খালেদা জিয়ার ঈদ করবেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে

  • আপডেট: ০১:৪৩:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০১৯
  • ৪১

অনলাইন ডেস্ক:

দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত হয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্দী থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই ঈদও কাটবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। কারা হেফাজতে এ হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। সরকার-গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা চলছে তাঁর। জেলে যাওয়ার পর টানা চতুর্থ ঈদ পার হতে চললেও তাঁর দুই ঈদ কেটেছে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের কক্ষে। অসুস্থ হয়ে দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে ভর্তির পর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী গত ঈদুল ফিতর কাটিয়েছেন বিএসএমএমইউতেই। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে গত ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।

এদিকে ঈদের দিন হাসপাতালের প্রিজন সেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য ও বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা থাকলেও তাঁর মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ- হওয়া মামলা দুটিই। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন হলেই তাঁর মুক্তির পথ খুলবে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাই কোর্টে জামিনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। এরপর দফায় দফায় বৈঠক করলেও পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে সরকার-গঠিত মেডিকেল বোর্ড বলেছে, তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকার জানান, আগের চেয়ে অনেক ইমপ্রুভ হয়েছে। তবে তাঁর যে ধরনের সমস্যা তার ইমপ্রুভ হতে কিছুটা সময় লাগে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চিকিৎসক নেতা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, বেগম জিয়ার দুই হাতের গিরায় ব্যথা এখনো ভালো হয়নি। তাঁর খাবার খেতে কষ্ট হয়। ডায়াবেটিস এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সব মিলিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ভালো নেই। তাঁর সুচিকিৎসা জরুরি।’

দুই মামলায় জামিন পেলেই মুক্তি : বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে থাকা ৩৬ মামলার মধ্যে দুটি তাঁর মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে উচ্চ আদালতে বর্তমানে অবকাশকাল চলছে। ঈদের পর কোর্ট খুললেই এসব মামলায় জামিনের প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন আইনজীবীরা। আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলার ৫টিতে দুর্নীতির অভিযোগে আছে। সেগুলো হলো- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। এ পাঁচটি মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে (এক-এগারোর সময়) করা। বাকিগুলো হরতাল-অবরোধে নাশকতার মাধ্যমে মানুষ হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণ খেলাপের অভিযোগে বর্তমান সরকারের সময়ে করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই আবেদনে খালেদা জিয়ার জামিনও চাওয়া হয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের সাজা ও অর্থদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া। গত ৩১ জুলাই এ মামলায় জামিনের বিষয়ে শুনানি হলেও হাই কোর্ট খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়নি।

বিএনপির আইনজীবীদের একাধিক সূত্র জানান, জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা আপিলের বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। তবে নানা রকম মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পারেননি তারা।

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এখন মুক্তি পেতে হলে তাঁকে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন পেতে হবে। বর্তমানে ঈদুল আজহার কারণে উচ্চ আদালতে অবকাশ চলছে। তাই ঈদের পরই বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিনের বিষয়ে চেষ্টা চালানো যাবে।’

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না-রিজভী

খালেদা জিয়ার ঈদ করবেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে

আপডেট: ০১:৪৩:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত হয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্দী থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই ঈদও কাটবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। কারা হেফাজতে এ হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। সরকার-গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা চলছে তাঁর। জেলে যাওয়ার পর টানা চতুর্থ ঈদ পার হতে চললেও তাঁর দুই ঈদ কেটেছে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের কক্ষে। অসুস্থ হয়ে দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে ভর্তির পর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী গত ঈদুল ফিতর কাটিয়েছেন বিএসএমএমইউতেই। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে গত ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।

এদিকে ঈদের দিন হাসপাতালের প্রিজন সেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য ও বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা থাকলেও তাঁর মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ- হওয়া মামলা দুটিই। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন হলেই তাঁর মুক্তির পথ খুলবে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাই কোর্টে জামিনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। এরপর দফায় দফায় বৈঠক করলেও পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে সরকার-গঠিত মেডিকেল বোর্ড বলেছে, তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকার জানান, আগের চেয়ে অনেক ইমপ্রুভ হয়েছে। তবে তাঁর যে ধরনের সমস্যা তার ইমপ্রুভ হতে কিছুটা সময় লাগে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চিকিৎসক নেতা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, বেগম জিয়ার দুই হাতের গিরায় ব্যথা এখনো ভালো হয়নি। তাঁর খাবার খেতে কষ্ট হয়। ডায়াবেটিস এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সব মিলিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ভালো নেই। তাঁর সুচিকিৎসা জরুরি।’

দুই মামলায় জামিন পেলেই মুক্তি : বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে থাকা ৩৬ মামলার মধ্যে দুটি তাঁর মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে উচ্চ আদালতে বর্তমানে অবকাশকাল চলছে। ঈদের পর কোর্ট খুললেই এসব মামলায় জামিনের প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন আইনজীবীরা। আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলার ৫টিতে দুর্নীতির অভিযোগে আছে। সেগুলো হলো- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। এ পাঁচটি মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে (এক-এগারোর সময়) করা। বাকিগুলো হরতাল-অবরোধে নাশকতার মাধ্যমে মানুষ হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণ খেলাপের অভিযোগে বর্তমান সরকারের সময়ে করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই আবেদনে খালেদা জিয়ার জামিনও চাওয়া হয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের সাজা ও অর্থদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া। গত ৩১ জুলাই এ মামলায় জামিনের বিষয়ে শুনানি হলেও হাই কোর্ট খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়নি।

বিএনপির আইনজীবীদের একাধিক সূত্র জানান, জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা আপিলের বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। তবে নানা রকম মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পারেননি তারা।

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এখন মুক্তি পেতে হলে তাঁকে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন পেতে হবে। বর্তমানে ঈদুল আজহার কারণে উচ্চ আদালতে অবকাশ চলছে। তাই ঈদের পরই বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিনের বিষয়ে চেষ্টা চালানো যাবে।’