করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা

  • আপডেট: ০৪:০৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মে ২০২০
  • ৫৩

ফাইল ছবি। নতুনেরকথা।

মো.আজহার উদ্দিন:

“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ”। ঈদের চাঁদ দেখার সাথে সাথে টিভি চ্যানেল ও বেতারে একযোগে এই সংগীত যখন বেজে উঠে, তখন ঈদের আনন্দ,জোশ হাজার গুণে বেড়ে যায়। আবাল-বৃদ্ধ বনিতা সবার মনে এক অন্যান্য পুলক শিহরণ জাগে।

দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিম জাহানে পবিত্র ঈদুল ফিতর নিয়ে আসে এক অনাবিল আনন্দ।প্রতিবছর ঈদকে ঘিরে নানা আয়োজন,পরিকল্পনা থাকলেও এবার সকল পরিকল্পনায় হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস।এক অজানা  আতঙ্কের ভিতরে পালিত হবে এবারের ঈদ।করোনা পরিস্থিতিতে চাঁদপুর থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভিন্নধর্মী ঈদ ভাবনাগুলোকে পাঠকদের নিকট তুলে ধরা হল –

বিশ্ব জুড়ে বিরাজ করছে এক দুঃস্বপ্নের মহামারী। প্রতিদিন মৃত্যু মিছিলে যোগ হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কাঁদছে বিশ্ব, ধুকছে মানবতা!এরই মাঝে দীর্ঘ এক মাস রমযানের পর এসে গেছে মুসলিম উম্মাহার সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। তবে অন্যান্য বারের মত এবারের ঈদটা আনন্দপূর্ণ হবে না। কাটাতে হবে প্রিয়জন ছাড়া। হবে না ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়ানো, মজা, মাস্তি আর হই হুল্লোড়ে বন্ধু, আত্মীয় এবং কাছের মানুষের সাথে সময় কাটানো। তবু আল্লাহ্ তায়ালার এই কঠিন পরীক্ষাকে মেনে নিয়ে এই পবিত্র দিনে ঘরে বসে সবার মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চাই। আনন্দের মাত্রা কম হলেও সবাই পরিবারের সাথে কাটাতে পারবো খুব ভালো কতগুলো মুহূর্ত। এই করোনা পরিস্থিতিতে আমার ঈদ ভাবনাগুলো তুলে ধরলাম–

নিজে নিরাপদ থাকবো অন্যকে নিরাপদে রাখবো তাই ঘরেই অবস্থান করবো। কেনাকাটা না হয় এই ঈদে না-ই হল। তাছাড়া কত লাখ লাখ খেটে খাওয়া মানুষ আছে যারা ঈদ কী সেটাই ভুলে গেছে। তাদের কাছে এক মুঠো খাবারের লড়াই এখন সবচেয়ে বড় লড়াই। তাই এবারের ঈদে আমি আমার জমানো টাকাগুলো আমার গ্রামের হত দরিদ্র কয়েকজন মানুষের মাঝে তুলে দিব, ইনশাআল্লাহ্‌। কারণ অপরের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মধ্যেই ঈদের প্রকৃত আনন্দ। দিনটা শুরু করবো ফজরের নামাজ দিয়ে। হাত তুলে দোয়া করবো সারা বিশ্ববাসীর জন্য। সূর্য না উঠতেই ঢুঁ মারবো ফেসবুকে।  চেনা পরিচিত সবাইকে মন খুলে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবো। ঈদ নিয়ে কার কী প্লান সব কিছু জোর করে হলেও জেনে নিবো। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সবাইকে একে একে কল করবো, ঈদের বার্তা দিবো আর মন ভরে দোয়া নিবো। পেট ভরে পায়েস, সেমাই খেয়ে ঈদের সালাত আদায় করবো। পরিবারের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিবো। বাসার ভেতর ক্রিকেট আর লুডু খেলে হাসি তামাশায় মেতে উঠবো। যোহরের সালাত আদায় করে গরুর মাংস দিয়ে হবে জব্বর ভুঁড়িভোজ। টিভি ওপেন করে দেখবো পছন্দের সব প্রোগ্রাম; সাথে থাকবে পপকর্ন ভাজা আর চিপস! সাথে ছোটদের নিয়ে দুষ্টমি। এরপর আছরের নামাজ পড়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করবো করোনা আক্রান্ত ঢাকার আকাশটাকে, হাতে থাকবে সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত বই ফেলুদা সমগ্র। পড়বো আর হারিয়ে যাবো লোম হর্ষক ভাবনায়! সন্ধ্যায় হবে প্রিয়জনের সাথে অনলাইন জগতে বিস্তর আড্ডা। আশা করি পরের দিনগুলোও এভাবে কাটবে। সকলের ঈদ ভালো কাটুক (ঈদ মোবারক)

