নিজস্ব প্রতিনিধি:
মাদকের জোয়ারে ভাসছে রাজারাগাঁও। ভয়াবহ মাদকের ছোবলে উঠতি বয়সের কিশোর-যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে নানান অপরাধে। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের পরও মাদকের ভয়াবহতা কমছে না হাজীগঞ্জ উপজেলার ১নং রাজারগাঁও ইউনিয়নে। মাদকের করালগ্রাসে ভবিষ্যৎ অনিচ্ছয়তার পথে অনেক মেধাবীর শিক্ষার্থীর। উপজেলার দূরবর্তী এবং সীমান্ত এলাকা হওয়ায় মাদকের অভায়শ্রমে পরিণত হয়েছে। গ্রামের রাস্তা-ঘাট, দোকান-পাট, বাড়ির আঙ্গিনা, অলিগলিতেও এখন মাদকের ছড়াছড়ি। ভয়াবহ এ মরণনেশার বিষে নীল হচ্ছে বহু মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবন। অকালেই ঝড়ে পড়ছে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত কর্ণধাররা। দিন দিনই বাড়ছে মাদকের আগ্রাসন।
প্রায় ১৫ থেকে ২৫ বয়সের ছেলেরা মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ওই এলাকায় কথিত বড় ভাইদের ছত্র-ছায়ায় মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে।
এ ইউনিয়নে অভিনব কায়দায় মাদকায় মাদকের সর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মাদক বিক্রেতাদের নজরে আসে স্কুল কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। প্রথমে বিনামূল্যে মাদক সেবন করায়। এরপর ধীরে ধীরে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দিনমজুর, শ্রমিক, সিএনজির ড্রাইভার, কর্মজীবিরা। এর ফলে মাদক-কারবারিরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মাদক সেবনের টাকা জোগান দিতে গিয়ে উঠতি বয়সের কিশোর-যুকবরা জড়িয়ে পড়ছে ছুরি ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সাথে।
গত চার মাস আগে পশ্চিম রাজারগাঁও খান বাড়ির শাহ আলমের ছেলে সিপনকে ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয় মাদক সিন্ডিকেটের একটি চক্র। মাদকের কবলে পড়ে এসব ছেলে মাদকের টাকার জন্য বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের মারধর করাসহ নানা ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। এদের মধ্যে মেনারপুর প্রধানিয়া বাড়ির মো. বিল্লাল হোসেনের ছেলে সিএনজি চালক মো. রাব্বী হোসেন, কামাল হাজী বাড়ির মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে সিএনজি চালক মোবারক হোসেন শিশির, ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রামের হোন্ডা গেরেজ মিস্ত্রি মো. সোহাগ এদের নেতৃত্বে নিরব-নিভৃতে চলছে উঠতি বয়সের যুবকদের মাদকের রমরমা বাণিজ্য।
এ ছাড়াও মাদক বিক্রয় ও সেবনের সাথে জড়িয়ে পড়ছে ওই ইউনিয়নের পশ্চিম রাজারগাঁও বদ্দম বাড়ির আবুল বাসারের ছেলে মো. রাকিব হোসেন, বেপারি বাড়ির ইদ্রিস বেপারির ছেলে মো. ফয়েজ হোসেন, নোয়া বাড়ির হারুন বেপারী ছেলে মোহাম্মদ হাবিব হোসেন এবং মৌলভী বাড়ির বিল্লাল মেম্বারের ছেলে মোঃ তানজীল হোসেন পূর্ব রাজারগাঁও কলার বেপারী বাড়ির মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের ছেলে সিএনজি ড্রাইভার মোঃ শাহাদাত হোসেন, বদ্দম বাড়ির মোঃ কাওছার আলমের ছেলে মোঃ পারভেজ হোসেন, ওই গ্রামের অতুল কুরির ছেলে টুটুল কুরি, মিজানুর রহমানের ছেলে ফজলে রাব্বী। এদিকে পশ্চিম গ্রামে মাদকের চালান মতলব উপজেলা থেকে হোন্ডা গেরেজ মিস্ত্রি নাহিদ নামের একটি যুবক নিয়ে আসে বলে স্থানীয়রা জানায়। পশ্চিম রাজারগাঁও গ্রামের স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বিনামূলে মাদক সেবন করায়। এরপর মাদকে আসক্ত শিক্ষার্থীও যুবকরা মাদকের টাকা জোগান দিতে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, আমার সন্তান পড়া-শুনা করছে। উঠতি বয়সের কিছু বখাটে ছেলেরা ডেকে নিয়ে বিনামূলে মাদক সেবক করায় আমি এদের থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অনত্রে নিয়ে পড়াশুনা করাতে গিয়েও ব্যর্থ হতে হয়েছে। তারা আমার সন্তানকে কৌশলে ফুঁসলি নিয়ে আসে। আমার সন্তানের মত বহু মায়ের সন্তান এদের স্পর্শে এসে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
সুশিল সমাজ প্রতিনিধিরা বলছেন, মাদকের ছোবলে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে যুবসমাজ। তাই, এখন-ই তাদের ফিরিয়ে আনতে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। এ বিষয়ে আশু-পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, মাদকের বিরদ্ধে কোন আপস নেই। প্রতিনিয়নত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।