মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ:
চাঁদপুরে ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কি যেনো নেই। আগের ধানের মাঠে লেবার নেই। জমিনে পাকা ধান দোলছে দক্ষিণে বাতাসে। শো-শো মন মাতানো গন্ধে মন উজাড় হয়ে যায়। এ সময় কৃষকের মুখে থাকে আনন্দের হাসি। কৃষাণিরা ব্যস্ত থাকে ধান শুকাতে। এবার সব কিছুই যেনো ম্লান হতে চলেছে। লেবারের অভাবে পাকা ধান মাঠেই রয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর জেলায় ধান কাটা প্রায় ৮ উপজেলাতেই শুরু হয়েছে। তবে মতলবের উত্তরে পানি উন্নয়ণ বোর্ডের বাঁধের ভেতরের ধান মে’র প্রথমে কাটা শুরু হবে।
এ ছাড়া জেলার চাঁদপুর সদর, শাহরাস্তি, কচুয়া, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর সদর, হাইমচর. ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। রয়েছে প্রচণ্ড লেবার সংকট।
এ দিকে চাঁদপুরের সবকটি উপজেলায় পাকা ধান কাটতে দ্রুত নির্দেশ দিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
বৃহস্পতিবার(২৫) জেলা সম্মেলন কক্ষে সকল কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভায় এই নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই সভায় কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবদুর রশিদ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
আরো পড়ুন; হাজীগঞ্জে টিসিবির পণ্য কিনতে লজ্জা ভেঙে লাইনে মধ্যবিত্তরাও
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নির্দেশনা পোস্ট করেছেন।
তিনি আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন,‘চলতি মাসের শেষ দিকে মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। নিম্নচাপটি শক্তিশালী হয়ে ২৮, ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের পর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। হাজীগঞ্জ উপজেলার কৃষক /চাষিদের দ্রুত পাকা ধান সংগ্রহ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন।’
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্রধর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য মতে জেলায় যাদের ধান পেকেছে, তাদের ধান দ্রুত কেটে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়। আমরা সকল ইউনিয়ন ব্লক সুপার ভাইরাজদের মাধ্যেমে এই প্রচারণা কাজ করছি।
চলতি বছরে চাঁদপুরে ৬৫ হাজার ২’শ হেক্টর ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার মণ।
আরো পড়ুন; জেলার ৮ উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালতে অর্থদণ্ড ৩৪ হাজার ৮’শ টাকা
হাজীগঞ্জের দেশাগাঁওয়ের কৃষক হুমায়ুন জানান ৫ কানি জমিনে ধান করেছি। কানি প্রতি ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রায় ৪’শ মন ধান পাওয়ার আশা করছি। কিন্তু লেবারেরর কারণে ধান কাটা বন্ধ রয়েছে।
এ চাষি জানান, আমরা সাধারণত রংপুর, দিনাজপুর থেকে লেবার এনে কাজ করায় এতে ওই সব লেবাররা সকাল ৮ থেকে ৪/৫টা পর্যন্ত একটানা কাজ করে। তাদের মাথা পিছ তিন বেলা খাওয়া দাওয়া করাইয়া ৪/৫শ টাকা দিলেই চলে। এছাড়া রাতের বেলা বৃষ্টি বাদল হলে তাদেরকে ডাক দিলে রাতেও কাজ করে। অপর দিকে স্থানীয় লেবার নিলে তাদের চাহিদা হলো ৭/৮ টাকা সকাল ৮ টা বাজে মাঠে গিয়ে ২টায় চলে আসে। এতে চাষিরা বেকায়দায় পড়তে হয়। আবার স্থানীয় লেবার কাজ ঠিকমতো করতেও চাইনা।
তিনি বলেন, এবার লকডাউনের কারণে ওইসব লেবার আসতে পারছেনা। তাই আমরা বিপাকে আছি। মনে হয় ফলন ভালো হলেও ঘরে তোলা যাবেনা। আকাশের অবস্থাও ভালোনা।
আরো পড়ুন;মতলব উত্তরে নিখোঁজের এক মাস পর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার
একই গ্রামের কৃষক উজ্জল জানান, প্রতিবার এ সময়ে আমার ধান কাটা শেষ হয়ে যায়। চলে মাড়াই। এবার এখনো ধানে কাচি দিতে (কাটা শুরু) পারিনাই। আল্লাহই জানে কি হয়।
এ কৃষক জানান, রংপুর থেকে লেবার এসে চট্রগ্রাম বসে আছে। প্রতি মূহুর্তে মোবাইলে যোগাযোগ হচ্ছে। গাড়ী না পাওয়া তারা আসতে পারছেনা।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রশাসনের লোকজন যদি লেবারদের আনার ব্যবস্থা করতো বা সুযোগ করে দিতে তাহলো কৃষক কিছুটা হলেও উপকার পেতো।