মো.শামীম হোসেন

ইংরেজি বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ইসলামি সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হলো ঈদ।দীর্ঘ এক বছরের পরিক্রমায় রমজান আত্মশুদ্ধি নিয়ে হাজির হয় প্রতিটি মুসলিমের দোরগোড়ায়। রমজান একটি ট্রেইনিং কোর্স হিসাবে কাজ করে।মুসলমানদের মাঝে নতুন করে ঈমানি চেতনা নাড়া দিয়ে উঠে। একমাসের প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকটি মুসলিমের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় খুশির জোয়ার।যা ঈদ নামেই আত্ম প্রকাশ করে।এ জোয়ার স্রোতে আমিও ভেসেছি বহুবার।পুরো বছর কাটতো জোয়ার জলে স্নান করার প্রতিক্ষায়।রমজানে এ খুশির ব্যাকুলতা আরো বৃদ্ধি পেতো।প্রতিটি ক্ষনের প্রস্হানে মনে হতো সুখের সম্রাজ্যের মৃদু হাতছানি। ঈদে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, আত্মীয়দের বাড়ি যাওয়া, পরিবারের সবার সাথে আনন্দে মেতে থাকা।এছাড়াও থাকতো অনেক উৎকন্ঠা কতো না পরিকল্পনা। পুরো পৃথিবীটা যেন ঈদের দিনে নতুন করে আনন্দের সাজে সাজতো। সময় স্রোতে অপেক্ষার অস্তিত্ব নেই।কয়েকটি দিন পরেই আবার ঈদ। তবে এবার পৃথিবীর ভুলে গেছে ঈদের সাজ। এক করোনার ভয়ানক থাবায় পৃথিবী আজ নিস্তব্ধ। তাই এবারের ঈদে খুব একটা পরিকল্পনা নেই। ঘরেই আমার পরিবারের সাথে পালন করবো। আর যতটুকু সম্ভব বাসায় থেকেই আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করবো। আসলে জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে আমরা সবাই একেকজন দায়িত্বশীল। আর দায়িত্বের জায়গা থেকে আমাদের উচিত নিজেদের জায়গায় সচেতন থেকে নিজেকে এবং অন্যকে ভালো রাখা। আগামী ঈদটা যেন কাটাতে পারি একটা সুস্থ পৃথিবীতে পুরোনো সেই আন্দের ঘনঘটায় এবং সে পর্যন্ত সবাই যেন ভালো থাকতে পারি এই দোয়াই রইলো মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে।

জাহিদ হাসান,

আরবি বিভাগ,চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ঈদ শব্দটা যতটা আনন্দের ঠিক ততটাই স্বস্তির। ঈদ মানেই তো সারাদিন বই মাথায় করে ছুটাছুটি করা বালকটির একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস। ঈদ মানেই দীর্ঘদিন বাবা-মা থেকে দুরে থাকা চাকুরীজীবি কিংবা হলে থাকা ছাত্রদের নীড়ে ফেরার অপেক্ষার অবসান। ঈদ মানেই তো পাঁচ বছরের ছোটো শিশুটার মামা বাড়িতে যাওয়ার হিড়িক। ঈদ মানেই এদিক ওদিক ছিটকে যাওয়া বন্ধুগুলোর অনেক দিন পর মিলনমেলা। ঈদ সত্যি প্রচন্ড আন্দের প্রচন্ড স্বস্তির।

কিন্তু এবারের ঈদটা বিগত বছরের ঈদগুলোর থেকে ভিন্ন। এবারের ঈদটা ভয়ের! এবার আর অনেক দিন পর নীড়ে ফিরে আসার আনন্দের ছিটেফোঁটাও নেই কারণ সবাই বিগত মাস দুয়েক ঘরেই বন্ধি আছে। আবার মুদ্রার অন্যপিঠও আছে অনেকেই লকডাউনের কারণে আটকে আছে ফিরতে পারছে না তার নীড়ে। জীবনে এই প্রথম পরিবারের সাথে ঈদ কাটানোর আনন্দটা অধরা থেকে যাবে। কষ্ট একটু তো হবে তাদের কিন্তু তাই বলে তো সচেতনতাকে বিসর্জন দেয়া যায় না। আরেকটু চিন্তা করলে কিছু কপাল পোড়া মানুষের কথা মনে পড়ে।  হুম প্রবাসদের তিন চার বছর প্রিয়জনের মুখ না দেখা প্রবাসী ভাইটার কত স্বপ্ন ছিলো এবারের ঈদ নিয়ে কিন্তু আফসোস দেশেই ফিরা হলো না তার। তার ছোট্ট ছেলেটা এবারও বাবাকে ছাড়াই ঈদ কাটাবে।  এগুলো বলে শেষ করা যাবে না।

