গত ১৩/০৩/২০২০ সকাল বেলা মতলব উওরথানাধীন রায়পুর ইসলামাবাদ গ্রামে ধানক্ষেতের মাঝে একটি বস্তাবন্দী লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় জনগন মতলব উত্তর থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশটি পুকুর থেকে পাড়ে উঠায়। পুলিশ লাশ পুকুর থেকে পাড়ে তোলার পর লাশের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে য়ায়। কেননা লাশটির চেহারা খুবই ভীবৎস ছিল।
এবার লাশটি কার তা খোঁজার পালা। অনেক খোজখবর নেওয়ার পর অবশেষে জানা যায় লাশটি পাশ্ববর্তী ইন্দুরিয়া গ্রামের মোঃ ইব্রাহীম পাটোয়ারীর।
এবার হত্যাকান্ডের আসল কারন ও হত্যাকারীদের খোঁজার পালা।
থানা পুলিশ সংবাদ পাইয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর হতে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। ভিকটিমের মৃত দেহ দেখে তাহার স্ত্রী সন্তান সনাক্ত করে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করিয়া গোপন সূত্রে প্রাপ্ত আসামীদের অবস্থান সনাক্ত পূর্বক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, মতলব সার্কেল, চাঁদপুর এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসির উদ্দিন মৃধা ও পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল এর সার্বিক তত্বাবধানে মতলব উত্তর থানার চৌকস এসআই মোঃ মহি উদ্দিন আহম্মেদ, এসআই নাহিদ হোসেন, এএসআই আনিছুর রহমান চৌধুরী সংগীয় ফোর্সের সহায়তায় লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযান পরিচালনা করিয়া ১৪/০৩/২০২০ ইং তারিখ এক আসামীকে ঢাকা সায়দাবাদ ও অপর আসামীকে নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধীরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে আসামীদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত কাচি ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।
এবার আসি মূল ঘটনায়। কি ঘটেছিল সেদিন?
গত ০৭/০৩/২০২০ ইং তারিখ মতলব উত্তর থানাধীন দক্ষিণ ইসলামাবাদ গ্রামের (ভিকটিম) মৃত ইব্রাহীম পাটোয়ারী তাহার মালিকানাধীন দুইটি ইজিবাইক ১,৭০,০০০/- (এক লক্ষ সত্তর হাজার) টাকায় বিক্রি করে। উক্ত ইজিবাইক বিক্রির টাকা তার কাছেই থাকতো। ইব্রাহীমের বন্ধু আসামী ১। মোঃ আরিফ হোসেন(৩২), পিতা- মোঃ নুরুল ইসলাম, মাতা- মরিয়ম বেগম, সাং- দক্ষিণ ইসলামাবাদ (প্রধানীয়া বাড়ী), ২। মোঃ সবুজ(২৮), পিতা- মোঃ শহিদুল ইসলাম, মাতা- রওশন আরা বেগম, সাং- ইন্দুরিয়া ইসলামাবাদ (প্রধানীয়া বাড়ী), উভয় থানা- মতলব উত্তর, জেলা- চাঁদপুরদ্বয় জানতো। তারা সব সময়ই ইব্রাহীমের সাথে চলাফেরা করিত। উক্ত আসামীদ্বয় উক্ত টাকা আত্মসাৎ করার জন্য ইব্রাহীমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। গত ০৯/০৩/২০২০ ইং তারিখ রাত অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় আসামী