আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষ্যে হাজীগঞ্জে সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি পূজামণ্ডপ কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক, রাজনৈতিক দল, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় কমিউনিটির সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে সংশ্লিষ্টা আমাদের নিশ্চিত করেছেন।
নিরাপত্তার ঘাটতি থাকবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সবাই নীতি কথা বলি। কিন্তু আমাদের কাজে সেই নীতি কথার প্রতিফলন ঘটে না। তবে আমি বলতে চাই যারা দুস্কর্ম ও অপকর্মে জড়িত, তারা কোনো ধর্মের নয়। এবং যারা এসব কাজে জড়িত থাকে বা থাকবে, আমরা কাউকে ছাড় দিবো না।
তিনি বলেন, অপরাধ করে কেউ কোনো দিন পার পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবেনা। সরকার কাউকে ছাড় দেয়নি। কারণ, রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই। কেউ বিরূপ মন্তব্য করলে, আপনার-আমার প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। তবে তা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। তবে আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
সংবাদকর্মী ও আলেম সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এ পর্যন্ত দেশে যতধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটিত হয়েছে, তার বেশিরভাগ গুজব ও মিথ্যার উপর ভিত্তি করেই হয়েছে। অনেকে গুজবে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তাই, গুজব প্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আপনাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, টিম বেশি হলে মিস ম্যানেজমেন্ট হতে পারে। তাই, যেসব দল ও যারা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করবেন। তারা সমন্বয় করে নিবেন। কারণ, একজন বা এক দলের পক্ষে ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তাই সমন্বয় করে ২৪ ঘন্টাকে ভাগ করে দায়িত্ব পালন করবেন।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক আনসার ও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ, মোবাইল টিম, ডিবি ও র্যাব, সেনাবাহীনির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, এই সম্প্রীতি সমাবেশ শুধুমাত্র পূজা কেন্দ্রিক নয়। আমাদের ভ্রাতৃত্বে বন্ধনকে সুর্দঢ় করতে এবং সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কোন তথ্য পেলে প্রথমেই ধরে নিবেন এটা গুজব। পরে যাচাই-বাছাই করবেন। সত্যতা পেলে প্রতিবাদ করার অধিকার আপনার আছে। তবে তা হবে শান্তিপূর্ণ। আইন প্রয়োগ করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
তিনি বলেন, আপনারা এলাকায় বসবাস করেন। কে বা কারা মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, চুরি, কিশোরগ্যাংসহ অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত, আপনারা আমাদের চেয়ে ভালো যানেন। তাই, আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেনা। আমরা ব্যবস্থা নিবো।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌ. মো. জাকির হোসাইনের উপস্থাপনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন, সেনাবাহিনীর হাজীগঞ্জ ক্যাম্পের ইউনিট কমান্ডার মেজর মো. আরিফ হোসাইন। শুরুতেই পবিত্র কোরআন মাজিদ থেকে তেলওয়াত করেন, মডেল মসজিদের পেশ ইমাম মো. মিজানুর রহমান ও গীতা থেকে পাঠ করেন বলাখাল সারদাঞ্জলী গীতা নিকেতনের শিক্ষক দিপঙ্কর চক্রবর্তী সৈকত।
এসময় বক্তব্য রাখেন, হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে পেশ ইমাম মুফতি মো. আব্দুর রউফ, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রোটা. রুহিদাস বণিক, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটওয়ারী, জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর বিএম কলিমুল্লাহ ভুঁইয়া, হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি মো. যুবায়ের হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা প্রচার ও দাওয়াত বিষয়ক সম্পাদক মো. কামাল গাজী।
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন, হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদ, ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষে বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিলন, শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের পুরোহিত স্বামী সেবাময়ানন্দ, বেলচোঁ কারিমাবাদ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মো. মিজানুর রহমান, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাধাকান্ত দাস রাজু, বৈষম্যের বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে, কৃষি কর্মকর্তা দীলরুবা খানম, ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, গোলাম মোস্তফা স্বপন, মজিবুর রহমান, নুরুল আমিন হেলাল, হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু ছাইদ, মাধ্যমিক শিক্ষখ সমিতির সভাপতি দীপক চন্দ্র শীলসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সুশিল সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।