তবে আমি নিতান্তই বর্তমানে বিশ্বাসী একজন মানুষ। অতীত কেমন ছিলো কিংবা ভবিষ্যত কেমন হবে তা নিয়ে চিন্তা আছে ঠিক কিন্তু মাথাব্যথা নেই। আমার মতে বর্তমানই সুন্দর। এবারের ঈদটা হেলায় হেলায় কাটিয়ে দিলেন ভবিষ্যতের সুন্দর ঈদের আশায় কিন্তু এমনতো হতে পারে ভবিষ্যতের ঈদটা আপনার জন্য আরও কষ্টের হতে পারে কিংবা ওই ঈদটা উপভোগের পূর্বেই আপনার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো। তাই যতটুকু সম্ভব সচেতন থেকে পরিবারের সাথে ঈদটাকে আনন্দের সহিত পালন করুন। না হয় এবারের ঈদটা বাহিরে ঘুরাঘুরিতে নয় মায়ের সাথে আড্ডায় কাটুক।

সজীব হোসাইন,

মেটারিয়ালস সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং,

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

“ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। ঈদ মানেই  ব্যস্ততায় বাধ ভেঙ্গে একবুক প্রশান্তি। প্রতিবছর  দুইটি  ঈদ সুযোগ করে দেয় সবাইকে এক হওয়ার,পরিবারের সাথে সময় কাটানোর। ধনী,গরীব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঈদের আনন্দে মেতে উঠে সবাই। দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম সাধনার  সাথেই চলতে থাকে ঈদের প্রস্তুতি। নতুন পোশাক কিনা,বাস-ট্রেন-লঞ্চে গাদাগাদি করে শিকড়ের টানে ঘরে ফেরা,ঈদের বাজার করা। ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়া, গোছল সেরে নতুন পোশাক পড়ে মিষ্টিমুখে ঈদগাহে যাওয়া,নামাজ পড়ে কুশল বিনিময় । সব মিলিয়ে আনন্দঘন মূহুর্তে প্রিয়জনদের সাথে কাটে সময়টা। কিন্তু এবার হঠাৎ করোনা ভাইরাসের বিস্তারে পুরো বিশ্ব এক ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । টানা ২ মাস ঘরবন্দী কাটছে সময়। তাই এবারের ঈদটা  অন্যরকম হতে যাচ্ছে। রোডঘাটে  শুনশান নিরবতা,নেই গাদাগাদি করে শহুরে মানুষের ঘরে ফেরার গল্প,নেই বন্ধু-বান্ধবের আড্ডাখানা,ঘরতে যাওয়ার পরিকল্পনা,নেই কেনাকাটার ব্যস্ততা। এবারই প্রথম,শহর থেকে ফিরবে না আপনজন। ঈদের নামাজটুকু ঈদগাহে গিয়ে পড়তে পারবো কিনা সন্দিহান। চারিদিকে লকডাউনের মধ্যেও বিপর্যস্ত  নিম্নবিত্তদের পাশে দাড়িয়ে,তাদের নিয়ে এবারও পার করতে চাই ঈদের দিনটা। এটাই এবারের সার্থকতা।   সবশেষে কামনা একটাই, মহান আল্লাহর কৃপায় সুস্থ হবে ধরনী,আবার আসবে ঈদ, এক হবো আমরা। আমাদের আনন্দ ছড়িয়ে পরবে শান্তিময় বিশ্বে”।

