অনলাইন ডেস্ক:
কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই দক্ষ শ্রমিক হিসেবে জাপানে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য। সম্প্রতি জাপানের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ক একটি চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ।
২০১৫ সালে জাপানে শ্রমের চাহিদা পূরণে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের কঠোর অভিবাসন নীতি শিথিল করে পার্লামেন্টে নতুন আইন পাস করা হয়। সেখানে বলা হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ লাখ ৪৫ হাজার শ্রমিক নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকেও শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি সই হয় দু’দেশের সরকারের মধ্যে। তবে এই চুক্তি অনুযায়ী কী পরিমাণ জনশক্তি বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য জানানো হয়নি।
প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান বলেন, ‘কী পরিমাণ শ্রমিক নেবে সেটা নির্ভর করবে আমাদের প্রস্তুতির ওপর। খুব বেশি পরিমাণ একসঙ্গে নেবে না। আস্তে আস্তে নেবে।’ বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, চীন, নেপাল, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও ফিলিপাইন থেকে জনশক্তি নেবে জাপান। প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, নতুন এই চুক্তির আওতায় দক্ষ শ্রমিক হিসেবে জাপানে যেতে হলে কোনো ধরনের অর্থ খরচ করতে হবে না। তবে অনুমোদিত সংস্থাগুলো থেকে জাপানি ভাষায় দক্ষতা অর্জনে কিছু পরিমাণ ফি দিতে হবে।
তবে পেশার দক্ষতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আগপর্যন্ত কাউকে ভাষা শেখার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে না। পেশাগত দক্ষতা এবং ভাষা শিক্ষা শেষে চূড়ান্ত বাছাই অনুষ্ঠিত হবে জাপান দূতাবাসে। সেখানে তাদের অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে সব ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
যেসব খাতে জনশক্তি নেবে জাপান
মোট ১৪টি খাতে লোক নেবে জাপান। এর মধ্যে কেয়ার গিভার অর্থাৎ যারা হাসপাতালে নার্স বা প্রবীণ নিবাসে সেবা দান করবেন এমন দক্ষ জনশক্তি প্রাধান্য পাবে।
রৌনক জাহান বলেন, জাপানে কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বড় খাত উন্মোচিত হচ্ছে। কারণ এ খাতে বিভিন্ন ধরনের উপখাত রয়েছে যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা নিয়োগ পেতে পারে।
এ দুটি খাত ছাড়াও কৃষি শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা, ইলেকট্রিক, ইলেকট্রনিকস, জাহাজ শিল্প এবং গাড়ি নির্মাণ খাতসহ মোট ১৪টি খাতে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
ভাষা শিক্ষা
জাপানে যেতে হলে জাপানি ভাষা জানতে হবে। এজন্য জাপানি ভাষার এন ফোর লেভেল পর্যন্ত জানতে হবে। জাপানি ভাষায় এন ফাইভ হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়। এর পরের ধাপ হচ্ছে এন ফোর লেভেল। অর্থাৎ জাপানি ভাষায় বলতে, লিখতে ও পড়তে জানতে হবে।
জাপানে যেতে হলে জাপানি ভাষা জানার সর্বনিম্ন স্ট্যান্ডার্ড এটি। ভাষা শিক্ষার সার্টিফিকেট পেতে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
পেশাগত দক্ষতা
উল্লেখিত খাতে দক্ষ শ্রমিকরাই কেবল জাপানে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। জাপানে যেতে হলে প্রথমেই দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হবে। দক্ষতায় টিকে গেলে শুরু হবে ভাষা শেখা। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যারা এরই মধ্যে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন এবং যাদের পেশাগত কাজের সার্টিফিকেট রয়েছে তারা দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গণ্য হবেন। তবে যাদের দক্ষতা রয়েছে কিন্তু সার্টিফিকেট নেই তারা পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট নিতে পারবেন।
শারীরিক যোগ্যতা
দক্ষ শ্রমিক হিসেবে জাপানে যেতে হলে বয়স কোনোভাবেই ৩২ বছরের বেশি হওয়া যাবে না। স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো ধরনের রোগ রয়েছে কি-না সেটিও নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া চারিত্রিক সনদ অর্থাৎ কোনো আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ রয়েছে কি-না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
আবেদনের পদ্ধতি
প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাপানে শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি।
এছাড়া জাপান সরকারের সঙ্গে হওয়া নতুন জনশক্তি রপ্তানি চুক্তির আওতায় এরই মধ্যে ১১টি সংস্থাকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সম্ভাব্য আয়
সব প্রক্রিয়া শেষ করে জাপানে যাওয়ার পর ভালো বেতনে কাজের সুযোগ রয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শ্রমিকদের বেতন নির্ভর করবে কোন শ্রমিক কোন ধরনের কাজে নিয়োগ পাচ্ছে তার ওপর।
তবে একজন দক্ষ শ্রমিক হিসেবে জাপানে যাওয়ার পর কাজের ধরন ভেদে প্রতি মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় দেড় থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের সুযোগ রয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম।