প্রতিদিন গড়ে সহস্রাধীক রোগীর সেবা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম

একশ শয্যায় উন্নীত হচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাড়বে চিকিৎসা সেবার মান

বৃহৎ পরিসরে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে : ডা. গোলাম মাওলা নঈম

এক সময় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের যখন অনিহা বেড়ে হতাশায় পরিণত হতো, ঠিক সেই সময়ে গ্রামীণ জনপদে সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ধারাবাহিকভাবে সেবা দিয়ে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা, প্রসুতি মায়েদের নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারী এবং ওষুধ সরবরাহ করে রোগীদের ভীড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে হাসপাতালটির।

হাসপাতালটিতে উপজেলার ৪ লক্ষ জনগোষ্ঠি সেবা নিয়ে থাকে। এ ছাড়াও হাসপাতালটি জেলার মধ্যবর্তী স্থান ও কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এবং রেলপথ, স্থলপথ ও নদীপথের সংযোগ থাকার কারনে পাশ্ববর্তী উপজেলা কচুয়া, শাহরাস্তী, ফরিদগঞ্জ, মতলব ও চাঁদপুর সদর এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নের জনগণ স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন এই হাসপাতালে।

হাজীগঞ্জসহ প¦ার্শবতী উপজেলার মানুষের চিকিৎসার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অবকাঠামোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নিয়ম শৃঙ্খলার উন্নতি ও সেবার মানে ধারাবাহিক পরিবর্তন আসায় সেবাগ্রহিতা ও তাদের পরিবারের লোকজন সন্তুষ্ট। এতে করে রোগীদের অতিরিক্ত ভীড়ের কারণে হিমশীম খেতে হয় চিকিৎসকদের। এছাড়াও এক উপজেলার বরাদ্দকৃত ঔষধ অতিরিক্ত রোগীদের মাঝে বিলির কারণে ঔষধ সংকটেও পড়তে হয়।

আর এই সংকট উত্তরণে সুখবর পেলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও হাজীগঞ্জবাসী। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মাওলা নঈমের একান্ত প্রচেষ্টায় ও উদ্যোগে একশ শয্যায় উন্নীত হতে যাচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এ বিষয়ে গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে প্রেরণকৃত এক পত্রের আলোকে এর অগ্রগতি বিষয়ে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রধান স্থপতি আসমা জাহানের স্বাক্ষরিত ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণয়নাধীন ৫ সেক্টর কর্মসূচীর আওতাধীন চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ হতে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ এর প্রস্তাবিত নকশা (সাইট প্ল্যান ও হাসপাতাল ভবন) প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নকশায় ১২ তলা তিনটি ভবন ও ৮তলা ভিত্তিসহ ৭ তলা একটি হাসপাতাল ভবনের প্রস্তাব করা হয়।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে একটি ১২ তলা ভবনের নকশা অনুমোদনের লক্ষ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষরিত করে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ডা. মো. গোলাম মাওলা নঈম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী যোগদানের পর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১’শ শয্যায় উন্নীতকরণে উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

এর শর্তাবলী পূরণ ও প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে হাসপাতালটি ১’শ শয্যায় উন্নীতকরণে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়। এবং গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে প্রেরণকৃত এক পত্রের আলোকে এর অগ্রগতি বিষয়ে জানা যায়। যা উপজেলাবাসীর জন্য সুখবর। হাসপাতালটি ১’শ শয্যায় উন্নীত হলে চিকিৎসক’সহ প্রয়োজনীয় লোকবল, পর্যাপ্ত ঔষধ ও সেবার পরিধি বৃদ্ধি পাবে।

প্রসঙ্গত, ৬.৬৩ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। এর মধ্যে ডা. আলী নূর বশির আহমেদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর হাসপাতালটির পরিবেশ, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সেবার মান বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে ডা. আনোয়ারুল আজিম ও এসএম চিশতীয় দায়িত্ব পালন করে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহৃত রাখেন।

এরপর ডা. মো. গোলাম মাওলা নঈম দায়িত্ব গ্রহণ করে হাসপাতালটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। তিনি বন্ধ অপারেশন থিয়েটার কার্যক্রম শুরু এবং নবজাতক ও শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড, অসংক্রামক রোগীদের জন্য এনডিসি কর্ণার চালুসহ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। পাশাপাশি হাসপাতালটি ১’শ শয্যায় উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন।

হাসপাতালে অন্তঃবিভাগ, বহিঃবিভাগ সেবা, প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা, এক্সরে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম হচ্ছে। গাইনী, এনেসথেসিয়া, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, নাক, কান ও গলা, শিশু, সার্জারি এবং অর্থপেডিক্স বিভাগে কনসালটেন্ট চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বিনামূল্যে নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারীসহ মাইনর ও মেজর সার্জারিও হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। অন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে রোগীরা সেবা ও বিনামূল্যে ঔষধও পাচ্ছেন।