সাইফুল অনি

ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ,

নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই দুর্বিষহ দিনে আমাদের মাঝে আগমন করলো ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ খুশির সমাগম। সমগ্র বিশ্ব যেখানে পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে, সেখানে এই আনন্দময় মুহূর্ত হয়তো উঁকি দিবেনা সবার মনে।হোম কোয়ারেন্টাইনের এই দিনগুলোতে খাঁচায় বন্দী পাখির ন্যায় জীবন হয়তো কারো কাছেই সুখকর নয়। তবে এর মধ্যেই খুঁজে নিতে হবে আনন্দ।ঈদ মানেই আমরা বুঝি দীর্ঘদিন পরে সবাই যার যার গ্রামের বাড়িতে ছুটে যাবে, আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঈদ উদযাপন করবে, সর্বোপরি একটি সামাজিক মিলনমেলায় পরিণত হবে। তবে এখন কি আদৌ এসব সম্ভব! না, যেখানে বেঁচে থাকাটাই একটা চ্যালেঞ্জ সেখানে এসব আনন্দের কথা ভাবাটাও যেন আকাশ কুসুম কল্পনার শামিল।

ঈদের আনন্দ হয়তো পূর্বের বছরগুলোর ন্যায় উপভোগ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। হয়তো ঘুরতে যাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। তবে এর মধ্যেই খুঁজে বের করতে হবে আনন্দ। মৃতের সংখ্যা যেখানে তিন লক্ষাধিক, আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে, সেখানে যারা এখনো সুস্থ থেকে ঈদ উদযাপনের কথা ভাবছি তাদের তো এটাই বড় আনন্দ। সত্যিকার অর্থে বেঁচে থাকা আর সুস্থ থাকাটা সকল প্রকার আনন্দ-উদযাপনের ঊর্ধ্বে।

পরিশেষে এটাই বলবো, “ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন এবং অসহায় মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন।”

মঈনুল হক সাকিব

পরিসংখ্যান বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

“এই বাবা উঠ,সকাল সকাল মার্কেটে যেতে না পারলে পরে রোদে কষ্ট হবে।”

“না আম্মু লাগবে না।এবার আর কিনবো না।এমনিতেই অনেক জামা কাপড় আছে। এবার তোমরা কিনো।”

“আমাদের আর সেই বয়স আছে।তোদের জন্যই তো সব।উঠ,উঠে যা।”

প্রতি বছরই আম্মু এই কথা বলতো।কিন্তু এবার যেন ভিন্ন এক পরিস্থিতি। এক অদৃশ্য অশুভ শক্তির কাছে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত। সকল মায়া, মমতা, আবেগ বিসর্জন দিয়ে সবাই আজ ঘরের মধ্যে বন্দী। এত বিজ্ঞান প্রযুক্তি দিয়েও আমরা মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারছি না।চোখের সামনে প্রিয় মানুষের মৃত্যু। তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। এমনকি জানাজার নামাজ ও দিতে পারছি না। এরকম এক পরিস্থিতিতে যখন চার দিকে মৃত্যুর গন্ধ, তখন আর কি ঈদ করবো।

ঈদ মানে আনন্দ, সম্প্রতি, সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া।কিন্তু  কোবিড এসে সকল কিছুই বন্ধ করে দিয়েছে।

এবারের ঈদ আনন্দের নয়,এবারের ঈদ বেঁচে থাকার। এবারের ঈদ ভালো খাওয়ার নয়,এবারের ঈদ অন্যকে খাওয়ানোর। এবারের ঈদ শপিং এর নয়,এবারের ঈদ মানুষ কে সাহায্য করার।এবারের ঈদ মেলামেশার নয়,এবারের ঈদ ঘরে থাকার।

আজ আমাদের অফুরন্ত বন্ধ। আমারা সবাই ঘরে থাকছি,পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছি। কিন্তু সবাই কি চেষ্টা করলে ঘরে থাকতে পারছে? ডাক্তারদেরও পরিবার আছে, তাদেরও সন্তান আছে।তারাও চায় পরিবার নিয়ে সময় কাটাক।কিন্তু আমাদের জন্যই তারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এটা কী শুধু টাকার জন্য??না,টাকা তাদের আছে।না থাকলেও পরে হবেই।তারা কাজ করে যাচ্ছে কারণ এটা তাদের কর্তব্য, এটা তাদের

দায়িত্ব। ঠিক তেমনি আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঘরে থাকা।

আসুন এই করোনা যুদ্ধে যাঁরা সম্মুখ যোদ্ধা তাদের সম্মান করি।তাদের কাজে সহযোগিতা করি।সবাই ঘরে বসে পরিবারের সাথে ঈদ পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি পরিবারকে সুস্থ রাখি।

