যেকোন মুহূর্তে কিয়েভের পতন

  • আপডেট: ০৩:১৯:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২
  • ৩০

কিয়েভ দখলের পথে রুশ সৈন্যরা।

মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সেনারা। যেকোনো মুহূর্তে পতন হতে পারে কিয়েভের। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, কিয়েভের কেন্দ্রস্থলে পার্লামেন্ট ভবন থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার উত্তরে ওবোলন জেলায় অবস্থান করছে রাশিয়ার সেনারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, ওবোলনের বিভিন্ন সড়কে চলছে রুশ ট্যাংক।

এদিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়ার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। একটু পরপরই কিয়েভে বেজে উঠছে সাইরেনের শব্দ। আকাশে উড়ছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্থানীয়দের একাংশকে মলোটোভ ককটেল দিয়ে রুশ সেনাদের প্রতিরোধের আহ্বান জানান। অন্য অংশকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার কথা বলেছেন তারা।

যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পালাচ্ছে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক। অনেকে পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ ইউক্রেনীয় নিজের এলাকায় বাঙ্কারে, ভূগর্ভস্থ স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ ইউক্রেনের স্টেট বর্ডার গার্ড সার্ভিসেস জানিয়েছে, যুদ্ধ করতে সক্ষম নাগরিকদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের জন্য। মার্শাল ল যতদিন জারি থাকবে, ততদিন এই বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, তাদের টার্গেটগুলোর মধ্যে আমাকে এক নম্বরে রেখেছে শত্রুরা, দুই নম্বরে আমার পরিবার। তারা রাষ্ট্রপ্রধানকে নিঃশেষ করে ইউক্রেনকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করতে চায়। কিন্তু আমি রাজধানীতেই থাকব। আমার পরিবারও ইউক্রেনেই আছে।

তবে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেন পুরোপুরি দখল করে নেওয়ার ইচ্ছা নেই রাশিয়ার। মস্কো শুধু ইউক্রেনকে সামরিকভাবে নিরস্ত্র করতে চায়। এ জন্য ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে ক্রেমলিন। দেশটিকে এখন নিজেদের ভাগ্য বেছে নিতে হবে।

দৃশ্যত রাশিয়ার অভিযানের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই নাজেহাল ইউক্রেনীয় বাহিনী। রাজধানী কিয়েভ পতন ঘটাতে উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণের কয়েকটি প্রবেশদ্বার দিয়ে কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনারা। যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালাতে চালাতে প্রবেশ করছে রাজধানীতে। একই সঙ্গে ট্যাংক ও ভারী যান বাহন নিয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ইউক্রেনের একটি গোয়েন্দা সূত্র ইউক্রেনস্কা প্রাভদাকে জানিয়েছে, রাজধানী নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কিয়েভের প্রধান বিমানবন্দর দখল করার পাশাপাশি রুশ সেনাদের অবতরণের জন্য বিমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। আর সেভাই পরিকল্পনা মোতাবেক এগুচ্ছে তারা। গোয়েন্দা সংস্থার ওই সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভা, পার্লামেন্টের মতো সরকারি ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেবে রাশিয়া। তারা জার্মানির মতো ইউক্রেনকেও পূর্ব ও পশ্চিম দুই ভাগে ভাগ করতে চায়।

যুদ্ধ করার উপযুক্ত সবাইকে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন সরকার। একই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য একটি ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কি। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান নতুন করে রাশিয়ার ব্যাংক, কোম্পানি ও ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।

বিবিসি জানায়, গত কয়েক দশকের মধ্যে এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে মনে করা হচ্ছে। এখন ইউক্রেন জুড়ে যুদ্ধ চলছে। বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভে বড় যুদ্ধ হচ্ছে। এছাড়া উত্তর ইউক্রেন ও দক্ষিণের ওডেসায় লড়াই চলছে। এছাড়া কিয়েভের বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে রুশ সেনারা। একই সঙ্গে সরকারি ভবন দখল করে রুশ নেতাদের প্রবেশ করাবে।

গতকাল সকাল থেকে কিয়েভে একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। কিয়েভে রাশিয়ার একটি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। অপরদিকে ইউক্রেনের বড় বড় অনেক শহর এবং সেনা ঘাঁটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, কিয়েভের উপকণ্ঠের ডাইমার এবং ইভানকিভ শহরে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে। সেখানে রাশিয়ার বেশ কিছু সাঁজোয়া যান অগ্রসর হতে দেখা গেছে। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বলেছে, রাজধানীর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। রুশ সৈন্যদের কিয়েভে প্রবেশ ঠেকাতে উত্তর পশ্চিমের টেটেরিভ নদীর সীমান্ত এলাকার একটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেন সৈন্যরা।

