চাঁদপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠেছে ইবাদতের মারকাজ খ্যাত হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স আহমাদ আলী পাটওয়ারী ওয়াকফ এস্টেট। দৃষ্টি নন্দন এই মসজিদটি হচ্ছে দেশ ও বিদেশে সবার কাছে খুবই পরিচিত একটিস্থান। মসজিদের নয়নাভিরাম পরিবেশ দেখলে মনের মধ্যে প্রশান্তি জাগে। এই কমপ্লেক্সটি এখন হাজীগঞ্জ উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা ব্যাপক রাখছে। হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্সটির কারণে শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলা এখন চাঁদপুর জেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
মসজিদের ইতিহাস থেকে জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা আহমাদ আলী পাটওয়ারী ১৩২৫ বঙ্গাব্দের দিকে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করে বিশাল সম্পত্তি ওয়াকফ করেন। ওই সম্পত্তিতেই গড়ে ওঠে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ কমপ্লেক্স। মসজিদের ৯ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি হিসেবে থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
১৩৩৭ বঙ্গাব্দের ১৭ আশ্বিন আহমদ আলী পাটওয়ারী (রহ.)’র পরম ইচ্ছায় হযরত মাওলানা আবুল ফারাহ জৈনপুরী (রহ.) এর পবিত্র হাতে পাকা মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। মসজিদের প্রথম অংশ (পূর্ব) ৪৭৮৪ বর্গফুট, মাঝের অংশ ১৩০০৬ বর্গফুট এবং শেষাংশ (পশ্চিম) ১৬১৫ বর্গফুট। সর্বমোট মসজিদের আয়তন ২৮৪০৫ বর্গফুট।
মসজিদের প্রথম অংশের উপরের দিকে সুরা ইয়াছিন ও সুরা জুমআ লিপিবদ্ধ ছিল। সংস্কারের সময় তা উঠে যায়। মসজিদের অনন্য সুন্দর মেহরাবটি কাচের ঝাড়ের টুকরো নিখুঁতভাবে কেটে কেটে আকর্ষণীয় নকশায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মাঝের অংশটি ৭৭টি আকর্ষণীয় পিলার ও ঝিনুকের মুজাইক দিয়ে নির্মিত হয়। তৃতীয় অংশে রয়েছে তিনটি বিশাল গম্বুজসহ আকর্ষণীয় বিশাল সুউচ্চ মিনার। ১৯৫৩ সালে ১২২ফুট উঁচু এই সুউচ্চ মিনারটি নির্মাণ হয়।
কারুকার্যখচিত মসজিদের সবশেষ পূর্ব প্রাচীরের পবিত্র কালেমা শরিফ খচিত চিনা বাসনের টুকরো দিয়ে তৈরি মনোরম ফুলের ঝাড়ের ন্যয় আকর্ষণীয় করে সাজানো বিশাল ফটক। মসজিদের প্রবেশের সুবিশাল ফটকটি দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়। পাথরের সাজে সজ্জিত অসংখ্য তারকাখচিত তিনটি বড় বড় গম্বুজ পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
মসজিদটি তৈরি করার সময় হাজীগঞ্জ বা এর আশাপাশের কোনো এলাকাতে কোনো ইট ভাটা ছিলোনা। তখন মসজিদটির উদ্যোক্তা সেখানে একটি ইট ভাটা তৈরি করেন। তারপর সেখানে ইট তৈরি করে সেই ইট দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এছাড়াও তিনি মসজিদ নির্মাণের জন্য জাহাজ ভাড়া করে ভারতের কলকাতায় গিয়ে লোহার বীম ও মর্মর পাথর কিনে আনেন। পরবর্তীতে মসজিদটির কাজ ১৯৩৭ খ্রিঃ দিকে শেষ হয় এবং শুক্রবার দিন মসজিদে আজান দেওয়ার মাধ্যমে মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়।
মসজিদ কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গছে, এই মসজিদের জুমার নামাজের আজান ও একামতের উদ্বোধনী দিবসে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ চারজন মন্ত্রী এসেছিলেন। এ মসজিদে নামাজ পড়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ আরও অনেকে। বিভিন্ন সময় এসেছেন বরেণ্য আউলিয়ারাও।
স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে, এই মসজিদ কমপ্লেক্সটি আল্লাহর অলীগণের রুহানি ফয়েজ ও বরকতে শিরক-বিদআত মুক্ত এবং ইবাদতের মারকাজ হিসেবে খ্যাত। মসজিদের কারামত ও ফয়েজ-বরকতে এই উপজেলা গৌরবান্বিত। যে কারণে অনেকেই নিয়ত ও মানতের অর্থ এখানে দান করেন। এই রেওয়াজ বহুবছর থেকে চালু আছে। এখানে নারীদের জন্য নামাজের সুব্যবস্থা আছে। দূর-দুরান্ত থেকে এখানে এসে নামাজ আদায় করেন নারীরা।
হাজীগঞ্জ ঐতিহাসকি বড় মসজিদে প্রতি শুক্রবার ২৫/৩০ হাজার মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেন।
প্রতি বছর জুময়াতুল বিদায় এ মসজিদে লক্ষাধীক মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।