মো.এরফান আহমেদ

নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

হাজীগঞ্জে সাংবাদিক এনায়েত মজুমদারের ভাই তাপাজ্জলের দাফন সম্পন্ন

করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা

আপডেট: ০৪:০৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মে ২০২০

মো.আজহার উদ্দিন:

“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ”। ঈদের চাঁদ দেখার সাথে সাথে টিভি চ্যানেল ও বেতারে একযোগে এই সংগীত যখন বেজে উঠে, তখন ঈদের আনন্দ,জোশ হাজার গুণে বেড়ে যায়। আবাল-বৃদ্ধ বনিতা সবার মনে এক অন্যান্য পুলক শিহরণ জাগে।

দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিম জাহানে পবিত্র ঈদুল ফিতর নিয়ে আসে এক অনাবিল আনন্দ।প্রতিবছর ঈদকে ঘিরে নানা আয়োজন,পরিকল্পনা থাকলেও এবার সকল পরিকল্পনায় হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস।এক অজানা  আতঙ্কের ভিতরে পালিত হবে এবারের ঈদ।করোনা পরিস্থিতিতে চাঁদপুর থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভিন্নধর্মী ঈদ ভাবনাগুলোকে পাঠকদের নিকট তুলে ধরা হল –

বিশ্ব জুড়ে বিরাজ করছে এক দুঃস্বপ্নের মহামারী। প্রতিদিন মৃত্যু মিছিলে যোগ হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কাঁদছে বিশ্ব, ধুকছে মানবতা!এরই মাঝে দীর্ঘ এক মাস রমযানের পর এসে গেছে মুসলিম উম্মাহার সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। তবে অন্যান্য বারের মত এবারের ঈদটা আনন্দপূর্ণ হবে না। কাটাতে হবে প্রিয়জন ছাড়া। হবে না ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়ানো, মজা, মাস্তি আর হই হুল্লোড়ে বন্ধু, আত্মীয় এবং কাছের মানুষের সাথে সময় কাটানো। তবু আল্লাহ্ তায়ালার এই কঠিন পরীক্ষাকে মেনে নিয়ে এই পবিত্র দিনে ঘরে বসে সবার মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চাই। আনন্দের মাত্রা কম হলেও সবাই পরিবারের সাথে কাটাতে পারবো খুব ভালো কতগুলো মুহূর্ত। এই করোনা পরিস্থিতিতে আমার ঈদ ভাবনাগুলো তুলে ধরলাম–

নিজে নিরাপদ থাকবো অন্যকে নিরাপদে রাখবো তাই ঘরেই অবস্থান করবো। কেনাকাটা না হয় এই ঈদে না-ই হল। তাছাড়া কত লাখ লাখ খেটে খাওয়া মানুষ আছে যারা ঈদ কী সেটাই ভুলে গেছে। তাদের কাছে এক মুঠো খাবারের লড়াই এখন সবচেয়ে বড় লড়াই। তাই এবারের ঈদে আমি আমার জমানো টাকাগুলো আমার গ্রামের হত দরিদ্র কয়েকজন মানুষের মাঝে তুলে দিব, ইনশাআল্লাহ্‌। কারণ অপরের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মধ্যেই ঈদের প্রকৃত আনন্দ। দিনটা শুরু করবো ফজরের নামাজ দিয়ে। হাত তুলে দোয়া করবো সারা বিশ্ববাসীর জন্য। সূর্য না উঠতেই ঢুঁ মারবো ফেসবুকে।  চেনা পরিচিত সবাইকে মন খুলে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবো। ঈদ নিয়ে কার কী প্লান সব কিছু জোর করে হলেও জেনে নিবো। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সবাইকে একে একে কল করবো, ঈদের বার্তা দিবো আর মন ভরে দোয়া নিবো। পেট ভরে পায়েস, সেমাই খেয়ে ঈদের সালাত আদায় করবো। পরিবারের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিবো। বাসার ভেতর ক্রিকেট আর লুডু খেলে হাসি তামাশায় মেতে উঠবো। যোহরের সালাত আদায় করে গরুর মাংস দিয়ে হবে জব্বর ভুঁড়িভোজ। টিভি ওপেন করে দেখবো পছন্দের সব প্রোগ্রাম; সাথে থাকবে পপকর্ন ভাজা আর চিপস! সাথে ছোটদের নিয়ে দুষ্টমি। এরপর আছরের নামাজ পড়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করবো করোনা আক্রান্ত ঢাকার আকাশটাকে, হাতে থাকবে সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত বই ফেলুদা সমগ্র। পড়বো আর হারিয়ে যাবো লোম হর্ষক ভাবনায়! সন্ধ্যায় হবে প্রিয়জনের সাথে অনলাইন জগতে বিস্তর আড্ডা। আশা করি পরের দিনগুলোও এভাবে কাটবে। সকলের ঈদ ভালো কাটুক (ঈদ মোবারক)

