গত কদিনের গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। ঘরে-বাইরে কোথাও যেন স্বস্তি নেই। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৩ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকায় নেই তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনাও। এই অবস্থা আরও কদিন চলতে পারে। তাই আসুন জেনে নিই, এই গরম থেকে কীভাবে স্বস্তি পাওয়া যাবে।
পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন।
আধা ঘণ্টা অন্তর পানি পান করুন। তবে অতিরিক্ত পানি পান থেকে বিরত থাকুন। কারণ অতিরিক্ত পানি পান কিডনি ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
ঘামে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ-চিনি বেরিয়ে যায়। তাই দিনে অন্তত এক গ্লাস গ্লুকোজ শরবত বা খাওয়ার স্যালাইন পান করুন।
মাংসসহ ভারী ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন, বেশি করে ফল ও শাকসবজি খান।
গ্রীষ্মকালীন ফল দিয়ে তৈরি জুস পান করুন।
দিনে বাইরে কম বের হওয়ার চেষ্টা করুন।
বাইরে আরাম পেতে
রোদে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
বাইরে বের হলে রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে ছাতা ব্যবহার করুন।
ব্যাগে সব সময় ফোল্ডিং ছাতা, পানির বোতল ও টিস্যু রাখুন।
দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলে ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। মাঝেমধ্যে চোখমুখে পানির ঝাপটা দিন।
ঘামের গন্ধ দূর করতে ডিওডোরেন্ট বা পারফিউম ব্যবহার করুন।
ঘরে আরাম পেতে
তীব্র এই গরমে এসি ছাড়া ঘরেও শান্তি নেই। কিন্তু ঘরে এসি রাখার সামর্থ্য কি সবার থাকে! তবে এসি ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে ঘর ঠান্ডা রাখা সম্ভব।
ঘর ঠান্ডা রাখতে সূর্যের প্রখর তাপ ঘরে আসতে দেওয়া যাবে না। তাই সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে সেই সব জানালার পর্দা টেনে রাখুন। রাতে অবশ্যই জানালা খুলে দিন, যাতে বাইরের ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে।
ফ্যানের নিচে গামলায় বরফ বা পানি রেখে দিন। তাতে ঘর দ্রুত ঠান্ডা হয়ে আসবে।
যথাসম্ভব বাতি কম জ্বালাবেন। কারণ বাতি ঘরের গরম বাড়িয়ে তোলে।
রান্না শেষে গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখুন। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা কোনো কাজের কথা নয়।
এ ছাড়া শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে গেলে, অচেতন হয়ে পড়লে, মাথা ঘোরা দেখা দিলে, তীব্র মাথাব্যথা হলে, খিঁচুনি হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে নিয়ে যান। রোগীর শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় কাপড় খুলে ফেলুন। রোগীর শরীরে বাতাস করুন। কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে গা মুছে দিন। শরীরের তাপমাত্রা কমাতে বগল, ঘাড়, পিঠ ও কুঁচকিতে আইস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। সর্বোপরি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
শিশুর জন্য করণীয়
গরমে শিশুর প্রয়োজন পাতলা ও ঢিলেঢালা পোশাক। র্যাশ এড়াতে সুতি কাপড় বেছে নিতে পারেন।
শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। দিনে অন্তত দুবার মাথাসহ পুরো শরীর নরম সুতি কাপড় কিংবা ভেজা গামছা দিয়ে ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।
শিশুকে ফুল হাতা পোশাক না পরিয়ে মশারির নিচে রাখুন।
গরমে এসিতে তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হবে। পাখার বাতাসে সরাসরি না রেখে একটু দূরে রাখুন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখুন।
শিশুর জন্য আর্দ্রতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আবশ্যক। শিশুর তৃষ্ণা মেটাতে বুকের দুধই যথেষ্ট। শিশু কতবার মূত্র ত্যাগ করছে, খেয়াল করুন। দিনে ছয় থেকে আটবার মূত্র ত্যাগ স্বাভাবিক।
শিশু প্রক্রিয়াজাত দুধ বা পাম্প করা দুধ পান করলে তা রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হবে। কোনোভাবেই তা তিন ঘণ্টার বেশি ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা যাবে না।
যতটা সম্ভব শিশুকে ডায়াপার না পরানোই ভালো। এতে গায়ে বাতাস লাগবে এবং ঘাম কম হবে।
ট্যালকম পাউডার শিশুর জন্য উপযোগী নয়। মুখের কাছাকাছি ব্যবহার করলে এই পাউডার থেকে শ্বাসযন্ত্রে সমস্যাসহ মুখের ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পানিশূন্যতার কারণে শিশুর গরমকালে জ্বর হতে পারে। তাই ভয় না পেয়ে প্রথমে তাকে আর্দ্র করার চেষ্টা করুন।
শরীরের তাপমাত্রা কোনোভাবেই না কমলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুর গায়ের তাপমাত্রা বাড়লে, র্যাশ, জ্বলুনি বা ছয় ঘণ্টার বেশি সময় খাবারে অনীহা দেখা দিলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।