হাজীগঞ্জের শিশুকে রামগঞ্জে নিয়ে হত্যার অপরাধে মায়ের ১০ বছরের কারাদণ্ড

  • আপডেট: ১১:২১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ২৩

ছবি-নতুনেরকথা।

হাজীগঞ্জের তিন বছর বয়সি শিশু আহম্মেদ হোসেনেকে রামগঞ্জ নানার বাড়িতে নিয়ে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে রাখা সেই সৎ মা কুহিনুর বেগমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত। গত সোমবার (২৫) দুপুর ১টার দিকে বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময়ও কুহিনুর বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি জসিম উদ্দিন সংবাদকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী হাফেজ মো. শাহমিরান চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের দণি রায়চোঁ গ্রামের হাবিব মিয়ার ছেলে। দণ্ডপ্রাপ্ত কুহিনুর বেগম মামলার বাদী হাফেজ শাহমিরানের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তিনি রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের চকিদার বাড়ির মৃত মোবারক হোসেন কুট্টির মেয়ে।

উল্লেখ্য, গত বছরের (২০২২ সাল) ২৯ আগস্ট, সোমবার বিকালে আহম্মেদ হোসেন নামের তিন বছর বয়সি ওই শিশুর মরদেহ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের চকিদার বাড়ির মৃত মোবারক কুট্টির বসতঘরের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে রামগঞ্জ থানা পুলিশ। এর আগে শিশুটিকে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে রাখে তার সৎ মা কুহিনুর বেগম। এর আগে ২৭ আগষ্ট শিশুটি নিখোঁজ হয় বলে তার স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজনকে জানান।

জানা গেছে, হাফেজ শাহমিরান ও তার স্ত্রী কুহিনুর বেগম দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। ২০২১ সালে তাদের বিয়ে হয়। শাহমিরানের প্রথম স্ত্রীর ঘরের একমাত্র ছেলে আহম্মেদ হোসেন। অপর দিকে কোহিনুর বেগমেরও প্রথম স্বামীর ঘরে ৯ বছর বয়সি একটি ছেলে সন্তান ছিল এবং ওই সময়ে দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি স্বামী শাহমিরানের সাথে রায়চোঁ গ্রামের হাজী বাড়িতে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

হত্যাকান্ডের শিকার শিশু আহম্মেদ হোসেনের বাবা শাহমিরান ওই সময়ে সংবাদকর্মীদের জানান, তিনি পেশাগত কাজে ঢাকায় থাকেন। তার স্ত্রী কোহিনুর বেগমের মাধ্যমে জানতে পারেন, ছেলে আহম্মেদ হোসেনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর নিকট আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করে শিশুটিকে না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাদের বাড়ির পুকুরে নামে। এরপরও শিশুটিকে না পাওয়ায় বিষয়টি স্থানীয়দের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

পরের দিন রোববার বিকালে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন জিয়ানগর এলাকায় ধারণকৃত একটি কোজ সার্কিট ক্যামেরায় স্থানীয়রা দেখতে পান, শুক্রবার শিশুটিকে নিয়ে তার সৎ মা কোহিনুর বেগম চলে যাচ্ছেন, কিন্তু শনিবার তিনি একাই ফিরে আসেন। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তারা হাজীগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করেন। এরপর কোহিনুর বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

পরবর্তীতে হাজীগঞ্জ থানায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কুহিনুর বেগম শিশু আহম্মেদ হোসেনকে হত্যার কথা শিকার করেন এবং মরদেহ তার বাবার বাড়ির বসতঘরের মাটিতে পুঁতে রাখেন বলে তথ্য দেন। এরপর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যাকান্ডের বিষয়টি রামগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করে।

খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে রামগঞ্জ থানা পুলিশ হাজীগঞ্জ থানায় এসে কোহিনুর বেগমকে নিয়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধারে কুহিনুর বেগমের বাবার বাড়ি যায়। এরপর তার দেখানো স্থান বাবার ঘরের বারান্দার (এক চালা টিনের কক্ষ) মেঝের মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় শিশু আহম্মেদ হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই সময়ে লক্ষ্মীপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর সার্কেল) আব্দুল্লাহ মো. শেখ সাদী, রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. এমদাদুল হক, তদন্ত কর্মকর্তা কার্তিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও শিশুটির বাবা হাফেজ শাহমিরান, সৎ মা কোহিনুর বেগম, নানী রাহেলা বেগমসহ তাদের পরিবারের অন্যান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শিশু আহম্মেদ হোসেনের মরদেহ উদ্ধারকালীন সময়ে তার সৎ মা কুহিনুর বেগম উপস্থিত সংবাদকর্মীদের জানান, শুক্রবার রাতে শিশুটিকে তিনি লাথি দিয়েছেন। এতে শিশুটি মারা যায়। পরে তিনি ভয়ে কাউকে না জানিয়ে শিশুটিকে মাটিতে পুঁতে রাখেন।

এর আগে ওই বাড়ির লোকজনের সাথে কথা হলে তারা সংবাদকর্মীদের জানান, শুক্রবার দুপুরে শিশু আহম্মেদ হোসনেকে তার নানার বসতঘরের সামনে খেলাধূলা করতে দেখেছেন। তবে কুহিনুর বেগম কোন দিন শিশুটিকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন, আবার কোন দিন তিনি চলে গেছেন, তা কেউ জানাতে পারেননি। তবে রোববার দুপুর থেকে তাদের বসতঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তারা।

তারা আরো জানান, কুহিনুর বেগমের বাবা নেই (মারা গেছেন)। তারা চার বোন, এক ভাই। ভাই বিবাহিত, ঢাকায় থাকেন। কুহিনুরসহ তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। সবাই স্বামীর বাড়িতে থাকেন। অপর এক বোন (অবিবাহিত) সাথি আক্তার, তার মা রাহেলা বেগমকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই থাকেন। যে দিন কোহিনুর বেগম শিশু আহম্মেদ হোসেনকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন, সেদিন তার মা রাহেলা বেগম বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু সাথি আক্তারকে বাড়িতে দেখতে পাননি বলে জানান।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ফরিদগঞ্জে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যু

হাজীগঞ্জের শিশুকে রামগঞ্জে নিয়ে হত্যার অপরাধে মায়ের ১০ বছরের কারাদণ্ড

আপডেট: ১১:২১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হাজীগঞ্জের তিন বছর বয়সি শিশু আহম্মেদ হোসেনেকে রামগঞ্জ নানার বাড়িতে নিয়ে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে রাখা সেই সৎ মা কুহিনুর বেগমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত। গত সোমবার (২৫) দুপুর ১টার দিকে বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময়ও কুহিনুর বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি জসিম উদ্দিন সংবাদকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী হাফেজ মো. শাহমিরান চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের দণি রায়চোঁ গ্রামের হাবিব মিয়ার ছেলে। দণ্ডপ্রাপ্ত কুহিনুর বেগম মামলার বাদী হাফেজ শাহমিরানের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তিনি রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের চকিদার বাড়ির মৃত মোবারক হোসেন কুট্টির মেয়ে।

উল্লেখ্য, গত বছরের (২০২২ সাল) ২৯ আগস্ট, সোমবার বিকালে আহম্মেদ হোসেন নামের তিন বছর বয়সি ওই শিশুর মরদেহ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের চকিদার বাড়ির মৃত মোবারক কুট্টির বসতঘরের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে রামগঞ্জ থানা পুলিশ। এর আগে শিশুটিকে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে রাখে তার সৎ মা কুহিনুর বেগম। এর আগে ২৭ আগষ্ট শিশুটি নিখোঁজ হয় বলে তার স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজনকে জানান।

জানা গেছে, হাফেজ শাহমিরান ও তার স্ত্রী কুহিনুর বেগম দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। ২০২১ সালে তাদের বিয়ে হয়। শাহমিরানের প্রথম স্ত্রীর ঘরের একমাত্র ছেলে আহম্মেদ হোসেন। অপর দিকে কোহিনুর বেগমেরও প্রথম স্বামীর ঘরে ৯ বছর বয়সি একটি ছেলে সন্তান ছিল এবং ওই সময়ে দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি স্বামী শাহমিরানের সাথে রায়চোঁ গ্রামের হাজী বাড়িতে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

