আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দুই দেশের সীমান্তবর্তী বিতর্কিত অঞ্চল দিয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ভারতের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নেপাল। ওই সড়ক দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত বলে বিবৃতি দিয়েছে কাঠমান্ডু।
নেপালের অঞ্চল দিয়ে ভারত কেন রাস্তা নির্মাণ করছে সে বিষয়ে জানতে সোমবার কাঠমান্ডুতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার রাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ভিডিও কনফারেন্সে ধারচুলা থেকে চীন সীমান্তে লিপুলেখ পর্যন্ত হিমালয়ের ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা উদ্বোধন করেন। রাস্তাটি নির্মাণ হলে নয়াদিল্লির সঙ্গে তিব্বতের মালভূমিতে অবস্থিত সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান কৈলাস-মানস সরোবরের দূরত্ব অনেকটা কমে যাবে। তবে যে অঞ্চল দিয়ে রাস্তাটি যাচ্ছে তা নিজেদের বলে দাবি করেছে নেপাল।
বিষয়টি ভারতের একতরফা স্বেচ্ছাচারিতা আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গিয়াওয়ালি।
শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, নেপালের অঞ্চল দিয়ে যাওয়া ভারতের সড়ক উদ্বোধনের বিষয়ে সরকার ব্যথিত হয়েছে। ভারতের এই কর্মকাণ্ড ‘দুই দেশ যে বোঝাপড়ায় পৌঁছেছিল তার বিরোধী। ওই বোঝাপড়ায় সীমান্ত সংক্রান্ত ইস্যুগুলো পারস্পারিক আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করার কথা হয়েছিল।’
এ বিষয়ে নেপালের অভিযোগ, এ সড়ক উদ্বোধনের মাধ্যমে ভারত দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি লঙ্ঘন করছে।
কারণ, ১৮১৬ সালের সুগৌলি চুক্তি অনুসারে মহাকালী নদীর পূর্ব দিকের অঞ্চলটি তাদের, যার মধ্যে পড়ে লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি এবং লিপুলেখ। তাই ‘নেপালের সীমানা’দিয়ে যে কোনো কাজ ভারত যেন বন্ধ রাখে।
তবে কাঠমাণ্ডুর আনা সীমান্ত লঙ্ঘনসহ সব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে ভারত।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলায় ধারচুলা থেকে লাচীন সীমান্তে লিপুলেখ পর্যন্ত সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া রাস্তা পুরোপুরি ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যেই পড়ে। রাস্তাটি সেখানে আগে থেকে ছিল। ওই রাস্তাটি কৈলাসের মানস সরোবর যাত্রায় তীর্থযাত্রীরা ব্যবহার করে। এখন শুধু তীর্থযাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত সুগম করতে সেই একই রাস্তা চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আগে মানস সরোবর যাত্রা সম্পূর্ণ করতে ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের তিন সপ্তাহ লাগত। কিন্তু নবনির্মিত ৮০ কিলোমিটার রাস্তাটির মাধ্যমে তা শেষ হবে মাত্র এক সপ্তাহেই।
এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নির্মিতব্য রাস্তাটি পুরোপুরি ভারতীয় সীমানায় অবস্থিত। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উত্তরাখন্ড রাজ্যের পিথোরাগড় জেলায় সম্প্রতি উদ্বোধন করা রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে ভারতের সীমানায় অবস্থিত। এই রাস্তাটি আগে থেকে থাকা একটি রাস্তার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই রাস্তাটি কৈলাসের মানস সরোবর যাত্রায় তীর্থযাত্রীরা ব্যবহার করে। বর্তমান প্রকল্পের অধীনে তীর্থযাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত সুগম করতে সেই একই রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে।’
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য নেপাল ও ভারত নিজস্ব পদ্ধতি বানিয়ে নিয়েছে। নেপালের সঙ্গে সীমানা নির্ণয়ের কাজ চলছে। অনিষ্পন্ন সীমান্ত ইস্যুগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক আলোচনা এবং নেপালের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আলোকে সমাধানের জন্য ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
উল্লেখ্য, সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে একাধিক মতবিরোধ রয়েছে নেপালের। ২০১৫ সালে লিপুলেখ পাসকে চীন ও ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক রুট ঘোষণা করে বিবৃতি দিলে তার প্রতিবাদ জানায় কাঠমান্ডু।
তথ্যসূত্র: আলজাজিরা, এনডিটিভি, ওয়ান ইন্ডিয়া