নিজস্ব প্রতিনিধি॥
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের নওহাটা ফাজিল (স্নাতক) মাদ্রাসায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালনে ব্যবহৃত ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নেই। এমনকি ব্যানারে জাতির জনকের নামটি পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি।
এ ছাড়াও দিবসটি পালনে যে ব্যানারটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেই ব্যানারটি ছিল ৪১তম শাহদাৎবার্ষিকীর ব্যানার। যেখানে ‘৪১’ এর ১ কে ৪ বানিয়ে ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে ব্যবহার করা হয়েছে। শোক পালনে উপস্থিত ছিলেন না, মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু যোফর মো. আবু বকর সিদ্দিক ও উপাধ্যক্ষ মাও. নুরুল আমিন।
গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে নওহাটা ফাজিল (স্নাতক) মাদ্রাসায় আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের ব্যানারে এই ব্যবহার করতে দেখা যায়। অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন, সহকারি অধ্যাপক হযরত আলী।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ এবং মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে এই ব্যানারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। “বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সর্ববৃহৎ বিদ্যাপিঠে এ ধরনের কর্মকান্ড মেনে নেওয়া যায় না বলে তারা জানান।
আরো পড়ুন: রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
বিষয়টি জানার জন্য গত বৃহস্পতিবার মাদরাসা কার্যালয়ে সরেজমিন পরিদর্শন গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসাটি বন্ধ রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটি থাকাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও (ঈদের দিন ও ঈদের পরদিন ছাড়া) অফিস কার্যালয় খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এ সময়ে রোষ্টার অনুযায়ী একজন করে শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। অথচ এ ক্ষেত্রেও মাদরাসাটি সরকারি নির্দেশনা মানে নি।
পরে খোঁজ নিয়ে মাদরাসার অফিস সহকারি ইমরান হোসেন কাছে গিয়ে শোক দিবসের ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়াও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকেও মাদরাসা থেকে ই-মেইলে পাঠানো ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়। সবগুলো ছবি এক ও অভিন্ন। সব ছবির মধ্যেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাম ও ছবি নেই এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও ছবি নেই।
এ ছাড়াও ব্যানারটি ৪১তম শাহদাৎবার্ষিকী অনুষ্ঠানের। যা সংশোধন করে পরবর্তীত বছরগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ছিলেন না, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এমনিক শিক্ষার্থীরাও। ছবিতে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষক ও হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। অথচ যাদের জন্য এই কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য সেই শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল না। এতে প্রতিয়মান হয় যে, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জাতির জনকের নাম ও ছবি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার ছাড়াই প্রতিবছর দ্বায়সারাভাবে শোক দিবস পালন করে থাকে।
বিষয়টি স্বীকার করে মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক শাহআলম জানান, ব্যানারটি কয়েক বছর আগের। এ বছর সংশোধন করে ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া অনুষ্টানে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছাড়া অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান। অথচ ছবিতে তা (শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির) প্রমান হয়নি।
মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু জোফর মো. আবু বকর সিদ্দিক এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ওই দিন (১৫ আগষ্ট) আমি অসুস্থ ছিলাম এবং ভাইস প্রিন্সিপালও অসুস্থ ছিলেন। তাই প্রোগ্রামে উপস্থিত হতে পারেন নি। ব্যানারে জাতির জনকের নাম ও ছবি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি না থাকার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে এমনটি হবে না।
এ দিকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের ছুটিতে মাদরাসা অফিস খোলা রাখা এবং ওই সময়ে রোষ্টার অনুযায়ী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন বিষয়ে তিনি সদুত্তর দিতে পারেন নি।
এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি মাহবুবুল আলম চুননু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে এ ধরণের ভুল, মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি অত্যন্ত দূঃখজনক। আমরা অধক্ষের অপসারণ দাবী করছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী দ্বায়সারা ভাবে উদযাপনের সুযোগ নেই। যাকে নিয়ে শোক, ব্যানারে যদি তার নাম, ছবি না থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে আর কি জানবে ? এখানে জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে নাই। সুতরাং দ্বায়সারা প্রোগ্রাম আমাদের পরিহার করা উচিত। যারা এর সাথে জড়িত তাদের জবাবদিহীতার মধ্যে আনা হোক বলে তিনি জানান।
মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউছুফ পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। যা অত্যন্ত দূঃখজনক। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের সভায় উত্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিন্টু জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আইসিটি ও শিক্ষার সাথে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়–য়া বলেন, ‘ঘটনাটি আমার নজরে এসেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।