর্বের সংগৃহীত ছুরি দিয়ে মাথা কেটে আলাদা করে ফেলে। সন্ধার পর এলাকা জনশূণ্য হলে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ ফুট দুরে একটি পরিত্যাক্ত খালে পলিথিনে ভরে মাথাটি ফেলে দেয় তারা।
ওসি নাসির উদ্দিন আরও বলেন, চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানের দিন নির্দেশনায় ও সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) আহসান হাবিবের সহযোগীতায় আসামী গ্রেফতারের পর জবানবন্দি অনুযায়ী আমরা খাল থেকে কাকুলীর মাথা উদ্ধার করি এবং ২৩ এপ্রিল রাতে পাশেই আরেকটি জায়গা থেকে ধারালো ছুরিটি উদ্ধার করি। এ ঘটনায় সাইফ উদ্দিনের বন্ধু রাজমিস্ত্রি জড়িত আছে। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও মৃতুদেহ উদ্ধারের পর আমরা কাকুলী ও সাইফ উদ্দিনের বাড়িতে তল্লাশি করি। দুই জনের বাড়িতেই দুই জনের হাতের লেখা কিছু চিঠি পাওয়া গেছে।
আরো পড়ুন; মতলব উত্তরে খুন হওয়া স্কুলছাত্রীর মস্তক উদ্ধার, আটক ১
এদিকে নিহত কাকুলীর মা রোকেয়া বেগম ঘটনার লোম হর্ষক বিবরণ শুণে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, এমন মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারছি না। আমার কলিজার টুকরো মেয়েকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ কাকুলী বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় এবং ২৯ মার্চ তার মা বাদী হয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরী করেন। গত ২২ এপ্রিল সুজাতপুর বাজার সংলগ্ন অক্সফোর্ড কিন্ডারগার্টেনের একটি কক্ষ থেকে কাকুলী মস্তকবিহীন অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কাকুলীর মা রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৮।