মনিরুল ইসলাম মনির :
মতলব উত্তর উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর বাজারে অবস্থিত ফ্রেন্ডস ফোরাম’৯৮ এর উদ্যোগে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ব্যাপক প্রচারাভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২১ মার্চ (শনিবার) দিনব্যাপী ফ্রেন্ডস ফোরামের ‘করোনাঃ আতংক নয়, সচেতন হই’ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় শিরোনামের ইশতেহার প্রচার, হেক্সিসল ও মাক্স বিতরণের মাধ্যমে এই কর্মসূচী শুরু করা হয়।
উক্ত বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা আক্তার, সংগঠনের সদস্য তানবীর আহমেদ, ইমন খাঁন, বোরহান উদ্দিন ডালিম, রোমান মিয়া, দেলোয়ার হোসেন রিজবী আহমেদ, আ. মতিন, নাসির মল্লিক ও মানিক মিয়াজী সহ অন্যান্যরা। মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাবৃন্দ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসক ও রোগীদের মাঝে, থানা পুলিশ বিভাগের সকল সদস্যবৃন্দ এবং মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর, কালীপুর, ছেংগারচর বাজার, শ্রীরায়েরচর’সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হেক্সিসল, মাক্স ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি কোভিড-১৯ কে প্যানডেমিক ঘোষণা করেছে। তবে এটি সাম্প্রতিক কালের প্রথম প্যানডেমিক নয়। ইতিপূর্বে আমরা সোয়াইন ফ্লু, সার্স এবং মার্স-এর মত প্যানডেমিক সফলভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে।মনে রাখতে হবে প্যানডেমিক মানেই এই নয় যে, কোভিড-১৯ নামের এই ভাইরাসটি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে কিংবা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যু অবধারিত। বরং এটি ভাইরাসটির ভৌগোলিক বিস্তারের স্বীকৃতি মাত্র।
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মত বাংলাদেশেও এখন কোভিড-১৯ ছড়াচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হচ্ছেন। আশংকা করা হচ্ছে সামনের দিনগুলোতে আরো অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এখন প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতার। আতঙ্কিত না হয়ে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে আমরা নিজেরা যেমন কোভিড-১৯ মুক্ত থাকতে পারবো, তেমনি নিরাপদ রাখতে পারবো আমাদের আশপাশের মানুষগুলোকে আর আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে।
করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৮টি লক্ষণ ও ১২টি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, নিজের এবং নিজের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকুন। সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশির জন্য অযথা দুশ্চিন্তিত হয়ে হাসপাতালে ভীড় না বাড়ানো। শুধুমাত্র দীর্ঘ মেয়াদী অথবা বাড়াবাড়ি রকমের লক্ষণ দেখা দিলেই সরকার নির্ধারিত হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা। শুধুমাত্র সর্দি-কাশি থাকলে ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন। ফেস মাস্ক ব্যবহার করা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীদের জন্য জরুরী সবার জন্য নয়। অপ্রয়োজনে গণপরিবহণ যেমন বাস, ট্রেন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা ও দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা, সামাজিক মেলামেশার সময় হাত মেলানো ও কোলা-কুলি করা পরিহার করা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা ও হাঁচি-কাশির সময় কনুই এবং কাঁধের মাঝামাঝি অংশ দিয়ে মুখ ঢেকে নিন। প্রয়োজনে টিস্যু ব্যবহার করে তা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দেয়া। এছাড়াও মাছ, মাংস বা ডিম ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া, অন্যের ব্যবহার করা তোয়ালে, কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা, কমপক্ষে বিশ সেকেন্ড সাবান দিয়ে বার বার, ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করা ও হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক নয়। হাত না ধুয়ে মুখ, নাক, চোখ স্পর্শ না করা।
আপনি যদি চীন, ইতালি, স্পেন, ইরান বা উপদ্রুত অন্য কোন দেশ থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরে থাকেন তাহলে ১৪ দিন স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকুন। এই ১৪টি দিন বাসায় একটি নির্দিষ্ট ঘরে থাকুন, কোন কারণেই ঘরের বাইরে বের হবেন না। এ সময় আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ আপনার সংস্পর্শে আসতে পারবেন না। দশ জনের বেশি মানুষ এক সাথে জমায়েত হবেন না। কখনও জমায়েত হলে পরস্পরের মধ্যে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের অন্য কোন অসুস্থতা যেমন হাঁপানি, ডায়াবেটিস বা হার্টের অসুখ আছে তাদের ঝুঁকি বেশি।