• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

গ্রেফতার এড়াতে ২০ দেহরক্ষী নিয়ে নিজ কার্যালয়ে ঘুমাচ্ছে ক্যাসিনো সম্রাট

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

অনলাইন ডেস্ক:

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি। সম্রাটের নেশা ও পেশা জুয়া খেলা। তিনি একজন পেশাদার জুয়াড়ি। কথিত আছে, আলোচিত এই সম্রাট টাকার বস্তা নিয়ে জুয়া খেলতে যান সিঙ্গাপুরে। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর থেকেই গ্রেফতারে আলোচনায় আসে সম্রাটের নাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই সম্রাটকে নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গুঞ্জন ছিল অবৈধভাবে চাঁদাবাজি ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনার কারণে বুধবারই হয়তো সম্রাটকেও গ্রেফতার করা হবে। বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (ক্রীড়া চক্র) ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর তাকে গ্রেফতারের গুঞ্জন আরও জোরদার হয়। তবে গ্রেফতার আতঙ্কে হাজার সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে কাকরাইলের যুবলীগের কার্যালয়ে রাতযাপন করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেফতার হওয়ার পর সেই রাতে কাকরাইলে নিজের কার্যালয়ে শতাধিক অনুসারীকে নিয়ে অবস্থান নেন সম্রাট। তারা গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে সম্রাটের পক্ষে স্লোগানও দেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চ পর্যায় ভালোভাবে নেয়নি বলে জানা গেছে। কী কারণে সম্রাট সেই রাতে এমন অবস্থান নিয়েছেন, তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটা সম্রাটের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।

রাজধানীর কাকরাইলে রাজমণি সিনেমা হলের ঠিক উল্টোপাশে আটতলা ভবন। লোকজন এই ভবনটিকে চেনেন ‘সম্রাটের’ অফিস হিসেবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ব্যক্তিগত অফিস এটি। গত বুধবার রাতেও এই অফিস ঘিরে নেতাকর্মীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এখন কোনও ভিড় নেই বললেই চলে। অনুসারী-নেতাকর্মীদেরও তেমন একটা দেখা মিলছে না অফিসের আশেপাশে। ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বেড়েছে নিরাপত্তা কর্মীদের চেকপোস্ট। ভবনে কার কাছে যাবেন? কোথায় যাবেন? কী কাজ? ইত্যাদি প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে প্রবেশকারীদেরকে। তবে ভবনের সামনে ও আশেপাশে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আর গণমাধ্যমকর্মীদের আনাগোনা গেল কয়েকদিনে অনেকটা বেড়েছে। আর তাতে সম্রাটের অনুসারীদের চোখেমুখেও বেড়েছে উদ্বেগ আর আতঙ্কের ছাপ।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ওই ভবনেই সম্রাট রয়েছেন। বুধবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিনি এই ভবন থেকে বের হননি। অনুসারীরা রীতিমতো ভবনটি ঘিরে এক প্রকার পাহারা বসিয়েছে।

সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে, ভবনটির চারতলায় নিজের কক্ষেই সম্রাট অবস্থান করছেন। সেখানেই তিনি ঘুমান। তার ঘুমের সময় ব্যক্তিগত দেহরক্ষী এবং বিশ্বস্ত অনুসারী মিলিয়ে অন্তত ২০ জন তাকে রাতভর পাহারা দেন। ভেতরেই সবার জন্য রান্নার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানেই তিনি খাওয়া-দাওয়া করেন। প্রতিদিন অন্তত ৩০০ কর্মীর জন্য ওই ভবনে রান্না খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়।

সম্রাটকে গ্রেফতার বা তার ‍বিরুদ্ধে কোনও আইনানুগ পদক্ষেপ র‌্যাব নেবে কি-না – জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারওয়ার-বিন-কাশেম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘ক্যাসিনো বিরোধী আমাদের অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কখন কোথায় অভিযান পরিচালনা করা হবে বা কাকে গ্রেফতার করা হবে তা কৌশলগত কারণে ডিসক্লোজ (প্রকাশ) করা হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খালেদ ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনও ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র‍্যাব। তাই যাদের নাম তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যাবে তাদেরকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগের একটি প্রতিবেদন এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার কিছু লোকজনের দৌরাত্ম্যে। এ বিষয়ে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয় তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

যুবলীগের মধ্যে এমন কথাও ছড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের মুখে গ্রেফতার এড়াতে সম্রাট বিদেশ চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, সম্রাটের হার্টে পেসমেকার বসানো রয়েছে। এ জন্য তিনি মাঝেমধ্যেই বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা করান। শিগগিরই বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। তার জরুরি চিকিৎসারও দরকার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি বিদেশ গেলে পালিয়েছেন বলে দুর্নাম রটবে। এ জন্য তিনি যাচ্ছেন না।

জানা গেছে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন।

এদিকে গত শনিবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘তথ্য-প্রমাণ পেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধেই তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার লোক হোক না কেন।’

দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নাম গণমাধ্যমে আসছে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যার (সম্রাট) নাম বলছেন সে ছাড়াও আমাদের সরকারের অন্য কেউ কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ালে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাবো তাকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।’

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • রাজনীতি এর আরও খবর
error: Content is protected !!