অনলাইন ডেস্ক:
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপি নাজির আহমেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক মা ও তার ছেলেকে পুঁতে ফেলার একটি ভিডিও টুইট করেছেন। টুইটে তিনি দাবি করেন, ভারতের ফ্যাসিস্টরা এক মুসলিম মা এবং তার ছেলেকে জীবন্ত পুঁতে ফেলেছে।
টুইটে সতর্ক করে দিয়ে তিনি লিখেছেন, ভারতে ফ্যাসিস্টদের হাতে এক মা ও তার ছেলেকে জীবন্ত পুঁতে ফেলার ভয়ঙ্কর ভিডিও। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে তারা উদ্ধার হয়েছে।
ভিডিওটি বর্তমানে টুইটারে পাওয়া যাচ্ছে না। নাজির আহমেদের এই টুইট মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি রিটুইট করেন অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষ। শুধু তাই নয়, এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৭০ হাজারের বেশি।
একই ভিডিও টুইট করেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর মুহাম্মদ আরিফ। ভিডিওটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ভারতে মুসলিমদের জীবন্ত পুঁতে ফেলা হচ্ছে।
মুহম্মদ আরিফের এই টুইট ৩ হাজার ১০০ বারের বেশি রিটুইট করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভিডিওটি দেখেছেন ৮৪ হাজারের বেশি মানুষ।
ভিডিওটি কি আসলেই সত্য?
ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া এই ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়েছে। তারা বলছে, এ ভিডিওটি চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকের। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের একটি গ্রামে এ ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
এতে দেখা যায়, আকবর আলী নামের এক ব্যক্তি তার স্ত্রী এবং সন্তানকে হত্যার পর মাটিতে পুঁতে ফেলেন। এ খবর পাওয়ার পর উত্তেজিত গ্রামবাসী আকবর আলীর বাড়িঘর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে আলী গ্রাম থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক কোনো সম্পর্ক নেই।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার ফ্যাক্ট চেক পদ্ধতি
ভারতীয় এই দৈনিকের ফ্যাক্ট চেকে দেখা যায়, ভিডিওটিতে লোকজন বাংলায় কথা বলছেন। গত ৩১ জানুয়ারি টাইমস অব ইন্ডিয়ার বাংলা সংস্করণ এই সময় পত্রিকা একটি খবর প্রকাশ করে। এর শিরোনাম লেখা হয়, স্ত্রী এবং সন্তানকে হত্যা করেছে এই যুবক।
প্রতিবেদনে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট। এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে ফ্যাসিস্টরা এই নারী এবং তার সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্তান ও স্ত্রীকে হত্যার পর মাটিতে পুঁতে ফেলেছে আকবর আলি নামের ওই ব্যক্তি। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে উদ্ধার করা হয় তাদের দেহ। স্থানীয়রা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে যায় যে, আকবর আলির বাড়ি ভাঙচুর করে সেখানে আগুনও ধরিয়ে দেয়। আকবর আলি পলাতক বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়।
সত্য তথ্য
টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের এ ঘটনার ভয়ানক ওই ভিডিওটি যারা শেয়ার করেছেন, তাদের অধিকাংশই পাকিস্তানি। তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কথা উল্লেখ করে দাবি করেছেন, মুসলিম মা-ছেলেকে জীবন্ত পুঁতে ফেলছে ভারতের ফ্যাসিস্টরা। তবে এই দাবি সত্য নয় এবং এ ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সহিংসতারও কোনো সম্পর্ক নেই।