পবিত্র ঈদুল আযহার তিনদিন বাকি আছে। হাজীগঞ্জের কোরবানির পশুর হাটে প্রচুর গরুর আমদানি হলেও তুলনামূলকভাবে ক্রেতা অনেকটা কম। এর মধ্যে যারা গরু ক্রয় করছেন, তাদের মধ্যে মাঝারি গরু ক্রয়ের ক্রেতাই বেশি। দামও গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি। আবার বড় গরুর ক্রেতা কম, তাই দামেও তুলনামূলক কিছুটা কম। কয়েক দিন ধরে হাজীগঞ্জের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) হাজীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বাকিলা বাজার, সুহিলপুর বাজার ও বেলচোঁ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে সারি সারি গরু। পাশাপাশি অনেক ছাগলও রয়েছে। লোকজনও অনেক বেশি। তারা বাজার ঘুরে দেখছেন, আর দরদাম করছেন। এর মধ্যে দর-দামে মিলে গেলে কেউ কিনছেন, আবার কেউ দাম যাচাই করতে এসেছেন।
এ দিকে পশুর ঘাটতির কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। কারণ, কোরবানির পশুর হাট শুরু হলে, প¦ার্শবর্তী উপজেলাসহ খামারি, পালিত, নিয়মিত ও সিজনাল ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশু নিয়ে হাটে আসেন। এতে করে পশুর ঘাটতি থাকার কথা নয়, বরং উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, পূর্বের বছরগুলোতে দেখা গেছে, জেলার বাহির থেকে প্রচুর কোরবানির পশু আসে। যার ব্যতিক্রম এ বছরও হবেনা।
দেখা গেছে, কোরবানির দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কোরবানির পশু আসছে এবং আসতেছে। এর মধ্যে হাজীগঞ্জের বেশ কয়েকজন সিজনাল ব্যবসায়ীও গরু এনেছেন বলে জানা গেছে। এ বছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোরবানীর পশুর হাটের জন্য ২৬টি নির্ধারিত স্থানের ইজারা দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে ইজারাকৃত বাজারগুলোতে কোরবারিন পশুর হাট বসেছে। এসব বাজারে মাঝারি সাইজের গরু বেশি বিক্রি হতে দেকা গেছে। অপরদিকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বাকিলা বাজার ও হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের পাশে বেলচোঁ বাজারে সড়ক ঘেঁষে বসেছে পশুর হাট। পাশাপাশি সড়কের পাশে পিকআপ, ভটভটি ও থ্রি-হুইলারের কারণে এসব হাটের কারণে সড়কের তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঈদে ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।
এছাড়াও কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর ভুইয়া একাডেমির মাঠে পশুর হাট বসেছে বলে জানা গেছে। এতে মাঠের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। পাশপাশি মাঠ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো ও পোকা-মাকড়, মশা-মাছি বেড়ে যাওয়ায় হওয়ায় স্থানীয় শিশু-কিশোরদের খেলাধূলা বন্ধ ছিল এবং আগামি একমাস পর্যন্ত খেলাধূলা বন্ধ থাকবে বলে স্থানীয়রা জানান।
অপর দিকে মাঝারি সাইজের গরু ক্রয়কৃত সবুজ নামের একজন ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত বছর যে গরু (ষাড়) ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। এ বছর একই সাইজের গরুর দাম ১ লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। একই সময়ে ইউছুফ আলী নামের একজন ক্রেতা জানান, ৭ জন শরিকদার (অংশিদার) মিলে তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে যে গরু ক্রয় করেছেন। তা গত বছর দেড় লাখ টাকায় কেনা যেতো।
এদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতারা আশা করছেন, আজসহ আগামি তিন দিন বেশিরভাগ গরু ক্রয়-বিক্রয় হবে। তাছাড়া হাতে আরো দুই দিন (শনিবার ও রবিবার) রয়েছে। এর মধ্যে গরুর দাম বৃদ্ধিও হতে পারে, আবার স্বাভাবিক কিংবা দাম কমেও যেতে পারে।
কথা হয় কয়েকজন খামারি ও কৃষকের সাথে। তারা জানান, সবধরনের গো-খাদ্যের দাম দিগুন হয়েছে। যার ফলে গরু লালন পালনের খরচও অনেকাংশ বেড়ে গেছে। কিছুটা দাম বেশি হলেও গরু লালন পালনে যে ব্যয় হয়েছে, তা উঠে আসবেনা। এদিকে যারা এখনো গরু বিক্রি করতে পারেননি। তাঁরা দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ হিসাবে তারা বলেন, গরুর পেছনে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ থেকে ৫০০টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।