এদিকে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান য়েল ম্যাক্রোঁ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে টেলিফোন করে আবারো হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে পুতিন বলেছেন, রাশিয়াকে রক্ষায় আর কোনো বিকল্প ছিল না।

মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, কিয়েভ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ থামবে না। প্রেসিডেন্ট পুতিন মস্কোবিরোধী জেলেনস্কি সরকারকে হটাতে সবধরনের চেষ্টা করবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশ্বাস, রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বড় শহরগুলোতে আক্রমণের পেছনে এটি রাশিয়ার পরিকল্পনার একটি অংশ। ইউক্রেনের বাইরেও রুশ আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তবে ন্যাটো মিত্রদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারাবদ্ধ।

ব্লিঙ্কেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ন্যাটোর একটি সদস্যকে আক্রমণ করার অর্থ এর সব সদস্যের ওপর আক্রমণ। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অবস্থান পরিষ্কার, আমরা ন্যাটো অঞ্চলের প্রতি ইঞ্চি জায়গা রক্ষা করবো। আমি মনে করি, ইউক্রেনের বাইরে আক্রমণের ক্ষেত্রে পুতিনের বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবন্ধক।

তবে কিয়েভ নিয়ে রাশিয়ার পরিকল্পনার কথা ইউক্রেনের প্রাভদা ওয়েবসাইটকে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সূত্র। যদিও এটি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য নয়, তবে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার লক্ষ্য, কিয়েভের প্রধান বিমানবন্দর দখল করে বিমান চলাচলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। এরপর সেই বিমানবন্দর ব্যবহার করে ১০ হাজার সৈন্য নামানো।

আর তার মধ্যে সীমান্তে হামলা অব্যাহত রেখে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ব্যস্ত রাখা। কিয়েভের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নাশকতা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে ঠেলে দিয়ে ইউক্রেনীয় সেনাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি। এর সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের আটক করে রাশিয়ার শর্ত মানতে বাধ্য করা। আর রুশপন্থি নেতাদের ক্ষমতায় বসিয়ে সাবেক পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মতো ইউক্রেনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা।

যদিও যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে।

এর আগে মস্কোর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। এর কয়েক মিনিট পরই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। একই সঙ্গে সেখানে ‘শান্তি ফেরাতে’ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ভারতে মসজিদের স্থানে মন্দির দাবি করে জরিপের চেস্টায় উত্তেজনা, পুলিশের গুলিতে ৩ মুসল্লি নিহত (ভিডিওসহ)

যেকোন মুহূর্তে কিয়েভের পতন

আপডেট: ০৩:১৯:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২

মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সেনারা। যেকোনো মুহূর্তে পতন হতে পারে কিয়েভের। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, কিয়েভের কেন্দ্রস্থলে পার্লামেন্ট ভবন থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার উত্তরে ওবোলন জেলায় অবস্থান করছে রাশিয়ার সেনারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, ওবোলনের বিভিন্ন সড়কে চলছে রুশ ট্যাংক।

এদিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়ার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। একটু পরপরই কিয়েভে বেজে উঠছে সাইরেনের শব্দ। আকাশে উড়ছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্থানীয়দের একাংশকে মলোটোভ ককটেল দিয়ে রুশ সেনাদের প্রতিরোধের আহ্বান জানান। অন্য অংশকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার কথা বলেছেন তারা।

যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পালাচ্ছে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক। অনেকে পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ ইউক্রেনীয় নিজের এলাকায় বাঙ্কারে, ভূগর্ভস্থ স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ ইউক্রেনের স্টেট বর্ডার গার্ড সার্ভিসেস জানিয়েছে, যুদ্ধ করতে সক্ষম নাগরিকদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের জন্য। মার্শাল ল যতদিন জারি থাকবে, ততদিন এই বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, তাদের টার্গেটগুলোর মধ্যে আমাকে এক নম্বরে রেখেছে শত্রুরা, দুই নম্বরে আমার পরিবার। তারা রাষ্ট্রপ্রধানকে নিঃশেষ করে ইউক্রেনকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করতে চায়। কিন্তু আমি রাজধানীতেই থাকব। আমার পরিবারও ইউক্রেনেই আছে।

তবে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেন পুরোপুরি দখল করে নেওয়ার ইচ্ছা নেই রাশিয়ার। মস্কো শুধু ইউক্রেনকে সামরিকভাবে নিরস্ত্র করতে চায়। এ জন্য ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে ক্রেমলিন। দেশটিকে এখন নিজেদের ভাগ্য বেছে নিতে হবে।