সম্প্রতি হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক রোগী টিকেট কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। একই ভাবে ভিড় লক্ষ করা গেছে, পরীক্ষাঘার, জরুরি বিভাগ এবং চিকিৎসকদের চেম্বারের ভিতর ও বাহির। এছাড়াও নারী ও শিশু ওয়ার্ডে বেডের বাইরে এবং হাসপাতালের বারান্দায় ভর্তিকৃত রোগি রয়েছেন। যার মধ্যে অধিকাংশ রোগিই হচ্ছে, নারী ও শিশু এবং দূর্ঘটনাজনিত রোগি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন কোন ভবন না থাকলেও পুরানো স্থাপনায় গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা ব্যাপক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এই তিন মাসে নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারিসহ মাইনর ও মেজর সার্জারির পাশাপাশি বহিঃবিভাগে ৫৯ হাজার ৩১ জন, অন্তঃবিভাগে ২ হাজার ২৭ জন ও জরুরি বিভাগে ৬ হাজার ৩৯৮ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এবং কম-বেশি ঔষধ পেয়েছেন।

পরিদর্শনকালীন সময়ে রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে আগত রোগীদের বেশিরভাগ অসহায় ও নিম্ন মধ্যবিত্ত। তাদের অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনা করে যথা সম্ভব টাকা খরচ থেকে বাঁচিয়ে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন এখানকার চিকিৎসকরা। হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মাওলা নঈম এই জেলার (কচুয়া উপজেলা) বাসিন্দা হওয়ায় আগত রোগীরা ভালো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মাওলা নঈম বলেন, ‘অন্য যে কোন হাসপাতালের তুলনায় এখানে অধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। যার ফলে প্রতিনিয়ত সহস্রাধীক রোগী সেবা নিয়ে থাকেন এবং প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় স্ট্রাকচার, চিকিৎসক ও ঔষধ না থাকার কারণে অধিক সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

তিনি বলেন, আশার বাণী হচ্ছে খুব শীঘ্রই আমাদের হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হবে। তখন আরও বৃহৎ পরিসরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’ আর এ বিষয়ে যিনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন এবং আমরা যার কাছে কৃতজ্ঞ তিনি হলেন, এই উপজেলার বাসিন্দা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিগ্রে. জেনারেল মীর সরোয়ার হোসেন চৌধুরী। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমাদের এই উদ্যোগ সফল হচ্ছে।

এসময় তিনি চাঁদপুরের সিভিল সার্জনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, টেকনেশিয়ান এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্মান জানানোয় গোটা জাতি আনন্দিত-মির্জা ফখরুল

প্রতিদিন গড়ে সহস্রাধীক রোগীর সেবা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম

একশ শয্যায় উন্নীত হচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাড়বে চিকিৎসা সেবার মান

বৃহৎ পরিসরে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে : ডা. গোলাম মাওলা নঈম

আপডেট: ০৫:১৪:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

এক সময় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের যখন অনিহা বেড়ে হতাশায় পরিণত হতো, ঠিক সেই সময়ে গ্রামীণ জনপদে সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ধারাবাহিকভাবে সেবা দিয়ে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা, প্রসুতি মায়েদের নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারী এবং ওষুধ সরবরাহ করে রোগীদের ভীড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে হাসপাতালটির।

হাসপাতালটিতে উপজেলার ৪ লক্ষ জনগোষ্ঠি সেবা নিয়ে থাকে। এ ছাড়াও হাসপাতালটি জেলার মধ্যবর্তী স্থান ও কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এবং রেলপথ, স্থলপথ ও নদীপথের সংযোগ থাকার কারনে পাশ্ববর্তী উপজেলা কচুয়া, শাহরাস্তী, ফরিদগঞ্জ, মতলব ও চাঁদপুর সদর এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নের জনগণ স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন এই হাসপাতালে।

হাজীগঞ্জসহ প¦ার্শবতী উপজেলার মানুষের চিকিৎসার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অবকাঠামোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নিয়ম শৃঙ্খলার উন্নতি ও সেবার মানে ধারাবাহিক পরিবর্তন আসায় সেবাগ্রহিতা ও তাদের পরিবারের লোকজন সন্তুষ্ট। এতে করে রোগীদের অতিরিক্ত ভীড়ের কারণে হিমশীম খেতে হয় চিকিৎসকদের। এছাড়াও এক উপজেলার বরাদ্দকৃত ঔষধ অতিরিক্ত রোগীদের মাঝে বিলির কারণে ঔষধ সংকটেও পড়তে হয়।

আর এই সংকট উত্তরণে সুখবর পেলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও হাজীগঞ্জবাসী। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মাওলা নঈমের একান্ত প্রচেষ্টায় ও উদ্যোগে একশ শয্যায় উন্নীত হতে যাচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এ বিষয়ে গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে প্রেরণকৃত এক পত্রের আলোকে এর অগ্রগতি বিষয়ে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রধান স্থপতি আসমা জাহানের স্বাক্ষরিত ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণয়নাধীন ৫ সেক্টর কর্মসূচীর আওতাধীন চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ হতে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ এর প্রস্তাবিত নকশা (সাইট প্ল্যান ও হাসপাতাল ভবন) প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নকশায় ১২ তলা তিনটি ভবন ও ৮তলা ভিত্তিসহ ৭ তলা একটি হাসপাতাল ভবনের প্রস্তাব করা হয়।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে একটি ১২ তলা ভবনের নকশা অনুমোদনের লক্ষ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষরিত করে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ডা. মো. গোলাম মাওলা নঈম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী যোগদানের পর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১’শ শয্যায় উন্নীতকরণে উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

এর শর্তাবলী পূরণ ও প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে হাসপাতালটি ১’শ শয্যায় উন্নীতকরণে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়। এবং গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে প্রেরণকৃত এক পত্রের আলোকে এর অগ্রগতি বিষয়ে জানা যায়। যা উপজেলাবাসীর জন্য সুখবর। হাসপাতালটি ১’শ শয্যায় উন্নীত হলে চিকিৎসক’সহ প্রয়োজনীয় লোকবল, পর্যাপ্ত ঔষধ ও সেবার পরিধি বৃদ্ধি পাবে।

প্রসঙ্গত, ৬.৬৩ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। এর মধ্যে ডা. আলী নূর বশির আহমেদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর হাসপাতালটির পরিবেশ, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সেবার মান বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে ডা. আনোয়ারুল আজিম ও এসএম চিশতীয় দায়িত্ব পালন করে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহৃত রাখেন।

এরপর ডা. মো. গোলাম মাওলা নঈম দায়িত্ব গ্রহণ করে হাসপাতালটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। তিনি বন্ধ অপারেশন থিয়েটার কার্যক্রম শুরু এবং নবজাতক ও শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড, অসংক্রামক রোগীদের জন্য এনডিসি কর্ণার চালুসহ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। পাশাপাশি হাসপাতালটি ১’শ শয্যায় উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন।

হাসপাতালে অন্তঃবিভাগ, বহিঃবিভাগ সেবা, প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা, এক্সরে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম হচ্ছে। গাইনী, এনেসথেসিয়া, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, নাক, কান ও গলা, শিশু, সার্জারি এবং অর্থপেডিক্স বিভাগে কনসালটেন্ট চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বিনামূল্যে নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারীসহ মাইনর ও মেজর সার্জারিও হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। অন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে রোগীরা সেবা ও বিনামূল্যে ঔষধও পাচ্ছেন।

সম্প্রতি হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক রোগী টিকেট কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। একই ভাবে ভিড় লক্ষ করা গেছে, পরীক্ষাঘার, জরুরি বিভাগ এবং চিকিৎসকদের চেম্বারের ভিতর ও বাহির। এছাড়াও নারী ও শিশু ওয়ার্ডে বেডের বাইরে এবং হাসপাতালের বারান্দায় ভর্তিকৃত রোগি রয়েছেন। যার মধ্যে অধিকাংশ রোগিই হচ্ছে, নারী ও শিশু এবং দূর্ঘটনাজনিত রোগি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন কোন ভবন না থাকলেও পুরানো স্থাপনায় গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা ব্যাপক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এই তিন মাসে নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারিসহ মাইনর ও মেজর সার্জারির পাশাপাশি বহিঃবিভাগে ৫৯ হাজার ৩১ জন, অন্তঃবিভাগে ২ হাজার ২৭ জন ও জরুরি বিভাগে ৬ হাজার ৩৯৮ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এবং কম-বেশি ঔষধ পেয়েছেন।

পরিদর্শনকালীন সময়ে রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে আগত রোগীদের বেশিরভাগ অসহায় ও নিম্ন মধ্যবিত্ত। তাদের অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনা করে যথা সম্ভব টাকা খরচ থেকে বাঁচিয়ে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন এখানকার চিকিৎসকরা। হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মাওলা নঈম এই জেলার (কচুয়া উপজেলা) বাসিন্দা হওয়ায় আগত রোগীরা ভালো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মাওলা নঈম বলেন, ‘অন্য যে কোন হাসপাতালের তুলনায় এখানে অধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। যার ফলে প্রতিনিয়ত সহস্রাধীক রোগী সেবা নিয়ে থাকেন এবং প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় স্ট্রাকচার, চিকিৎসক ও ঔষধ না থাকার কারণে অধিক সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

তিনি বলেন, আশার বাণী হচ্ছে খুব শীঘ্রই আমাদের হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হবে। তখন আরও বৃহৎ পরিসরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’ আর এ বিষয়ে যিনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন এবং আমরা যার কাছে কৃতজ্ঞ তিনি হলেন, এই উপজেলার বাসিন্দা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিগ্রে. জেনারেল মীর সরোয়ার হোসেন চৌধুরী। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমাদের এই উদ্যোগ সফল হচ্ছে।

এসময় তিনি চাঁদপুরের সিভিল সার্জনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, টেকনেশিয়ান এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।