হত্যাকান্ডের শিকার শিশু আহম্মেদ হোসেনের বাবা শাহমিরান ওই সময়ে সংবাদকর্মীদের জানান, তিনি পেশাগত কাজে ঢাকায় থাকেন। তার স্ত্রী কোহিনুর বেগমের মাধ্যমে জানতে পারেন, ছেলে আহম্মেদ হোসেনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর নিকট আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করে শিশুটিকে না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাদের বাড়ির পুকুরে নামে। এরপরও শিশুটিকে না পাওয়ায় বিষয়টি স্থানীয়দের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

পরের দিন রোববার বিকালে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন জিয়ানগর এলাকায় ধারণকৃত একটি কোজ সার্কিট ক্যামেরায় স্থানীয়রা দেখতে পান, শুক্রবার শিশুটিকে নিয়ে তার সৎ মা কোহিনুর বেগম চলে যাচ্ছেন, কিন্তু শনিবার তিনি একাই ফিরে আসেন। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তারা হাজীগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করেন। এরপর কোহিনুর বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

পরবর্তীতে হাজীগঞ্জ থানায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কুহিনুর বেগম শিশু আহম্মেদ হোসেনকে হত্যার কথা শিকার করেন এবং মরদেহ তার বাবার বাড়ির বসতঘরের মাটিতে পুঁতে রাখেন বলে তথ্য দেন। এরপর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যাকান্ডের বিষয়টি রামগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করে।

খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে রামগঞ্জ থানা পুলিশ হাজীগঞ্জ থানায় এসে কোহিনুর বেগমকে নিয়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধারে কুহিনুর বেগমের বাবার বাড়ি যায়। এরপর তার দেখানো স্থান বাবার ঘরের বারান্দার (এক চালা টিনের কক্ষ) মেঝের মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় শিশু আহম্মেদ হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই সময়ে লক্ষ্মীপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর সার্কেল) আব্দুল্লাহ মো. শেখ সাদী, রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. এমদাদুল হক, তদন্ত কর্মকর্তা কার্তিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও শিশুটির বাবা হাফেজ শাহমিরান, সৎ মা কোহিনুর বেগম, নানী রাহেলা বেগমসহ তাদের পরিবারের অন্যান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শিশু আহম্মেদ হোসেনের মরদেহ উদ্ধারকালীন সময়ে তার সৎ মা কুহিনুর বেগম উপস্থিত সংবাদকর্মীদের জানান, শুক্রবার রাতে শিশুটিকে তিনি লাথি দিয়েছেন। এতে শিশুটি মারা যায়। পরে তিনি ভয়ে কাউকে না জানিয়ে শিশুটিকে মাটিতে পুঁতে রাখেন।

এর আগে ওই বাড়ির লোকজনের সাথে কথা হলে তারা সংবাদকর্মীদের জানান, শুক্রবার দুপুরে শিশু আহম্মেদ হোসনেকে তার নানার বসতঘরের সামনে খেলাধূলা করতে দেখেছেন। তবে কুহিনুর বেগম কোন দিন শিশুটিকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন, আবার কোন দিন তিনি চলে গেছেন, তা কেউ জানাতে পারেননি। তবে রোববার দুপুর থেকে তাদের বসতঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তারা।

তারা আরো জানান, কুহিনুর বেগমের বাবা নেই (মারা গেছেন)। তারা চার বোন, এক ভাই। ভাই বিবাহিত, ঢাকায় থাকেন। কুহিনুরসহ তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। সবাই স্বামীর বাড়িতে থাকেন। অপর এক বোন (অবিবাহিত) সাথি আক্তার, তার মা রাহেলা বেগমকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই থাকেন। যে দিন কোহিনুর বেগম শিশু আহম্মেদ হোসেনকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন, সেদিন তার মা রাহেলা বেগম বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু সাথি আক্তারকে বাড়িতে দেখতে পাননি বলে জানান।