দৃশ্যত রাশিয়ার অভিযানের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই নাজেহাল ইউক্রেনীয় বাহিনী। রাজধানী কিয়েভ পতন ঘটাতে উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণের কয়েকটি প্রবেশদ্বার দিয়ে কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনারা। যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালাতে চালাতে প্রবেশ করছে রাজধানীতে। একই সঙ্গে ট্যাংক ও ভারী যান বাহন নিয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ইউক্রেনের একটি গোয়েন্দা সূত্র ইউক্রেনস্কা প্রাভদাকে জানিয়েছে, রাজধানী নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কিয়েভের প্রধান বিমানবন্দর দখল করার পাশাপাশি রুশ সেনাদের অবতরণের জন্য বিমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। আর সেভাই পরিকল্পনা মোতাবেক এগুচ্ছে তারা। গোয়েন্দা সংস্থার ওই সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভা, পার্লামেন্টের মতো সরকারি ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেবে রাশিয়া। তারা জার্মানির মতো ইউক্রেনকেও পূর্ব ও পশ্চিম দুই ভাগে ভাগ করতে চায়।

যুদ্ধ করার উপযুক্ত সবাইকে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন সরকার। একই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য একটি ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কি। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান নতুন করে রাশিয়ার ব্যাংক, কোম্পানি ও ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।

বিবিসি জানায়, গত কয়েক দশকের মধ্যে এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে মনে করা হচ্ছে। এখন ইউক্রেন জুড়ে যুদ্ধ চলছে। বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভে বড় যুদ্ধ হচ্ছে। এছাড়া উত্তর ইউক্রেন ও দক্ষিণের ওডেসায় লড়াই চলছে। এছাড়া কিয়েভের বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে রুশ সেনারা। একই সঙ্গে সরকারি ভবন দখল করে রুশ নেতাদের প্রবেশ করাবে।

গতকাল সকাল থেকে কিয়েভে একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। কিয়েভে রাশিয়ার একটি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। অপরদিকে ইউক্রেনের বড় বড় অনেক শহর এবং সেনা ঘাঁটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, কিয়েভের উপকণ্ঠের ডাইমার এবং ইভানকিভ শহরে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে। সেখানে রাশিয়ার বেশ কিছু সাঁজোয়া যান অগ্রসর হতে দেখা গেছে। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বলেছে, রাজধানীর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। রুশ সৈন্যদের কিয়েভে প্রবেশ ঠেকাতে উত্তর পশ্চিমের টেটেরিভ নদীর সীমান্ত এলাকার একটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেন সৈন্যরা।

এদিকে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান য়েল ম্যাক্রোঁ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে টেলিফোন করে আবারো হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে পুতিন বলেছেন, রাশিয়াকে রক্ষায় আর কোনো বিকল্প ছিল না।

মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, কিয়েভ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ থামবে না। প্রেসিডেন্ট পুতিন মস্কোবিরোধী জেলেনস্কি সরকারকে হটাতে সবধরনের চেষ্টা করবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশ্বাস, রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বড় শহরগুলোতে আক্রমণের পেছনে এটি রাশিয়ার পরিকল্পনার একটি অংশ। ইউক্রেনের বাইরেও রুশ আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তবে ন্যাটো মিত্রদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারাবদ্ধ।

ব্লিঙ্কেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ন্যাটোর একটি সদস্যকে আক্রমণ করার অর্থ এর সব সদস্যের ওপর আক্রমণ। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অবস্থান পরিষ্কার, আমরা ন্যাটো অঞ্চলের প্রতি ইঞ্চি জায়গা রক্ষা করবো। আমি মনে করি, ইউক্রেনের বাইরে আক্রমণের ক্ষেত্রে পুতিনের বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবন্ধক।

তবে কিয়েভ নিয়ে রাশিয়ার পরিকল্পনার কথা ইউক্রেনের প্রাভদা ওয়েবসাইটকে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সূত্র। যদিও এটি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য নয়, তবে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার লক্ষ্য, কিয়েভের প্রধান বিমানবন্দর দখল করে বিমান চলাচলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। এরপর সেই বিমানবন্দর ব্যবহার করে ১০ হাজার সৈন্য নামানো।

আর তার মধ্যে সীমান্তে হামলা অব্যাহত রেখে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ব্যস্ত রাখা। কিয়েভের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নাশকতা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে ঠেলে দিয়ে ইউক্রেনীয় সেনাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি। এর সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের আটক করে রাশিয়ার শর্ত মানতে বাধ্য করা। আর রুশপন্থি নেতাদের ক্ষমতায় বসিয়ে সাবেক পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মতো ইউক্রেনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা।

যদিও যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে।

এর আগে মস্কোর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। এর কয়েক মিনিট পরই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। একই সঙ্গে সেখানে ‘শান্তি ফেরাতে’ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেন।