চাঁদপুর সদর হাসপাতালের ওটি বয় এখন চিকিৎসক, নিয়মিত করছেন চেম্বার

  • আপডেট: ১০:১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ২৬৭

ছবি-নতুনেরকথা।

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওটি বয় মো. আলমগীর হোসেন। ২০১১ সালে ওই হাসপাতালে যোগদান করলেও তদ্বির করে প্রেষণে চলে আসেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে।

বিগত ১৪ বছর তিনি এই হাসপাতালে চাকরি করার পাশাপাশি নিজেকে একজন চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজ এলাকায় চেম্বার খুলে বসেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষ তার প্রতারণা বুঝতে না পেরে প্রতিদিনই এসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তবে আলমগীর নামের আগে চিকিৎসক (ডাঃ) লেখা সঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মো. আলমগীর হোসেন এক সময় প্রবাসে ছিলেন। এরপর দেশে এসে জেলার এক আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতায় হাসপাতালে চাকরি নেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে ডাঃ পরিচয় দেয়া শুরু করেন। জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজারে চেম্বার দিয়ে বসেছেন। বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে রোগী দেখেন। একই সাথে সুন্নাতে খৎনার কাজও করেন।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, আলমগীর হোসেনের পিতা লোকমান একজন অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য (সাবেক বিডিআর)। দুই ভাইয়ের মধ্যে আলমগীর বড়। ছোট ভাই হিরন কিছুদিন আগে মালেয়শিয়া গেছেন। তাদের পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো না থাকলেও ডাঃ পরিচয়ে চেম্বার দিয়ে বেশ টাকা পয়সার মালিক হয়েছেন।

সরেজমিন রামপুর বাজার সংলগ্ন পশ্চিম লাড়ুয়া আলমগীর হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় তার বাড়ীর সামনে লেখা আছে জাহানার মঞ্জিল, মৃধাবাড়ী, প্রযত্নে ডাঃ মোঃ আলমগীর হোসেন। বাড়ীর পাশেই কবরস্থান। সেখানে লেখা আছে ‘পারিবারিক কবর স্থান। নির্মাণে-ডাঃ মোঃ আলমগীর। তবে তার চেম্বারের সামনে কোন সাইনবোর্ড রাখেননি। অর্থাৎ ডাঃ পরিচয় তার সব স্থানেই খুব স্বাভাবিকভাবে খোলামেলা তুলে ধরেছেন।

রামপুর বাজারের একজন ওষুধ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি নিজে এই বাজারে গত ৩০ বছর ব্যবসা করলেও অবস্থা আগের মতই। কিন্তু আলমগীর হোসেন সরকারি হাসপাতালের ডাঃ পরিচয়ে আঙ্গুল পুলে কলাগাছ হয়েছেন। সাধারণ মানুষ বুঝে না বুঝেও তার চিকিৎসা নিতে আসেন। আর সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও তার এই ভুয়া ডাক্তার পরিচয় বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

চিকিৎসক না হয়ে কিভাবে পরিচয় দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ভুয়া চিকিৎসক পরিচয়ধারী আলমগীর হোসেন বলেন, এলাকার লোকজনই আমাকে ডাঃ বলে ডাকে। সে জন্য ডাঃ লিখি। চিকিৎসক পরিচয় দেয়া আমার ঠিক হয়নি। এটি লেখাও ভুল হয়েছে। তবে এখন থেকে আর এই পরিচয় দিব না।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এ.কে.এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমার হাসপাতাল এরিয়ার মধ্যে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি অনিয়ম করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার রাখি। এমতাবস্থায় যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি তার এলাকায় কি পরিচয় দেন কিংবা কি করেন সে বিষয়ে আমি অবগত নই।

ওটি বয় আলমগীর হোসেনের ডাঃ পরিচয় দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ধারা ২৯ এর উপধারা ১ ও ২ অনুযায়ি নিবন্ধিত ব্যাক্তি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না এবং উল্লেখিত ধারায় কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই ধরণের ভুয়া চিকিৎসক পরিচয় দেয়ার মানে হচ্ছে ওই ব্যাক্তি দেশের আইন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এই বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

সকালে ‘রিট করে’ বিকেলেই সুর পাল্টালেন সারজিস 

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের ওটি বয় এখন চিকিৎসক, নিয়মিত করছেন চেম্বার

আপডেট: ১০:১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওটি বয় মো. আলমগীর হোসেন। ২০১১ সালে ওই হাসপাতালে যোগদান করলেও তদ্বির করে প্রেষণে চলে আসেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে।

বিগত ১৪ বছর তিনি এই হাসপাতালে চাকরি করার পাশাপাশি নিজেকে একজন চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজ এলাকায় চেম্বার খুলে বসেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষ তার প্রতারণা বুঝতে না পেরে প্রতিদিনই এসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তবে আলমগীর নামের আগে চিকিৎসক (ডাঃ) লেখা সঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মো. আলমগীর হোসেন এক সময় প্রবাসে ছিলেন। এরপর দেশে এসে জেলার এক আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতায় হাসপাতালে চাকরি নেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে ডাঃ পরিচয় দেয়া শুরু করেন। জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজারে চেম্বার দিয়ে বসেছেন। বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে রোগী দেখেন। একই সাথে সুন্নাতে খৎনার কাজও করেন।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, আলমগীর হোসেনের পিতা লোকমান একজন অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য (সাবেক বিডিআর)। দুই ভাইয়ের মধ্যে আলমগীর বড়। ছোট ভাই হিরন কিছুদিন আগে মালেয়শিয়া গেছেন। তাদের পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো না থাকলেও ডাঃ পরিচয়ে চেম্বার দিয়ে বেশ টাকা পয়সার মালিক হয়েছেন।

সরেজমিন রামপুর বাজার সংলগ্ন পশ্চিম লাড়ুয়া আলমগীর হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় তার বাড়ীর সামনে লেখা আছে জাহানার মঞ্জিল, মৃধাবাড়ী, প্রযত্নে ডাঃ মোঃ আলমগীর হোসেন। বাড়ীর পাশেই কবরস্থান। সেখানে লেখা আছে ‘পারিবারিক কবর স্থান। নির্মাণে-ডাঃ মোঃ আলমগীর। তবে তার চেম্বারের সামনে কোন সাইনবোর্ড রাখেননি। অর্থাৎ ডাঃ পরিচয় তার সব স্থানেই খুব স্বাভাবিকভাবে খোলামেলা তুলে ধরেছেন।

রামপুর বাজারের একজন ওষুধ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি নিজে এই বাজারে গত ৩০ বছর ব্যবসা করলেও অবস্থা আগের মতই। কিন্তু আলমগীর হোসেন সরকারি হাসপাতালের ডাঃ পরিচয়ে আঙ্গুল পুলে কলাগাছ হয়েছেন। সাধারণ মানুষ বুঝে না বুঝেও তার চিকিৎসা নিতে আসেন। আর সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও তার এই ভুয়া ডাক্তার পরিচয় বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

চিকিৎসক না হয়ে কিভাবে পরিচয় দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ভুয়া চিকিৎসক পরিচয়ধারী আলমগীর হোসেন বলেন, এলাকার লোকজনই আমাকে ডাঃ বলে ডাকে। সে জন্য ডাঃ লিখি। চিকিৎসক পরিচয় দেয়া আমার ঠিক হয়নি। এটি লেখাও ভুল হয়েছে। তবে এখন থেকে আর এই পরিচয় দিব না।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এ.কে.এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমার হাসপাতাল এরিয়ার মধ্যে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি অনিয়ম করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার রাখি। এমতাবস্থায় যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি তার এলাকায় কি পরিচয় দেন কিংবা কি করেন সে বিষয়ে আমি অবগত নই।

ওটি বয় আলমগীর হোসেনের ডাঃ পরিচয় দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ধারা ২৯ এর উপধারা ১ ও ২ অনুযায়ি নিবন্ধিত ব্যাক্তি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না এবং উল্লেখিত ধারায় কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই ধরণের ভুয়া চিকিৎসক পরিচয় দেয়ার মানে হচ্ছে ওই ব্যাক্তি দেশের আইন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এই বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।