মোহাম্মদ হাবীবউল্যাহ॥
আষাঢ়ে অনাবৃষ্টির কারণে চলিত মৌসুমে মুড়ি, আউশ ও আমন ধানের আবাদ নেই হাজীগঞ্জে। এতে করে উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে। এ সময়ে মাঠ, ঘাট পানিতে চারিদিক থৈ থৈ করার কথা থাকলেও এলাকার মাঠগুলি এখনও রয়েছে শুকনো। পানির অভাবে কৃষক মাঠে হাল চাষ করতে না পেরে মাঠগুলি এখন শুধু গরুর ঘাস খাওয়ার উপযোগী হয়ে রয়েছে।
জানা গেছে, জৈষ্ঠের শেষ দিকে এবং আষাঢ়ের প্রথমে বৃষ্টি হলে মুড়ি (বোরো ধানের মুড়ি থেকে থেকে জন্মানো গাছের ধান) ও আউশ ধানের চাষ করা হয়। কিন্তু এ বছর অনাবৃষ্টির ফলে মাঠে পানি না থাকায় মুড়ি ও আউশের চাষ হয়নি। এখন আমন চাষের ভরা মৌসুম, কিন্তু আষাঢ়ের শেষ দিকেও কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে পানি নেই। যার ফলে কৃষক বীজতলা তৈরি করতে পারেনি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মুড়ি, আউশ ও আমন ধান চাষে, প্রকৃতির বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকেন চাষিরা। কিন্তু আষাঢ় মাস শেষের দিকে। অথচ এ মাসে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফসলের মাঠ পানিশূন্য অবস্থায় রয়েছে। যার ফলে মুড়ি ও আউশ ধানের সময় পার হয়ে গেছে। এখন আমনের চারা রোপনের উপযুক্ত সময় হলেও, মাঠে পানি নেই। এতে করে মাঠের পর মাঠ জমি অনাবাদি পড়ে আছে।
যদিও অন্যসব এলাকা থেকে, এ অঞ্চলে মুড়ি, আউশ ও আমন ধানের চাষ তুলনামূলক কম আবাদ হয়ে থাকে, তারপর যতটুকু হওয়ার কথা, এবার তাও হচ্ছেনা। এ জন্য কৃষক ও উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। কৃষক বলছেন, তারা এ বিষয়ে কৃষি অফিসের পরামর্শ পায়নি এবং ধানের বীজ কারা, কোথায় বিক্রি করছে, তাও তারা জানেনা। অপর দিকে, কৃষি অফিস বলছে এ অঞ্চলে মুড়ি, আউশ ও আমন ধান চাষ তেমন একটা হয়না। যতটুকু হয়, এবার অনাবৃষ্টির কারনে তা হচ্ছেনা।
অথচ সমকালীন শষ্য উৎপাদনে কৃষকদের ব্লক ভিত্তিক পরামর্শ দেয়া হয়। জানা মতে, প্রতিটি ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। ১টি ওয়ার্ডে ৩ টি ব্লক এবং প্রতিটি ব্লকে ১২ টি গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ২০-২৫ জন সদস্য (কৃষক/চাষী) রয়েছেন। একজন ব্লক সুপারভাইজার (মাঠ কর্মকর্তা) প্রতিদিন ২ টি গ্রুপ নিয়ে কাজ করবেন। এই গ্রুপের সদস্যগণ অন্য কৃষকদের গ্রুপের আলোচনা বিষয়ে অবহিত করবেন। কিন্তু বোরো মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে ব্লক সুপারভাইজারদের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি বলে কৃষকদের অভিযোগ।
এ ব্যাপারে বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর মাঠ (খাইল্লা‘র বিল) এর স্কীম ম্যানেজার লিটন মজুমদার ও একই মাঠের কৃষক শামছল আলম খাঁন জানান, আউশ-আমন চাষে আমরা কোন ধরনের পরামর্শ পাইনা। তাছাড়া এ ধানের বীজ কোথায় পাওয়া যায়, তা আমরা জানিনা। তারা বলেন, শুধুমাত্র ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষি অফিসাররা আমাদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সদর ইউনিয়নের কাজিরগাঁও বিলে জমি রয়েছে, এমন একজন ভূমির মালিক ও হাজীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন ফারুক বলেন, জমিগুলো অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে। সঠিক পরামর্শ পেলে জমিগুলোকে কাজে লাগানো যেতে বলে তিনি জানান।।
উপজেলার বাকিলা বাজারের সার ও বীজ বিক্রেতা সৈয়দ আহম্মদ হাওলাদার জানান, আউশ ও আমন ধান বীজের চাহিদা নেই।
উপ-সহকারী পরিচালক, উপজেলা বীজ বিপনন বিভাগের কর্মকর্তা খায়রুল বাসার জানান, পর্যাপ্ত পরিমানে আউশ-আমনের বীজ রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত এক কেজি বীজও কারো কাছে (ডিলার বা কৃষক) বিক্রি করতে পারিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষকের চাহিদা না থাকা, আমাদের কাছ থেকে ডিলাররা বীজ নিচ্ছেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্রধর জানান, উপজেলায় আউশ-আমনের চাষ তেমন একটা হয় না এবং কৃষকরা আগ্রহী নন। তাছাড়া এ বছর অনাবৃষ্টির কারনে, মাঠে পানি থাকায় কৃষক বীজতলা তৈরি করতে পারেন নি। যার ফলে জমিগুলো অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কারনে উপজেলায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর কৃষি জমি কমেছে।
শিরোনাম:
আউশ ও আমনের আবাদ নেইহাজীগঞ্জে অনাবৃষ্টিতে অনাবাদী ১০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি
Tag :
সর্বাধিক পঠিত