সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসযোগ আন্দোলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় হাজীগঞ্জে মার্সেল শো-রুমসহ ইলেকট্রনিক্স মালামাল দোকানের প্রায় দেড় কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবারবার (১৩ আগস্ট) লুটপাট ও ভাংচুরকৃত ধ্বংসস্তুপের বিভিন্ন আলামত দেখিয়ে সংবাদকর্মীদের ক্ষতির বিষয়টি জানান, ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. ফিরোজ আহমেদ। এতে নিঃস্ব হয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধীকারী ও পৌর যুবদলের আহবায়ক মো. মিজানুর রহমান সেলিম।
ফিরোজ আহমেদ জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অসযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে গত ৪ আগস্ট (রোববার) বেলা ১১টার দিকে হাজীগঞ্জ বাজারে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ধাওয়া করে। এতে দুই পক্ষের সংর্ঘষ বেঁধে যায়। এভাবে কয়েক ঘন্টা হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষ চলতে থাকে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সংঘর্ষের শুরুতেই আমরা শো-রুমটি বন্ধ করে দেই।
এরপর সংঘর্ষ চলাকালে এদিন বিকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের শো-রুমের তালা ও সাটার ভেঙ্গে বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক্স মালামাল ও ক্যাশে থাকা নগদ প্রায় ১৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। আর যেগুলো বহনযোগ্য নয়, অর্থ্যাৎ ভারী মালামালগুলো ও শো-রুমের গ্লাস ভাংচুর করে। এরপর শো-রুমের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অবস্থিত গোডাউনের তালা ও সাটার ভেঙ্গে সবধরনের ইলেকট্রনিক্স মালামালগুলো নিয়ে যায়। এতে আমাদের প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধীকারী একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এখন তিনি ঋণ ও ধার-দেনার টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পাশাপাশি তিনিসহ আমরা যারা চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করি, আমরাও দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি। এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। কারা হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের সাথে জড়িত। আমি আশা করি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধীকারী ও পৌর যুবদলের আহবায়ক মো. মিজানুর রহমান সেলিম বলেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে হাজীগঞ্জে কোনো লুটপাট ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মাধ্যমে মানুষ হত্যার নজির নেই। অথচ ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জ বাজারে লুটপাট ও মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা করে তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর ইলেকট্রনিক্স শো-রুম ও দুইটি গোডাউনে থাকা মালামাল এবং ক্যাশে থাকা নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। যেসব মালামাল ওজনের কারণে নিতে পারেনি, সেসব মালামালসহ শো-রুমটি ব্যাপক ভাংচুর করে। এতে আমার প্রায় এক কোটি ৫৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও আমার এলাকা টোরাগড় গ্রামের সরকার বাড়ির ছাত্রনেতা হিমেলের বাবা আজাদ সরকাকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রমাণাদি রয়েছে। যা সবার চোখের সামনে হয়েছে। তাই, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি অনুরোধ ও জোর দাবি জানাচ্ছি, তদন্তপূর্বক এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদেরকে খুঁজে বের করে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন। যাতে করে এমন ঘটনা হাজীগঞ্জে দ্বিতীয়বার না ঘটে।