• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫ আগস্ট, ২০২৩
সর্বশেষ আপডেট : ৫ আগস্ট, ২০২৩

হাজীগঞ্জে ২ বোন হলেন এক সাথে বিসিএস ক্যাডার

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]
হাজীগঞ্জে ২ বোন হলেন এক সাথে বিসিএস ক্যাডার
ছবি-নতুনেরকথা।

মহিউদ্দিন আল আজাদ॥
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একসাথে ২ বোন ৪১তম বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

তাঁরা হলেন গুলে জান্নাত সুমি শিক্ষা ক্যাডারে ও জান্নাতুন নাঈম খুশবু কৃষি ক্যাডারে। ৩ আগস্ট সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে। তাদের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন মকিমাবাদ ৪নং ওয়ার্ডে।

হাজীগঞ্জ উপজেলার মকিমাবাদ এলাকার বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এয়াকুব মিয়া ও গৃহিণী রুপিয়া বেগমের তিন মেয়ের মধ্যে দুজন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করল।

হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মোশারফ হোসেন জসিম জানান, ‘তাঁরা দুই বোন আমাদের কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের এই ধারাবাহিক সাফল্যে উচ্ছ্বসিত।’

তাঁদের নিকটাত্মীয় হাজীগঞ্জ রান্ধুনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য জসিমউদ্দিন বিএসসি বলেন, কঠিন পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় করে তাঁদের অর্জিত এ সাফল্যের আনন্দ তুলনাহীন। তাঁরা ছাত্রাবস্থায় খুবই ভালো ছাত্র ছিলো।

হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহাকারি প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেন বলেন, গুলে জান্নাত সুমি ২০০৭ সালে ও জান্নাতুন নাঈম খুশবু ২০১১ সালে আমাদের বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে পাশ করেছে। তারা দু’বোন খুবই মেধাবী। তাদের সাফল্যে আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ উচ্ছাসিত।

গুলে জান্নাত ২০০৭ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০-১১ সেশনে রাজনীতি বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন।

গুলে জান্নাত বলেন, ‘আমার শৈশব ও বেড়ে উঠা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে চট্রগ্রাম থেকে নিয়মিত ঢাকায় গিয়ে চাকরির পরীক্ষা দেওয়া কষ্টকর। তাই মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে ঢাকায় চলে যাই। সেখানে পরিবারের ওপর চাপ কমানোর জন্য এবং একই সঙ্গে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য আঞ্জুমান মোখলেছুর রহমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জুনিয়র ইনস্টাক্টর পদে যোগ দিই। সেই সঙ্গে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন কোর্সে ভর্তি হয়ে শিক্ষাবিষয়ক পড়ালেখা শুরু করি। চাকরি করার পাশাপাশি বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করি।

২০১৬ সালে প্রথম ৩৮তম বিসিএস দিয়ে আমার বিসিএস যাত্রা শুরু হয়। ৩৮তম বিসিএসে আশানুরূপ ফল না পেয়ে স্বপ্নপূরণের জন্য পুনরায় নতুন উদ্যোমে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করি। এভাবে দেখতে দেখতে ৪০তম বিসিএসের ফলাফলের দিন চলে আসে। সেখানে নাম না দেখে হতাশায় ভেঙ্গে পড়ি। এ বিসিএসের ফলাফলে নিজের রোল আছে নন-ক্যাডার তালিকায়। ৪০তম বিসিএস থেকেই নন-ক্যাডার নিয়োগে নতুন করে জটিলতা শুরু হলে আমারও শুরু হলো আর এক অসহনীয় কষ্টের যাত্রা। ভবিষ্যতের শঙ্কায় দিনের পর দিন উৎকণ্ঠা আর তার ফলে রাতের পর রাত কেটেছে নির্ঘুমে। চোখের জলও যেন মনে হচ্ছিল ফুরিয়ে যাচ্ছিল।

অবশেষে ৩ আগস্ট সারাদিন অপেক্ষার পর যখন ফলাফল তালিকায় দুই বোনের রোল নম্বর একই সঙ্গে দেখে স্তব্ধ হয়ে যাই। ২০১৬ সালে শুরু শুরু হওয়া বিসিএস’র স্বপ্ন ২০২৩ এসে তা পরিপূর্ণতা পায়। এ জন্য সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ তায়ালা ও পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ।’

জান্নাতুন নাঈম বলেন, ‘২০১১ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১৩ সালে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচসএসসি পাস করি। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করি।’

কৃষি ক্যাডার পাওয়া জান্নাতুন নাঈম আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় আমি সদ্য স্নাতক শেষ করেছি। তখনো চাকরির তেমন প্রস্তুতি শুরু করিনি। অনেকটা আনাড়ি মনোভাব নিয়েই প্রথমবারের মতো বিসিএসে আবেদন করি। ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার জন্য তা পিছিয়ে যায়। আর আমিও প্রস্তুতির জন্য কিছু সুযোগ পেয়ে যাই। মহামারি যখন সব কিছু স্থবির করে দেয়, তখন ক্যাম্পাস থেকে হাজীগঞ্জের বাড়ীতে চলে আসি। এর পর থেকে শুরু হয় আমার বিসিএস প্রস্তুতি। প্রিলিমিনারি হয়েছিল ২০২১ সালের ১৯ মার্চ, আমি পড়ার জন্য এক বছরেরও বেশি সময় পাই। এ জন্য ভালোভাবেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করি।

আল্লাহর রহমতে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পাস করি। এরই মধ্যে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (বিবিএস) যোগ দেই। এখানো সেখানেই কাজ করছি। ৩ আগস্টে ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলের তালিকায় স্থান পেয়ে সত্যিই আপ্লুত হয়েছি। চার বছরের দীর্ঘ সময়ের যাত্রায় পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং বিবিএসের সহকর্মীদের থেকে সর্বোচ্চ সমর্থন পেয়েছি। সর্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য সর্বদা প্রার্থনা করেছি এবং সৃষ্টিকর্তা আমার প্রতি সদয় হয়েছেন বলেই আমি ৪১তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।’

সরকারের একজন কর্মচারী হিসেবে দেশ ও জাতির সেবা করে যেতে চান এই দুই বোন।

গুলে জান্নাত সুমি বড় বোন। জান্নাতুন নাঈম খুশবুর বড় বোন হাজীগঞ্জের দক্ষিণ বলাখাল সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • শিক্ষা এর আরও খবর
error: Content is protected !!