স্বাস্থ্য ডেস্ক:
সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে বিপুল আতঙ্ক তৈরি করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্বের একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণে ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ হারিয়েছেন তিন হাজার ৩০৭ জন রোগী। এরমধ্যে শুধু চীনেই মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ১৩ জনের। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ২৯জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। তাই বাংলাদেশও ঝুঁকির মাঝে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে খুব দ্রুত এ সংবাদগুলো ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে অনেকেই আতঙ্কিত হচ্ছেন কিন্তু আতঙ্কিত না হয়ে আমরা নিজেরা কী প্রস্তুতি নিতে পারি এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে চলুন জেনে নেয়া যাক।
প্রথমত, অতি জরুরি কাজ না থাকলে বাসার বাইরে না যাওয়া। আর বাইরে গেলে চেষ্টা করা যেকোনো জায়গায় অপ্রয়োজনীয় স্পর্শ এড়িয়ে চলতে। আর সম্ভব হলে দুই হাতে একবার ব্যবহার করা যায় এমন গোল্ভস ব্যবহার করা। সঙ্গে ভিড় এলাকাগুলো চলাচলের ক্ষেত্রে পরিহার করা।
দ্বিতীয়ত, অসুস্থ হলে অর্থাৎ সর্দি-কাশি এমন হলে নিজেকে অন্যদের থেকে কিছুটা দূরে রাখার চেষ্টা করা, হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখটা ঢেকে রাখা এবং সবসময় মাস্ক ব্যবহারের চেষ্টা করা। অসুস্থ হয়ে যদি শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়া।
তৃতীয়ত, বিশেষ করে যাত্রাপথে ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে এবং দোকান থেকে কিছু কিনে আমরা যে টাকা আদান-প্রদান করি সেক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া এবং হাতে গোল্ভস ব্যবহার করা।
চতুর্থত, বিভিন্ন অফিস বা বাসার দরজায় হাতল বা গেট খোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই হাতে গোল্ভস ব্যবহার করা। লিফটের সুইচে হাত দেবার ক্ষেত্রেও গোল্ভস ব্যবহার করা। পঞ্চমত, মোসাহাফা বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা।
যষ্ঠতম, যেখানে-সেখানে থুথু না ফেলা। মাস্ক ও গোল্ভস ব্যবহার করে যেকোনো স্থানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা।
আর সবকিছুর মূল পরামর্শ হচ্ছে প্রতিবার বাইরে থেকে এসে বা খাওয়ার আগে বিষ থেকে ত্রিশ সেকেন্ড ধরে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা। মোবাইল, কম্পিউটারের মাউস, কিবোর্ড ইত্যাদি ব্যবহার করে হাত ধোয়া।
খাবারের ক্ষেত্রে শাক-সবজি, ফলমূল খুব ভালভাবে ধুয়ে খাওয়া। বিশেষ করে ডিম ও মাংস খুব ভালভাবে রান্না করা। বাচ্চাদের আইসক্রিম বা ঠান্ডা জাতীয় খাওয়া থেকে দূরে রাখতে পারেন।
মালয়েশিয়ার ইউনিসেফের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস আকারে বৃহৎ, কোষের ব্যাস ৪০০ থেকে ৫০০ মাইক্রো মিটার বলা হচ্ছে। এই কারণে মাস্ক এই ভাইরাস প্রবেশকে বাধা দিতে পারবে বলে বলা হচ্ছে। ভাইরাসটি বাতাসে স্থির থাকে না তবে একটি জায়গায় অবস্থান নিতে পারে।
করোনাভাইরাস যদি কারো মাধ্যমে একটি ধাতব পৃষ্ঠের উপর স্থান করে নেয় তখন এটি ১২ ঘন্টা বাঁচতে পারবে, তাই এমন কোনো স্থানে হাত দিলে আমাদের সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত ধোয়া উচিত।
আর করোনাভাইরাস যখন কাপড় জাতীয় কিছুর ওপর পড়ে তখন এটি ৯ ঘণ্টা অবধি থাকতে পারে তাই জামাকাপড় ভাইরাস থেকে মুক্ত করতে ধোয়া বা দু’ঘন্টা সূর্যের সংস্পর্শে রাখা যেতে পারে।
লেখক: কামরুজ্জামান নাবিল
শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান