স্কুলে স্মার্টফোন সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ

  • আপডেট: ০৮:৪৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩
  • ৩৮

স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও শিল্পবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বলেছে, মোবাইল ডিভাইস শিক্ষার্থীর মনঃসংযোগ ব্যাহত করে, প্রাইভেসি ঝুঁকিতে ফেলে ও পরবর্তীতে এ কারণে ‘সাইবার বুলিয়িং’-এর মতো ঘটনাও ঘটার ঝুঁকি থাকে।

এটি শেখার জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকি কমাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার সীমিত বা নিষিদ্ধ করার বিষয়টি প্রধান শিক্ষকদের বিবেচনায় থাকা উচিত।

গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো স্কুলে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে সেখানকার লেখাপড়ার ফলাফল আগের চেয়ে ভালো হয়। তবে গড় হিসাবে প্রতি চারটি দেশের মধ্যে একটিরও কম জায়গায় স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ করার মতো আইন রয়েছে বলে উঠে এসেছে এক প্রতিবেদনে। যুক্তরাজ্যে সাধারণত প্রধান শিক্ষকরা এ নিয়ম জারি করলেও দেশটির বেশিরভাগ স্কুলেই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে।

‘২০২৩ গ্লোবাল এডুকেশন মনিটর’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনের লেখক মানস অ্যান্টনিনিস বিবিসিকে বলেন, তাদের গবেষণা অনুযায়ী- স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার শিক্ষার্থীদের শেখা ব্যাহত করার পাশাপাশি তাদের প্রাইভেসি ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। স্কুলে কেবল এমন প্রযুক্তি থাকা উচিত, যা শেখার বিষয়টি সমর্থন করে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের একেবারেই প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে সরিয়ে নেওয়া উচিত হবে না। তবে কী ধরনের প্রযুক্তি স্কুলে অনুমোদন দেওয়া উচিত, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের আরও ভালো গাইডলাইন প্রয়োজন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশেও শিক্ষক ও ছাত্র উভয়ের জন্যই ক্লাসরুমে ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা ফ্রান্সেও রয়েছে। তবে বিশেষ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এতে বিকল্প রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শেখানোর ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহার করা যেতে পারে।

আগামী বছর থেকে মাধ্যমিক স্কুলগুলোর ক্লাসরুমে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ও স্মার্টওয়াচ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেদারল্যান্ডস।

তবে যুক্তরাজ্যের ট্রেড ইউনিয়ন ‘এনএএইচটি’র স্কুলবিষয়ক নীতি প্রধান সারাহ হ্যানাফিন বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা কয়েকটি স্কুলে কার্যকারিতা দেখালেও অন্যান্য জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি করবে। আর তাতে ‘শিক্ষার্থীরা ফোন ব্যবহারে আগের চেয়ে বেশি গোপনীয়তা অবলম্বন করবে। এর মানে বিভিন্ন সমস্যা স্কুল কর্মীদের নজর এড়িয়ে যাবে ও এতে করে সেগুলো চিহ্নিত বা সমাধান করাও জটিল হবে।

সারাহ হ্যানাফিন বলেন, স্কুলে যাওয়া বা ফিরে আসার সময় শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনের প্রয়োজন পড়তে পারে, এমন বাস্তবসম্মত কারণও রয়েছে। শিশু কিশোরদের বহির্বিশ্বের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে স্কুল, এর মধ্যে ফোনের স্ক্রিন টাইম ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়ও রয়েছে।

২০২১ সালে ইংল্যান্ডের স্কুলগুলোয় মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী গ্যাভিন উইলিয়ামসন। তবে বর্তমান শিক্ষা বিভাগ বলছে, স্কুল চলাকালীন মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে কিনা, তা প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্তের বিষয়।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে সন্তানদের বাড়ি বা স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারে ঐচ্ছিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আয়ারল্যান্ডের আটটি প্রাইমারি স্কুলের অভিভাবকদের জোট। তবে শিশুদের ফোন দেওয়া ‘একেবারেই হাস্যকর’। কয়েকজন অভিভাবক শিশুর ফোন ব্যবহারে সম্মতি না দিলেও বাকিরা তা করেন না। এর ফলে শিশুরা এমন সব বিষয়ের সংস্পর্শে আসে যেগুলো তাদের জন্য উপযুক্ত নয়।

তবে কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছেন, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগে জন্য হলেও মোবাইল ফোন উপকারী। আর বাড়িতে ব্যবহার বন্ধের বিষয়টিকেও ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে আখ্যা দেন তারা।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

‘ম্যানেজ করে’ এক সাথে দুই স্বামীর সংসার করছিলেন জান্নাতুল!

স্কুলে স্মার্টফোন সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ

আপডেট: ০৮:৪৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩

স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও শিল্পবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বলেছে, মোবাইল ডিভাইস শিক্ষার্থীর মনঃসংযোগ ব্যাহত করে, প্রাইভেসি ঝুঁকিতে ফেলে ও পরবর্তীতে এ কারণে ‘সাইবার বুলিয়িং’-এর মতো ঘটনাও ঘটার ঝুঁকি থাকে।

এটি শেখার জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকি কমাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার সীমিত বা নিষিদ্ধ করার বিষয়টি প্রধান শিক্ষকদের বিবেচনায় থাকা উচিত।

গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো স্কুলে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে সেখানকার লেখাপড়ার ফলাফল আগের চেয়ে ভালো হয়। তবে গড় হিসাবে প্রতি চারটি দেশের মধ্যে একটিরও কম জায়গায় স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ করার মতো আইন রয়েছে বলে উঠে এসেছে এক প্রতিবেদনে। যুক্তরাজ্যে সাধারণত প্রধান শিক্ষকরা এ নিয়ম জারি করলেও দেশটির বেশিরভাগ স্কুলেই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে।

‘২০২৩ গ্লোবাল এডুকেশন মনিটর’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনের লেখক মানস অ্যান্টনিনিস বিবিসিকে বলেন, তাদের গবেষণা অনুযায়ী- স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার শিক্ষার্থীদের শেখা ব্যাহত করার পাশাপাশি তাদের প্রাইভেসি ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। স্কুলে কেবল এমন প্রযুক্তি থাকা উচিত, যা শেখার বিষয়টি সমর্থন করে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের একেবারেই প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে সরিয়ে নেওয়া উচিত হবে না। তবে কী ধরনের প্রযুক্তি স্কুলে অনুমোদন দেওয়া উচিত, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের আরও ভালো গাইডলাইন প্রয়োজন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশেও শিক্ষক ও ছাত্র উভয়ের জন্যই ক্লাসরুমে ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা ফ্রান্সেও রয়েছে। তবে বিশেষ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এতে বিকল্প রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শেখানোর ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহার করা যেতে পারে।

আগামী বছর থেকে মাধ্যমিক স্কুলগুলোর ক্লাসরুমে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ও স্মার্টওয়াচ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেদারল্যান্ডস।

তবে যুক্তরাজ্যের ট্রেড ইউনিয়ন ‘এনএএইচটি’র স্কুলবিষয়ক নীতি প্রধান সারাহ হ্যানাফিন বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা কয়েকটি স্কুলে কার্যকারিতা দেখালেও অন্যান্য জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি করবে। আর তাতে ‘শিক্ষার্থীরা ফোন ব্যবহারে আগের চেয়ে বেশি গোপনীয়তা অবলম্বন করবে। এর মানে বিভিন্ন সমস্যা স্কুল কর্মীদের নজর এড়িয়ে যাবে ও এতে করে সেগুলো চিহ্নিত বা সমাধান করাও জটিল হবে।

সারাহ হ্যানাফিন বলেন, স্কুলে যাওয়া বা ফিরে আসার সময় শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনের প্রয়োজন পড়তে পারে, এমন বাস্তবসম্মত কারণও রয়েছে। শিশু কিশোরদের বহির্বিশ্বের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে স্কুল, এর মধ্যে ফোনের স্ক্রিন টাইম ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়ও রয়েছে।

২০২১ সালে ইংল্যান্ডের স্কুলগুলোয় মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী গ্যাভিন উইলিয়ামসন। তবে বর্তমান শিক্ষা বিভাগ বলছে, স্কুল চলাকালীন মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে কিনা, তা প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্তের বিষয়।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে সন্তানদের বাড়ি বা স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারে ঐচ্ছিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আয়ারল্যান্ডের আটটি প্রাইমারি স্কুলের অভিভাবকদের জোট। তবে শিশুদের ফোন দেওয়া ‘একেবারেই হাস্যকর’। কয়েকজন অভিভাবক শিশুর ফোন ব্যবহারে সম্মতি না দিলেও বাকিরা তা করেন না। এর ফলে শিশুরা এমন সব বিষয়ের সংস্পর্শে আসে যেগুলো তাদের জন্য উপযুক্ত নয়।

তবে কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছেন, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগে জন্য হলেও মোবাইল ফোন উপকারী। আর বাড়িতে ব্যবহার বন্ধের বিষয়টিকেও ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে আখ্যা দেন তারা।