হাজীগঞ্জে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে বালু ব্যবসা, অস্তিত্বের সংকটে কৃষকরা

  • আপডেট: ১০:০০:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • ০ Views

♣  পরিবর্তন হয়েছে নদীর গতিপথ।
  বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী।
  ভাঙ্গন অব্যাত থাকায় ভিটে-মাটি হারানোর আশংকা স্থানীয়দের।
  এক ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন কৃষক।
♣  হুমকির মূখে উপজেলা ভূমি অফিস।
বালু মহাল সরাতে গণস্বাক্ষর।

গুটি কয়েকজন বেপরোয়া বালু ব্যবসায়ীদের থাবায় অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের কৃষকরা। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে একরের পর একর কৃষি জমি বিলিন হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ভাঙ্গন অব্যাহৃত থাকায় ভিটে-মাটিহীন হয়ে পড়ছেন নদী পাড়ের মানুষ। বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী।

ডাকাতিয়া নদীর চর হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী কৃষি মাঠ। এক সময় নদীর দক্ষিণ পাড়ের এ চরে ফসলি জমিতে ইরি-বোরো ধানের পাশাপাশি ফলতো বাঙ্গি, শসা ও বিভিন্ন ফল জাতীয় ফসলসহ শাক-সবজি। অথচ এখন সেই মাঠে ইরি-বোরো ধানের চাষ ছাড়া অন্য কোন চাষাবাদ নেই।

গত কয়েক বছর ধরে বালু ব্যবসার কারণে নদীর পাড়ে প্রায় সহ¯্রাধীক শতাংশ কৃষিজমি নদীর বুকে বিলিন হওয়ায় এন্নাতলীসহ নদী সংশ্লিষ্ট গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক ইতিমধ্যে কৃষিজমি হীন হয়ে পড়েছেন এবং পরিবর্তন হয়েছে, নদীর গতিপথ। ভাঙ্গন অব্যাহৃত থাকায় কৃষি জমির পাশাপাশি অনেকের ভিটে-মাটি এখন অস্বিস্তের সংকটে।

এছাড়াও বাতাসে বালু ওড়ে ফল ও শাক-সবজি গাছের উপর বালু পড়ার কারণে বেশ কিছু কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নদীর উত্তর পাড়ে রয়েছে, উপজেলা ভূমি অফিস (সহকারী কমিশনারের কার্যালয়)। পুরানো এই কার্যালয়টির ভবন এমনিতেই জরাজীর্ণ, তার উপর প্রতিনিয়ত নদীর ভাঙ্গনে ভবনটিও হুমকির মুখে।

জানা গেছে, ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড় হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৯নং ওয়ার্ড আলীগঞ্জ এলাকা এবং দক্ষিণ পাড় বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রাম। গত কয়েক বছর ধরে ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড়, আলীগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি বালু মহাল গড়ে উঠেছে। মহালগুলো থেকে বালু ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে নিজ ও পাশবর্তী জেলার সর্বত্র।

নৌপথে ট্রলার যোগে বালু পরিবহন করে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু মহালে স্তুফ করে রাখা হয়। এর মধ্যে এন্নাতলী মাঠ সংলগ্ন উপজেলা ভূমি অফিসের পূর্ব পাশে ডাকাতিয়া নদীর পূর্বপাড়ে তিনটি ড্রেজার রয়েছে। এখানে প্রতিনিয়ত বালু আনলোড করা হয় এবং লোড ও আনলোডকৃত ১৫/২০টি ট্রলার নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থান করে থাকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু আনলোডে ট্রলারগুলো যখন ঘোরানো হয় এবং নদীর পূর্বপাড়ে ট্রলারগুলোর অবস্থানের কারণে বালুমহালের ট্রলার ও চলমান ট্রলারগুলো নদীর পশ্চিম অংশ দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে ট্রলারের ঘুর্ণিয়মান পাখায় নদীর তলদেশের মাটি ক্ষয় হয়। ফলে নদীর পশ্চিম পাড় ভেঙ্গে জমিগুলো নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে।

চলতি বছর নদী ভাঙ্গনে এন্নাতলী কৃষি মাঠের একমাত্র সেচ পাম্পটিও ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীদের কৃষকদের ক্ষোভের মুখে বালু ব্যবসায়ীরা নতুন করে সেচ পাম্পটি স্থাপন করে দিতে বাধ্য হন। ওই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বালু ব্যবসায়ীদের প্রভাবে এতো বছর কথা বলার সাহস পায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

গত ৫ আগস্ট, সরকার পতনের পর ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বলার সাহস ও সুযোগ হয়েছে। ইতিমধ্যে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, হচ্ছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখিন, তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। আর তারা বাপ-দাদার ভিটে মাটি ও কৃষি জমি হারাতে চান না। হয়তো বালু ব্যবসা থাকবে, নয়-তো কৃষক। এখন সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

তথ্যমতে, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন এলাকায় এসব বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এক বছরের (বাংলা সন ১৪৩২) জন্য পৌর ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড এলাকার আলীগঞ্জ-এনায়েতপুর বালুঘাট ও সংযোগ বালুঘাট সমূহ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় সরকারি মূল্যে ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

হিসাবমতে প্রতিটি বালু মহাল গড়ে ৫০/৫৫ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। অথচ ইতিমধ্যে প্রায় কোটি টাকারও বেশি মূল্যের জমি নদীর বুকে বিলিন হয়েছে এবং এখনো নদী ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে। এতে করে একদিকে কৃষি জমি হারিয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছেন কৃষকরা, অপরদিকে বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী।

সচেতনমহল জানান, কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবার। বালু পড়ে এবং গভীরতা কম হওয়ায় ট্রলারের ঘুর্নিয়মান পাখায় নদীর পানি ঘোলাটে হয়ে যায়। এতে সূর্যের আলো পানির তলদেশে পৌঁছাতে পারে না। ফলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনচক্র ব্যাহত হয়। মাছের প্রজনন কমে যায় এবং নদীর জীববৈচিত্র নষ্ট হয়।

এদিকে গত ৪ এপ্রিল, শুক্রবার বিকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ এন্নাতলী গ্রামের কৃষকরা বালু ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের সাথে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তাকে ড্রেজার সরানোর অনুরোধ করেন এলাকাবাসী। তখন তিনি পরে বিষয়টি জানাবেন। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ পার হলেও তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি বলে স্থানীয়রা জানান। তাই, বালু মহাল সরাতে গণস্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।

ওই বৈঠকে জানা গেছে, উপস্থিতির মধ্যে হুমায়ুন পাটওয়ারীর ২৪ শতাংশ, বিল্লাল পাটওয়ারীর ২৪ শতাংশ, রশিদ বেপারীর ১২ শতাংশ, আউয়াল মিয়াজির ৮ শতাংশ, আব্দুল হক মিয়াজীর ৮ শতাংশ, হাসানের ৬ শতাংশ, কাউছারের ৬ শতাংশ, আজিজ মিয়াজী ৮ শতাংশ, নুরু হাজীর ১২ শতাংশ, আলী আজ্জম বেপারীর ২৪ শতাংশ, ফখরুল মিয়াজী ১৮ শতাংশ, আমির হোসেনের ১২ শতাংশ, হাবিবুর রহমানের ১২ শতাংশ।

মোস্তফা মিয়াজী ৬ শতাংশ, মাহাবুব মিয়াজীর ৬ শতাংশ, আব্দুল হাই মিয়াজীর ৬ শতাংশ, মোস্তাফা মিয়াজীর ৬ শতাংশ, আকার মিয়াজীর ৬ শতাংশ, জাহাঙ্গীর মিয়াজির ১২ শতাংশ, মোজাম্মেল মিয়াজীর ১২ শতাংশ, আরিফ মিয়াজীর ৯ শতাংশ,হাসান মিয়াজীর ৬ শতাংশ ও রাশেদ মিয়াজী ৬ শতাংশ জমি নদীর বুকে বিলিন হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, ভিটে-মাটি হারিয়ে তারা নিঃস্ব হলেও কোটিপতি হচ্ছে বালু ব্যবসায়ী।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে একজন ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক জানান, এন্নাতলির চর এক ফসলি মাঠ। এই এক ফসল দিয়েই গ্রামের অনেকের জীবন-জীবিকা। অথচ বালু ব্যবসার কারণে প্রায় এক হাজার শতাংশ জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে এবং নদীর ভাঙ্গন অব্যাহৃত আছে। এতে অনেকেই জমি ও ভূমিহীন হয়েছেন।

এদিকে কথা হয় বালু ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমার জমিতে বালু মহাল স্থাপন ও ড্রেজার বসিয়ে বালু ব্যবসা করছি। তাছাড়া এখানে আমি একা না, অনেকেই ব্যবসা করছেন। কথা বললে সবার সাথে বলতে হবে এবং কোন সিদ্ধান্ত নিলে সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এখানে প্রায় ২০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করে ব্যবসা করছি। বললেই-তো ব্যবসা সরিয়ে নেওয়া যায় না। যদি আমি একা ব্যবসা করতাম। তাহলে আমার বালু মহাল আমি সরিয়ে নিতাম।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান বলেন, বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নদীতে ড্রেজার স্থাপন কিংবা ট্রলার রাখার বিষয়ে কোন ইজারা বা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআই প্রধান

হাজীগঞ্জে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে বালু ব্যবসা, অস্তিত্বের সংকটে কৃষকরা

আপডেট: ১০:০০:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

♣  পরিবর্তন হয়েছে নদীর গতিপথ।
  বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী।
  ভাঙ্গন অব্যাত থাকায় ভিটে-মাটি হারানোর আশংকা স্থানীয়দের।
  এক ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন কৃষক।
♣  হুমকির মূখে উপজেলা ভূমি অফিস।
বালু মহাল সরাতে গণস্বাক্ষর।

গুটি কয়েকজন বেপরোয়া বালু ব্যবসায়ীদের থাবায় অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের কৃষকরা। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে একরের পর একর কৃষি জমি বিলিন হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ভাঙ্গন অব্যাহৃত থাকায় ভিটে-মাটিহীন হয়ে পড়ছেন নদী পাড়ের মানুষ। বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী।

ডাকাতিয়া নদীর চর হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী কৃষি মাঠ। এক সময় নদীর দক্ষিণ পাড়ের এ চরে ফসলি জমিতে ইরি-বোরো ধানের পাশাপাশি ফলতো বাঙ্গি, শসা ও বিভিন্ন ফল জাতীয় ফসলসহ শাক-সবজি। অথচ এখন সেই মাঠে ইরি-বোরো ধানের চাষ ছাড়া অন্য কোন চাষাবাদ নেই।

গত কয়েক বছর ধরে বালু ব্যবসার কারণে নদীর পাড়ে প্রায় সহ¯্রাধীক শতাংশ কৃষিজমি নদীর বুকে বিলিন হওয়ায় এন্নাতলীসহ নদী সংশ্লিষ্ট গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক ইতিমধ্যে কৃষিজমি হীন হয়ে পড়েছেন এবং পরিবর্তন হয়েছে, নদীর গতিপথ। ভাঙ্গন অব্যাহৃত থাকায় কৃষি জমির পাশাপাশি অনেকের ভিটে-মাটি এখন অস্বিস্তের সংকটে।

এছাড়াও বাতাসে বালু ওড়ে ফল ও শাক-সবজি গাছের উপর বালু পড়ার কারণে বেশ কিছু কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নদীর উত্তর পাড়ে রয়েছে, উপজেলা ভূমি অফিস (সহকারী কমিশনারের কার্যালয়)। পুরানো এই কার্যালয়টির ভবন এমনিতেই জরাজীর্ণ, তার উপর প্রতিনিয়ত নদীর ভাঙ্গনে ভবনটিও হুমকির মুখে।

জানা গেছে, ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড় হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৯নং ওয়ার্ড আলীগঞ্জ এলাকা এবং দক্ষিণ পাড় বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রাম। গত কয়েক বছর ধরে ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড়, আলীগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি বালু মহাল গড়ে উঠেছে। মহালগুলো থেকে বালু ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে নিজ ও পাশবর্তী জেলার সর্বত্র।

নৌপথে ট্রলার যোগে বালু পরিবহন করে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু মহালে স্তুফ করে রাখা হয়। এর মধ্যে এন্নাতলী মাঠ সংলগ্ন উপজেলা ভূমি অফিসের পূর্ব পাশে ডাকাতিয়া নদীর পূর্বপাড়ে তিনটি ড্রেজার রয়েছে। এখানে প্রতিনিয়ত বালু আনলোড করা হয় এবং লোড ও আনলোডকৃত ১৫/২০টি ট্রলার নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থান করে থাকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু আনলোডে ট্রলারগুলো যখন ঘোরানো হয় এবং নদীর পূর্বপাড়ে ট্রলারগুলোর অবস্থানের কারণে বালুমহালের ট্রলার ও চলমান ট্রলারগুলো নদীর পশ্চিম অংশ দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে ট্রলারের ঘুর্ণিয়মান পাখায় নদীর তলদেশের মাটি ক্ষয় হয়। ফলে নদীর পশ্চিম পাড় ভেঙ্গে জমিগুলো নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে।

চলতি বছর নদী ভাঙ্গনে এন্নাতলী কৃষি মাঠের একমাত্র সেচ পাম্পটিও ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীদের কৃষকদের ক্ষোভের মুখে বালু ব্যবসায়ীরা নতুন করে সেচ পাম্পটি স্থাপন করে দিতে বাধ্য হন। ওই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বালু ব্যবসায়ীদের প্রভাবে এতো বছর কথা বলার সাহস পায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

গত ৫ আগস্ট, সরকার পতনের পর ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বলার সাহস ও সুযোগ হয়েছে। ইতিমধ্যে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, হচ্ছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখিন, তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। আর তারা বাপ-দাদার ভিটে মাটি ও কৃষি জমি হারাতে চান না। হয়তো বালু ব্যবসা থাকবে, নয়-তো কৃষক। এখন সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

