অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাড়িতে দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন আখতারুন্নেসা পপি (২৮) নামের এক গৃহবধূ।
অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার দেহের ১৮ শতাংশের মতো পুড়ে গেছে।
খবর পেয়ে শনিবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ দক্ষিণ গোড়ানের একটি বাড়ি থেকে ওই নারীর দুই সন্তান আলফি (১১) ও জান্নাতুলের (৭) লাশ উদ্ধার করেছে।
তবে ওই ঘরে আগুন ধরার কিংবা চুরি-ডাকাতির কোনো চিহ্ন পায়নি পুলিশ।
ওই বাসায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন পপি; তার স্বামী মোজাম্মেল হক মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে থাকেন, সেখানে তার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকান রয়েছে।
সন্তানদের হত্যার পর পপির আত্মহত্যার চেষ্টার কারণ এখনও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
তবে পপির বাবা আবু তালেব ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, তার মেয়ে ও জামাতার মধ্যে কলহ ছিল।
তিনি বলেন, তার মেয়ে বিয়ের পর নয় বছর তার সঙ্গে থাকলেও কিছু দিন আগে আলাদা বাসা নিয়েছিলেন। জামাতা মোজাম্মেল প্রতি সপ্তাহে ঢাকা আসতেন, তবে গত সপ্তাহে আসেননি।
তালেবের ধারণা, স্বামীর সঙ্গে কলহ থেকে পপি গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
পপির মা হেলেনা জানান, স্বামীর নির্যাতনের কারণে পপি তার দুই মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।একটি গণমাধ্যমকে হেলেনা জানিয়েছেন, তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। ১৩ বছর আগে পপির বিয়ে হয়। তার স্বামী মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের বাজারে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা করেন।
তিনি আরও জানান, বিয়ের পর থেকে পপি গোড়ানে তার বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতো। পরে সেখানেই বাসা ভাড়া নেয় তার স্বামী। তাদের দুই মেয়ে আলফি ও জান্নাতুল। তারা দুজনেই ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে পড়তো। আলফি চতুর্থ শ্রেণিতে ও জান্নাতুল প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
হেলেনা জানান, পপির স্বামী মোজাম্মেল মুন্সীগঞ্জে থেকে ব্যবসা করেন। মাঝে মাঝে গোড়ানে পরিবারের কাছে আসেন। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে তিনি এসেছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাতে মোজাম্মেল শ্বশুর আবু তালেবকে ফোন দিয়ে দোকানে মাল তোলার জন্য ১০ লাখ টাকা চায়। টাকা না দিলে দুই মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বলে, ‘আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে যাব, আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে যাবেন।’
‘এরপর সকালে পপির বাবা পপিকে ফোন দিয়ে সাড়া না পেয়ে বাসায় গেলে পপি নিজেই দরজা খুলে দেন। এ সময় পপির শরীরের নিচের অংশ দগ্ধ অবস্থায় লেপ মোড়ানো ছিল। আর পাশের রুমে দুই মেয়ের গলা কাটা ও কিছুটা পুড়ে যাওয়া লাশ পড়ে ছিল।’
তিনি বলেন, যেহেতু স্বামী দুই মেয়েকে নিয়ে যেতে চেয়েছে, তাই সে তার মেয়েদের হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এ ঘটনার জন্য তার স্বামীই দায়ী।
এ ব্যাপারে পপির স্বামী মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতি শুক্রবার তিনি ঢাকায় আসেন। কিন্তু বাড়িতে একটি জমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় এবার তিনি আসতে পারেননি।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে পপির সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, রোববার তিনি ঢাকায় আসবেন।
এই ধরনের ঘটনা পপি ঘটাতে পারে, তেমন আঁচ করতে পারতে পারেননি বলে জানান তার স্বামী।
তিনি বলেন, ওই সময় তার কথায় কোনো রাগ ছিল না। এ রকম একটি ঘটনা ঘটাবে, তা কথা বলে বোঝা যায়নি। খিলগাঁও থানার ওসি জানান, শুক্রবার রাতের কোনো এক সময়ে পপি তার দুই শিশু সন্তান জান্নাতুল ফেরদৌস ও আলভীকে গলা কেটে হত্যার পর নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।
গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় পপিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, পপির পা ও হাত মিলিয়ে দেহের ১৮ শতাংশের মতো পুড়েছে।