মোঃ আরিফ মোঃ সবুজ ভিকটিম ইব্রাহীমকে তাহার ঘর হইতে ডাকিয়া নিয়া ভুট্টা ক্ষেতের আইল এ নিয়া যায়। সেখানে পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী আরিফের পকেটে থাকা একটি রশি দিয়ে ভিকটিম ইব্রাহীমের গলায় টান দিলে ভিকটিম ইব্রাহীম উপুর হইয়া পরিলে আসামী সবুজ ভিকটিম ইব্রাহীমের মাথার উপর পা দিয়া চাপা দিয়া রেখে ভিকটিমকে হত্যা করে। তৎক্ষনাৎ আসামীদ্বয় ভিকটিম ইব্রাহীমের পরিহিত লুঙ্গী কাটিয়া মৃত দেহের হাত ও পা বাঁধিয়া ফেলে। হত্যা নিশ্চিত করিয়া ভিকটিম ইব্রাহীম এর মৃত দেহ ঘটনাস্থল ভুট্টা ক্ষেতে রাখিয়া ভিকটিম ইব্রাহীমের সাথে থাকা ইজিবাইক বিক্রির নগদ টাকা নিয়া যায়। ভিকটিম ইব্রাহীমের পরিহিত এক জোড়া স্যান্ডেল ঘটনাস্থল ভুট্টা ক্ষেত হইতে অনুমান ১০০ ফুট দক্ষিণে জনৈক হুমায়ুন কবিরের মালিকানাধীন ধান ক্ষেতের উত্তর পাশে পানি ভর্তি ছোট গর্তের মধ্যে মাটি চাপা দিয়া দাসের বাজারে যায়। এক পর্যায়ে আসামীদ্বয় উক্ত লাশ কোথাও গুম করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১০/০৩/২০২০ ইং তারিখ রাত অনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময় ১নং আসামী আরিফ হোসেন তাহার বসত ঘর হইতে একটি ধান কাটার কাঁচি ও প্লাস্টিকের বস্তা নিয়া যাওয়ার পথে ভুট্টা ক্ষেতের পাশে থাকা একটি ট্রাক্টর হইতে একটি মোটা রশি খুলিয়া নিয়া ২নং আসামী সহ ঘটনাস্থল ভুট্টা ক্ষেতে যায়। ১নং আসামী মোঃ আরিফ হোসেন ভিকটিম ইব্রাহীমের মৃত দেহ কাঁধে করিয়া ঘটনাস্থল হইতে অনুমান ১৫০/১৮০ গজ উত্তর দিকে বিলের মধ্যে জনৈক আঃ কাদিরের মাছ চাষের পুকুর পাড় নির্জন স্থানে নিয়া যায়। মৃত দেহ পুকুর পাড়ে রাখিয়া ১ ও ২নং আসামী পুকুরের অনুমান ১৫০ গজ দূরে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে নির্মানাধীন বিল্ডিং হইতে কয়েকটি ইট বহন করিয়া পুকুর পাড়ে আসে। ১নং আসামী মোঃ আরিফ হোসেন মৃত দেহের পা দুইটি ২নং আসামীর সহায়তায় প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে মৃত দেহের কোমর পর্যন্ত প্রবেশ করায়। তখন ১নং আসামী আরিফ হোসেন বাড়ী হইতে আনা কাঁচি দ্বারা ভিকটিম ইব্রাহীমের পেট কাটিয়া পেটের ভিতর ইট ঢুকাইয়া দেয়। পরবর্তীতে আসামীদ্বয় ভিকটিমের লাশ বন্দি বস্তার মধ্যে আরো কয়েকটি ইট ঢুকাইয়া বস্তাটি কালো নাইলনের রশি দ্বারা বাঁধিয়া ধরাধরি করিয়া পুকুরের পানিতে ডুবাইয়া দেয়। বস্তাবন্দি লাশ পুকুরের পানিতে ডুবে গেছে মর্মে নিশ্চিত হইয়া আসামীদ্বয় বাড়তে আসিয়া ভিকটিম ইব্রাহীমের নিকট থেকে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করিয়া নেয়।
মাত্র ১ লক্ষ টাকার জন্য বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন!!!
কতোটা নির্দয় হয়েছে মানুষ।
লেখা- মোঃ এনামুল হক রাব্বী,
এএসআই (নিরস্ত্র)
ইনচার্জ এলআইসি (আইসিটি)
চাঁদপুর।