ভেতর ভেতর সাপের মতো ফোঁসফাঁস করলেও বাইরেরটা শান্ত ছেলের মতো পুরোপুরি ঠান্ডা। বিক্ষোভ থেমে গেছে। ‘রাতারাতি’ থামিয়ে ফেলেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই একজন বিক্ষোভকারীও দেখা যায়নি চীনের কোনো অঞ্চলেই। রাস্তায় শুধু পুলিশ আর পুলিশ।
শত শত পুলিশে ছেয়ে গেছে রাজধানীসহ বিক্ষুব্ধ ২০ অঞ্চলের রাজপথ। রাতারাতি ঘরে ঢুকে গেছেন বিক্ষোভকারীরা। বিবিসি, সিএনএন, এপি।
জিরো কোভিডের বিপক্ষে আন্দোলনে নেমেছিল চীনবাসী। গত এক দশকে এমন দুঃসাহস কেউ দেখায়নি। ভুলের মাশুল এখন দিতে হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের। লকডাউনবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে চীনের পুলিশ। খুঁজে খুঁজে বের করা হচ্ছে কারা ছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। ফোন করে ডাকা হচ্ছে থানায়। কেন নেমেছিল রাস্তায়-লিখিত জবাবদিহি দিতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাচ্ছে আত্মা কাঁপানো সেই ফোনকল। তদন্ত শুরু হয়েছে সবার বিরুদ্ধে। চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলোয় বিক্ষোভ নিয়ে কোনো খবর না থাকলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার থেকেই দানা বাঁধতে থাকে বিক্ষোভ। শনিবার ও রোববার বড় আকার ধারণ করে। এরপর সোমবার থেকে গুটিয়ে যায়। মঙ্গলবার সব ঠান্ডা। বিক্ষোভের ছিটেফোঁটাও নেই চীনের কোথাও।
সাধারণ নাগরিকদের চেয়েও বেশি বিপদে পড়েছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ অঞ্চলসংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছুটি ঘোষণা করেছে। ছাত্রাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্লাস ও বার্ষিক পরীক্ষা হবে অনলাইনে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আবার শিক্ষার্থীদের ট্রেন স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছে। বেইজিং ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি তার ওয়েবসাইটে বলেছে, আমরা ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ শহরে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করব।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পদত্যাগ দূরে থাক, উলটো এখন বিপদে আছেন বিক্ষোভকারীরাই। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে আন্দোলনকারীদের। গ্রেফতার করা হয়েছে একজনকে। সোমবার গভীর রাতে হ্যাংজু শহরে এই গ্রেফতার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিওতে দেখা যায়, রাতে শত শত পুলিশ একটি বড় পাবলিক স্কোয়ার দখল করে। সপ্তাহ ধরে ১৫টি শহরসহ ২০ অঞ্চলে কোভিডবিরোধী বিক্ষোভ হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধরে ধরে তাদের ফোনে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) এবং টেলিগ্রাম অ্যাপ আছে কি না জিজ্ঞাসা করছে। চীনে টেলিগ্রাম অ্যাপটি নিষিদ্ধ বিধায় তারা ভিপিএন ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করছিল। গার্ডিয়ান।
এএফপির সাংবাদিকরা বলছেন, সমাবেশের কেন্দ্রবিন্দু সাংহাইয়ের উলুমুকি রাস্তার ৩০০ ফুটের মধ্যে ১২টি পুলিশের গাড়ি। অর্থাৎ প্রতি ২৫ ফুট পর একটা করে পুলিশের ভ্যান। কোথাও আবার এরও বেশি। একজন নারী বিক্ষোভকারী বলেন, সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ তিনি এবং তার পাঁচ বন্ধু যারা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, তারা পরে বেইজিং পুলিশের কাছ থেকে ফোন পেয়েছেন। পুলিশ তাদের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে। তার এক বন্ধু উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ তাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়।