তথ্যমতে, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন এলাকায় এসব বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এক বছরের (বাংলা সন ১৪৩২) জন্য পৌর ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড এলাকার আলীগঞ্জ-এনায়েতপুর বালুঘাট ও সংযোগ বালুঘাট সমূহ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় সরকারি মূল্যে ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

হিসাবমতে প্রতিটি বালু মহাল গড়ে ৫০/৫৫ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। অথচ ইতিমধ্যে প্রায় কোটি টাকারও বেশি মূল্যের জমি নদীর বুকে বিলিন হয়েছে এবং এখনো নদী ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে। এতে করে একদিকে কৃষি জমি হারিয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছেন কৃষকরা, অপরদিকে বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী।

সচেতনমহল জানান, কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবার। বালু পড়ে এবং গভীরতা কম হওয়ায় ট্রলারের ঘুর্নিয়মান পাখায় নদীর পানি ঘোলাটে হয়ে যায়। এতে সূর্যের আলো পানির তলদেশে পৌঁছাতে পারে না। ফলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনচক্র ব্যাহত হয়। মাছের প্রজনন কমে যায় এবং নদীর জীববৈচিত্র নষ্ট হয়।

এদিকে গত ৪ এপ্রিল, শুক্রবার বিকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ এন্নাতলী গ্রামের কৃষকরা বালু ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের সাথে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তাকে ড্রেজার সরানোর অনুরোধ করেন এলাকাবাসী। তখন তিনি পরে বিষয়টি জানাবেন। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ পার হলেও তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি বলে স্থানীয়রা জানান। তাই, বালু মহাল সরাতে গণস্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।

ওই বৈঠকে জানা গেছে, উপস্থিতির মধ্যে হুমায়ুন পাটওয়ারীর ২৪ শতাংশ, বিল্লাল পাটওয়ারীর ২৪ শতাংশ, রশিদ বেপারীর ১২ শতাংশ, আউয়াল মিয়াজির ৮ শতাংশ, আব্দুল হক মিয়াজীর ৮ শতাংশ, হাসানের ৬ শতাংশ, কাউছারের ৬ শতাংশ, আজিজ মিয়াজী ৮ শতাংশ, নুরু হাজীর ১২ শতাংশ, আলী আজ্জম বেপারীর ২৪ শতাংশ, ফখরুল মিয়াজী ১৮ শতাংশ, আমির হোসেনের ১২ শতাংশ, হাবিবুর রহমানের ১২ শতাংশ।

মোস্তফা মিয়াজী ৬ শতাংশ, মাহাবুব মিয়াজীর ৬ শতাংশ, আব্দুল হাই মিয়াজীর ৬ শতাংশ, মোস্তাফা মিয়াজীর ৬ শতাংশ, আকার মিয়াজীর ৬ শতাংশ, জাহাঙ্গীর মিয়াজির ১২ শতাংশ, মোজাম্মেল মিয়াজীর ১২ শতাংশ, আরিফ মিয়াজীর ৯ শতাংশ,হাসান মিয়াজীর ৬ শতাংশ ও রাশেদ মিয়াজী ৬ শতাংশ জমি নদীর বুকে বিলিন হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, ভিটে-মাটি হারিয়ে তারা নিঃস্ব হলেও কোটিপতি হচ্ছে বালু ব্যবসায়ী।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে একজন ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক জানান, এন্নাতলির চর এক ফসলি মাঠ। এই এক ফসল দিয়েই গ্রামের অনেকের জীবন-জীবিকা। অথচ বালু ব্যবসার কারণে প্রায় এক হাজার শতাংশ জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে এবং নদীর ভাঙ্গন অব্যাহৃত আছে। এতে অনেকেই জমি ও ভূমিহীন হয়েছেন।

এদিকে কথা হয় বালু ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমার জমিতে বালু মহাল স্থাপন ও ড্রেজার বসিয়ে বালু ব্যবসা করছি। তাছাড়া এখানে আমি একা না, অনেকেই ব্যবসা করছেন। কথা বললে সবার সাথে বলতে হবে এবং কোন সিদ্ধান্ত নিলে সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এখানে প্রায় ২০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করে ব্যবসা করছি। বললেই-তো ব্যবসা সরিয়ে নেওয়া যায় না। যদি আমি একা ব্যবসা করতাম। তাহলে আমার বালু মহাল আমি সরিয়ে নিতাম।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান বলেন, বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নদীতে ড্রেজার স্থাপন কিংবা ট্রলার রাখার বিষয়ে কোন ইজারা বা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।