মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :
সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হাজীগঞ্জ পৌরসভায় দ্রুত নাগরিক সেবা কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যে পৌর পরিষদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল। বুধবার (১৪ আগস্ট) বেলা ১১টায় পৌর সভাকক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতেই ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে নিহতদের স্মরণ ও তাদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা ও আরোগ্য কামনা করা হয়।
প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ জাহিদুল আযহার আলম বেপারীর সভাপতিত্বে সভায় ইউএনও তাপস শীল বলেন, যেহেতু পৌরসভা জনপ্রতিনিধি সেবা কেন্দ্রিক। সেহেতু কাউন্সিলরবৃন্দ আপনারা অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু করেন। রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে আমার কথা হয়েছে এবং তারা আমাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন, হাজীগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রাখতে সহযোগিতা করবেন।
ইপিআই কার্যক্রমের জন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জরুরি সেবার মধ্যে পানি ও বিদ্যুৎ রয়েছে। যেখানে সমস্যা আছে, তা দ্রুত সমাধান করুন। পাশাপাশি চলমান উন্নয়ন কাজ যেন বন্ধ না হয় এবং সেসব কাজের ওয়ার্ক ওডার দেওয়া হয়েছে, তা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিন। আর ভাংচুর ও পুড়ে যাওয়ার ফলে যেসব সমস্যা হবে, তা সমাধানের উদ্যোগ নিন। যা সম্ভব নয়, তার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করুন।
এসময় ক্ষতিগ্রস্তের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে পৌর কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা বলেন, ৪ ও ৫ আগস্টের ঘটনায় পৌরসভার কয়েক কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে ট্রাক ও পিকআপ পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে ময়লা-আবর্জনা যথাসময়ে পরিস্কার এবং যেখানে বিদ্যুতের সমস্যা আছে, তা সমাধান করা যাচ্ছেনা। ভাংচুরকৃত ও পুড়ে যাওয়া জঞ্জাল অপসারণসহ ধোয়া-মোছার মাধ্যমে পৌরসভায় কার্যালয় ব্যবহার উপযোগী করার কাজ চলমান রয়েছে।
তারা আরও বলেন, ৪ আগস্টের ঘটনায় মেয়র মহোদয় আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন গুরুতর আহত হওয়ার কারণে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। আশাকরি, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন এবং এর মধ্যে পৌরসভা কার্যালয়ের জঞ্জাল অপসারণ ও ধোয়া-মোছার মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হবে। পৌরবাসীকে সেবার দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা মেয়রের দিক-নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছি, যেন আগামি সপ্তাহের মধ্যেই অনেকটা কার্যক্রম চালু করতে পারি।
সচিব মুহাম্মদ নূর আজম শরীফের উপস্থাপনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাসীন ফারুক বাদল, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহআলমসহ কর্মকর্তাবৃন্দ। এসময় প্যানেল মেয়র-৩ রোকেয়া বেগম, কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দিন মুন্সী, সুমন তপদার, হাজী কবির হোসেন কাজী, মো. বিল্লাল হোসেন, সাদেকুজ্জামান মুন্সী, মো. শাহআলম ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মমতাজ বেগম উপস্থিত ছিলেন।।
এছাড়াও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. ইদ্রিস মিয়া, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পয়নিস্কাশন) মো. মাহবুবর রশিদ, সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আলমগীর, বাজার পরিদর্শক খাজা সাফিউল বাসার রুজমন ও উচ্চমান সহকারী মো. আব্দুল লতিফসহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ৪ আগস্ট (রোববার) বিকালে পৌরসভা কার্যালয় ভাংচুর, তিনটি গাড়ি ও চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরের দিন ৫ আগস্ট (সোমবার) সকালে আবারও পৌরসভা কার্যালয়ের একাধিক কক্ষসহ দুইটি গাড়িতে আগুন এবং বেশ কয়েকটি গাড়িসহ অন্যান্য মালামাল এবং জিসিনপত্র ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
এছাড়াও পৌরসভার একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। এতে পৌরসভার কয়েক কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি পৌরসভার নাগরিক সেবার অন্যতম বিভাগ পৌর ডিজিটাল সেন্টার, বিদ্যুৎ, পানি ও পয়নিস্কাশন এবং প্রকৌশলীসহ অন্যান্য বিভাগের প্রয়োজনী কাগজপত্র, ফটোকটিসহ অন্যান্য মেশিন ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে পৌরসভার সেবা কার্যক্রম।
এছাড়াও একই দিনে পৌরসভার মেয়র আসম মাহবুব-উল আলম লিপনের বসতবাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা এবং বাসার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়।