মো.শামীম হোসেন

ইংরেজি বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ইসলামি সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হলো ঈদ।দীর্ঘ এক বছরের পরিক্রমায় রমজান আত্মশুদ্ধি নিয়ে হাজির হয় প্রতিটি মুসলিমের দোরগোড়ায়। রমজান একটি ট্রেইনিং কোর্স হিসাবে কাজ করে।মুসলমানদের মাঝে নতুন করে ঈমানি চেতনা নাড়া দিয়ে উঠে। একমাসের প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকটি মুসলিমের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় খুশির জোয়ার।যা ঈদ নামেই আত্ম প্রকাশ করে।এ জোয়ার স্রোতে আমিও ভেসেছি বহুবার।পুরো বছর কাটতো জোয়ার জলে স্নান করার প্রতিক্ষায়।রমজানে এ খুশির ব্যাকুলতা আরো বৃদ্ধি পেতো।প্রতিটি ক্ষনের প্রস্হানে মনে হতো সুখের সম্রাজ্যের মৃদু হাতছানি। ঈদে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, আত্মীয়দের বাড়ি যাওয়া, পরিবারের সবার সাথে আনন্দে মেতে থাকা।এছাড়াও থাকতো অনেক উৎকন্ঠা কতো না পরিকল্পনা। পুরো পৃথিবীটা যেন ঈদের দিনে নতুন করে আনন্দের সাজে সাজতো। সময় স্রোতে অপেক্ষার অস্তিত্ব নেই।কয়েকটি দিন পরেই আবার ঈদ। তবে এবার পৃথিবীর ভুলে গেছে ঈদের সাজ। এক করোনার ভয়ানক থাবায় পৃথিবী আজ নিস্তব্ধ। তাই এবারের ঈদে খুব একটা পরিকল্পনা নেই। ঘরেই আমার পরিবারের সাথে পালন করবো। আর যতটুকু সম্ভব বাসায় থেকেই আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করবো। আসলে জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে আমরা সবাই একেকজন দায়িত্বশীল। আর দায়িত্বের জায়গা থেকে আমাদের উচিত নিজেদের জায়গায় সচেতন থেকে নিজেকে এবং অন্যকে ভালো রাখা। আগামী ঈদটা যেন কাটাতে পারি একটা সুস্থ পৃথিবীতে পুরোনো সেই আন্দের ঘনঘটায় এবং সে পর্যন্ত সবাই যেন ভালো থাকতে পারি এই দোয়াই রইলো মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে।

জাহিদ হাসান,

আরবি বিভাগ,চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ঈদ শব্দটা যতটা আনন্দের ঠিক ততটাই স্বস্তির। ঈদ মানেই তো সারাদিন বই মাথায় করে ছুটাছুটি করা বালকটির একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস। ঈদ মানেই দীর্ঘদিন বাবা-মা থেকে দুরে থাকা চাকুরীজীবি কিংবা হলে থাকা ছাত্রদের নীড়ে ফেরার অপেক্ষার অবসান। ঈদ মানেই তো পাঁচ বছরের ছোটো শিশুটার মামা বাড়িতে যাওয়ার হিড়িক। ঈদ মানেই এদিক ওদিক ছিটকে যাওয়া বন্ধুগুলোর অনেক দিন পর মিলনমেলা। ঈদ সত্যি প্রচন্ড আন্দের প্রচন্ড স্বস্তির।

কিন্তু এবারের ঈদটা বিগত বছরের ঈদগুলোর থেকে ভিন্ন। এবারের ঈদটা ভয়ের! এবার আর অনেক দিন পর নীড়ে ফিরে আসার আনন্দের ছিটেফোঁটাও নেই কারণ সবাই বিগত মাস দুয়েক ঘরেই বন্ধি আছে। আবার মুদ্রার অন্যপিঠও আছে অনেকেই লকডাউনের কারণে আটকে আছে ফিরতে পারছে না তার নীড়ে। জীবনে এই প্রথম পরিবারের সাথে ঈদ কাটানোর আনন্দটা অধরা থেকে যাবে। কষ্ট একটু তো হবে তাদের কিন্তু তাই বলে তো সচেতনতাকে বিসর্জন দেয়া যায় না। আরেকটু চিন্তা করলে কিছু কপাল পোড়া মানুষের কথা মনে পড়ে।  হুম প্রবাসদের তিন চার বছর প্রিয়জনের মুখ না দেখা প্রবাসী ভাইটার কত স্বপ্ন ছিলো এবারের ঈদ নিয়ে কিন্তু আফসোস দেশেই ফিরা হলো না তার। তার ছোট্ট ছেলেটা এবারও বাবাকে ছাড়াই ঈদ কাটাবে।  এগুলো বলে শেষ করা যাবে না।

তবে আমি নিতান্তই বর্তমানে বিশ্বাসী একজন মানুষ। অতীত কেমন ছিলো কিংবা ভবিষ্যত কেমন হবে তা নিয়ে চিন্তা আছে ঠিক কিন্তু মাথাব্যথা নেই। আমার মতে বর্তমানই সুন্দর। এবারের ঈদটা হেলায় হেলায় কাটিয়ে দিলেন ভবিষ্যতের সুন্দর ঈদের আশায় কিন্তু এমনতো হতে পারে ভবিষ্যতের ঈদটা আপনার জন্য আরও কষ্টের হতে পারে কিংবা ওই ঈদটা উপভোগের পূর্বেই আপনার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো। তাই যতটুকু সম্ভব সচেতন থেকে পরিবারের সাথে ঈদটাকে আনন্দের সহিত পালন করুন। না হয় এবারের ঈদটা বাহিরে ঘুরাঘুরিতে নয় মায়ের সাথে আড্ডায় কাটুক।

সজীব হোসাইন,

মেটারিয়ালস সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং,

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

“ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। ঈদ মানেই  ব্যস্ততায় বাধ ভেঙ্গে একবুক প্রশান্তি। প্রতিবছর  দুইটি  ঈদ সুযোগ করে দেয় সবাইকে এক হওয়ার,পরিবারের সাথে সময় কাটানোর। ধনী,গরীব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঈদের আনন্দে মেতে উঠে সবাই। দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম সাধনার  সাথেই চলতে থাকে ঈদের প্রস্তুতি। নতুন পোশাক কিনা,বাস-ট্রেন-লঞ্চে গাদাগাদি করে শিকড়ের টানে ঘরে ফেরা,ঈদের বাজার করা। ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়া, গোছল সেরে নতুন পোশাক পড়ে মিষ্টিমুখে ঈদগাহে যাওয়া,নামাজ পড়ে কুশল বিনিময় । সব মিলিয়ে আনন্দঘন মূহুর্তে প্রিয়জনদের সাথে কাটে সময়টা। কিন্তু এবার হঠাৎ করোনা ভাইরাসের বিস্তারে পুরো বিশ্ব এক ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । টানা ২ মাস ঘরবন্দী কাটছে সময়। তাই এবারের ঈদটা  অন্যরকম হতে যাচ্ছে। রোডঘাটে  শুনশান নিরবতা,নেই গাদাগাদি করে শহুরে মানুষের ঘরে ফেরার গল্প,নেই বন্ধু-বান্ধবের আড্ডাখানা,ঘরতে যাওয়ার পরিকল্পনা,নেই কেনাকাটার ব্যস্ততা। এবারই প্রথম,শহর থেকে ফিরবে না আপনজন। ঈদের নামাজটুকু ঈদগাহে গিয়ে পড়তে পারবো কিনা সন্দিহান। চারিদিকে লকডাউনের মধ্যেও বিপর্যস্ত  নিম্নবিত্তদের পাশে দাড়িয়ে,তাদের নিয়ে এবারও পার করতে চাই ঈদের দিনটা। এটাই এবারের সার্থকতা।   সবশেষে কামনা একটাই, মহান আল্লাহর কৃপায় সুস্থ হবে ধরনী,আবার আসবে ঈদ, এক হবো আমরা। আমাদের আনন্দ ছড়িয়ে পরবে শান্তিময় বিশ্বে”।

