মুজিবের পথেই হাসিনার প্রস্থান

  • আপডেট: ০৫:৫৫:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪
  • ৩৬

মো. জাকির হোসেন মজুমদার

মুজিব আর হাসিনার পতনের পটভূমি একই। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাত্র তিন বছরের মাথায় বাপে সকল দল নিষিদ্ধ করে বাকশালতন্ত্র কায়েম করেছিল। একনায়ক হয়েছিল। মেয়েও বাকশালকে অঘোষিতভাবে ধারণ করে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার হরণ করে স্বৈরাচার হয়েছিলো।

পরাজিত বাকশাল-স্বৈরাচারের জন্য কোন দিবস নেই, শোক নেই। এটাই স্বাভাবিক। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।

যেই গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের জন্য পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। সেই স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র তিনবছরের মাথায় মুজিব পাক প্রেতাত্মা আইয়ুব, ইয়াইহার চেয়ে আরও ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিলো। সকল দল, বিরোধী গণমাধ্যম, সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে সকল দল-মতের লোককে বাকশালে যোগদানের বাধ্যবাধকতা জারি করেছিলো। এমনকি আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করা হয়। পরিণামে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা সেনাবাহিনীর একাংশের বিদ্রোহে স্ব-পরিবারে শেখ মুজিব নিহত হন।

একইভাবে দেশের সার্বজনীন নির্বাচনী অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের ভোট ছাড়াই বারবার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখে হাসিনার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। গণতন্ত্র, রাজনীতিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। নাগরিক অধিকার, ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়। দেশের নাগরিকদের মধ্যে, ধনী-গরীবের মধ্যে বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গুম-খুন, গায়েবী মামলা, হামলা, দমন-পীড়নের মাধ্যমে বিরোধী মতকে কোণঠাসা করা হয়। দেশের গণমাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে বাকস্বাধীনতা হরণ এবং প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে চাটুকার বসিয়ে হাসিনার ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী শাসনের স্তুতি করা হয়। নাৎসিজমের মতো গোয়েবলসীয় কায়দায় সত্যকে মিথ্যা, আর মিথ্যাকে সত্য বলে চাপিয়ে দেয়ার এক অসুস্থ ধারা সৃষ্টি করা হয়।

এসবের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময়ের জনক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়ে রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। জুলাইর প্রথম থেকে সৃষ্টি হওয়া ছাত্র-জনতার ৩৬ দিনের গণবিপ্লবের জোয়ারে ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ অপশাসনের সেল্টার পাওয়ার এবং মদদপুষ্ট দিল্লির মোদি সরকারের আশ্রয়ে ভারতে চলে যায়। (সংক্ষেপিত ইতিহাস)

লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট মো. জাকির হোসেন মজুমদার।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

সকালে ‘রিট করে’ বিকেলেই সুর পাল্টালেন সারজিস 

মুজিবের পথেই হাসিনার প্রস্থান

আপডেট: ০৫:৫৫:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪

মুজিব আর হাসিনার পতনের পটভূমি একই। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাত্র তিন বছরের মাথায় বাপে সকল দল নিষিদ্ধ করে বাকশালতন্ত্র কায়েম করেছিল। একনায়ক হয়েছিল। মেয়েও বাকশালকে অঘোষিতভাবে ধারণ করে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার হরণ করে স্বৈরাচার হয়েছিলো।

পরাজিত বাকশাল-স্বৈরাচারের জন্য কোন দিবস নেই, শোক নেই। এটাই স্বাভাবিক। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।

যেই গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের জন্য পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। সেই স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র তিনবছরের মাথায় মুজিব পাক প্রেতাত্মা আইয়ুব, ইয়াইহার চেয়ে আরও ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিলো। সকল দল, বিরোধী গণমাধ্যম, সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে সকল দল-মতের লোককে বাকশালে যোগদানের বাধ্যবাধকতা জারি করেছিলো। এমনকি আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করা হয়। পরিণামে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা সেনাবাহিনীর একাংশের বিদ্রোহে স্ব-পরিবারে শেখ মুজিব নিহত হন।

একইভাবে দেশের সার্বজনীন নির্বাচনী অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের ভোট ছাড়াই বারবার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখে হাসিনার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। গণতন্ত্র, রাজনীতিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। নাগরিক অধিকার, ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়। দেশের নাগরিকদের মধ্যে, ধনী-গরীবের মধ্যে বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গুম-খুন, গায়েবী মামলা, হামলা, দমন-পীড়নের মাধ্যমে বিরোধী মতকে কোণঠাসা করা হয়। দেশের গণমাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে বাকস্বাধীনতা হরণ এবং প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে চাটুকার বসিয়ে হাসিনার ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী শাসনের স্তুতি করা হয়। নাৎসিজমের মতো গোয়েবলসীয় কায়দায় সত্যকে মিথ্যা, আর মিথ্যাকে সত্য বলে চাপিয়ে দেয়ার এক অসুস্থ ধারা সৃষ্টি করা হয়।

এসবের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময়ের জনক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়ে রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। জুলাইর প্রথম থেকে সৃষ্টি হওয়া ছাত্র-জনতার ৩৬ দিনের গণবিপ্লবের জোয়ারে ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ অপশাসনের সেল্টার পাওয়ার এবং মদদপুষ্ট দিল্লির মোদি সরকারের আশ্রয়ে ভারতে চলে যায়। (সংক্ষেপিত ইতিহাস)

লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট মো. জাকির হোসেন মজুমদার।