সাইফুল অনি

ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ,

নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই দুর্বিষহ দিনে আমাদের মাঝে আগমন করলো ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ খুশির সমাগম। সমগ্র বিশ্ব যেখানে পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে, সেখানে এই আনন্দময় মুহূর্ত হয়তো উঁকি দিবেনা সবার মনে।হোম কোয়ারেন্টাইনের এই দিনগুলোতে খাঁচায় বন্দী পাখির ন্যায় জীবন হয়তো কারো কাছেই সুখকর নয়। তবে এর মধ্যেই খুঁজে নিতে হবে আনন্দ।ঈদ মানেই আমরা বুঝি দীর্ঘদিন পরে সবাই যার যার গ্রামের বাড়িতে ছুটে যাবে, আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঈদ উদযাপন করবে, সর্বোপরি একটি সামাজিক মিলনমেলায় পরিণত হবে। তবে এখন কি আদৌ এসব সম্ভব! না, যেখানে বেঁচে থাকাটাই একটা চ্যালেঞ্জ সেখানে এসব আনন্দের কথা ভাবাটাও যেন আকাশ কুসুম কল্পনার শামিল।

ঈদের আনন্দ হয়তো পূর্বের বছরগুলোর ন্যায় উপভোগ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। হয়তো ঘুরতে যাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। তবে এর মধ্যেই খুঁজে বের করতে হবে আনন্দ। মৃতের সংখ্যা যেখানে তিন লক্ষাধিক, আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে, সেখানে যারা এখনো সুস্থ থেকে ঈদ উদযাপনের কথা ভাবছি তাদের তো এটাই বড় আনন্দ। সত্যিকার অর্থে বেঁচে থাকা আর সুস্থ থাকাটা সকল প্রকার আনন্দ-উদযাপনের ঊর্ধ্বে।

পরিশেষে এটাই বলবো, “ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন এবং অসহায় মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন।”

মঈনুল হক সাকিব

পরিসংখ্যান বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

“এই বাবা উঠ,সকাল সকাল মার্কেটে যেতে না পারলে পরে রোদে কষ্ট হবে।”

“না আম্মু লাগবে না।এবার আর কিনবো না।এমনিতেই অনেক জামা কাপড় আছে। এবার তোমরা কিনো।”

“আমাদের আর সেই বয়স আছে।তোদের জন্যই তো সব।উঠ,উঠে যা।”

প্রতি বছরই আম্মু এই কথা বলতো।কিন্তু এবার যেন ভিন্ন এক পরিস্থিতি। এক অদৃশ্য অশুভ শক্তির কাছে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত। সকল মায়া, মমতা, আবেগ বিসর্জন দিয়ে সবাই আজ ঘরের মধ্যে বন্দী। এত বিজ্ঞান প্রযুক্তি দিয়েও আমরা মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারছি না।চোখের সামনে প্রিয় মানুষের মৃত্যু। তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। এমনকি জানাজার নামাজ ও দিতে পারছি না। এরকম এক পরিস্থিতিতে যখন চার দিকে মৃত্যুর গন্ধ, তখন আর কি ঈদ করবো।

ঈদ মানে আনন্দ, সম্প্রতি, সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া।কিন্তু  কোবিড এসে সকল কিছুই বন্ধ করে দিয়েছে।

এবারের ঈদ আনন্দের নয়,এবারের ঈদ বেঁচে থাকার। এবারের ঈদ ভালো খাওয়ার নয়,এবারের ঈদ অন্যকে খাওয়ানোর। এবারের ঈদ শপিং এর নয়,এবারের ঈদ মানুষ কে সাহায্য করার।এবারের ঈদ মেলামেশার নয়,এবারের ঈদ ঘরে থাকার।

আজ আমাদের অফুরন্ত বন্ধ। আমারা সবাই ঘরে থাকছি,পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছি। কিন্তু সবাই কি চেষ্টা করলে ঘরে থাকতে পারছে? ডাক্তারদেরও পরিবার আছে, তাদেরও সন্তান আছে।তারাও চায় পরিবার নিয়ে সময় কাটাক।কিন্তু আমাদের জন্যই তারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এটা কী শুধু টাকার জন্য??না,টাকা তাদের আছে।না থাকলেও পরে হবেই।তারা কাজ করে যাচ্ছে কারণ এটা তাদের কর্তব্য, এটা তাদের

দায়িত্ব। ঠিক তেমনি আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঘরে থাকা।

আসুন এই করোনা যুদ্ধে যাঁরা সম্মুখ যোদ্ধা তাদের সম্মান করি।তাদের কাজে সহযোগিতা করি।সবাই ঘরে বসে পরিবারের সাথে ঈদ পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি পরিবারকে সুস্থ রাখি।

মো.এরফান আহমেদ

নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ।