ঢাকা ০৬:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওসি প্রত্যাহারের খবরে থানায় পাওনাদারদের ভীড়

  • আপডেট: ১১:৪২:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
  • ১১৫

ওসি ফরিদ আহম্মেদ

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ছাড়াও নানাবিধ কর্মকাণ্ডের কারণে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার ওসিকে নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছিল। অবশেষে হঠাৎ প্রত্যাহার হলে আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) ভোরে কর্মস্থল ত্যাগ করেন তিনি।

এদিকে ওসির কর্মস্থল ত্যাগের খবর দেরিতে পেয়ে কমপক্ষে ৩০ জন পাওনাদার বিচ্ছিন্নভাবে থানায় এসে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে এক রাতেই তুচ্ছ ঘটনায় পাঁচটি অভিযোগ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রেকর্ডভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে এ ওসির বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নান্দাইল থানায় ওসি হিসেবে গত ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর যোগ দিয়েছিলেন ফরিদ আহম্মেদ। এর পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে তিনি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি চুরি ছিনতাইসহ আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে পুরো উপজেলার আনাচে-কানাচে ইয়াবার কারবার, গ্রেপ্তার বাণিজ্য চলছিল নির্বিঘ্নে।
বিভেদপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না নান্দাইল থানার ওসি ফরিদ আহম্মেদ।

আরো পড়ুন- গভীর রাতে প্রবাসীর স্ত্রীর ঘর থেকে মসজিদের ইমাম আটক

অন্যদিকে মামলা নেওয়ার নামে বিচার প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছিল নিয়মিত। এমতাবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকালে তাকে প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি পেয়ে ওসি ফরিদ সবকিছু গুছিয়ে আজ শুক্রবার ভোরে চলে যান জেলা শহর ময়মনসিংহে।
এ খবর বিভিন্ন মাধ্যমে পেয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানের দোকানদার, ব্যবসায়ী ও এমনকি অনেক বিচার প্রার্থী তার সন্ধানে থানায় আসতে থাকেন।

থানায় আসা নান্দাইল পৌর বাজারের ইসহাক মার্কেটের প্রাইম কালেকশনের মালিক মো. মোফাজ্জল হোসেন খান রেনু জানান, তার দোকান থেকে বিভিন্ন সময় পরিবারের জন্য পোশাক নিয়েছেন ওসি ফরিদ। তাছাড়া গত শীতের শুরুতে নিয়েছেন তিনটি কাশ্মেরী শাল। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ২৫০ টাকা বকেয়া।

আরো পড়ুন-চাঁদপুরে চুলার গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৬জন দগ্ধ, ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

আসানান্দাইল সদরের সুবর্ন ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক ফরহাদ জানান, তার দোকান থেকে ফ্যানসহ বেশ কিছু মালামাল নিয়েছেলন ওসি। গত এক বছর ধরে তার কাছে ১১ হাজার টাকা পান তিনি।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে ৫ জন জানান, তারা বিভিন্ন কারণে ওসিকে লাখের ওপরে টাকা দিয়েছেন। এখন উনাকে না পেয়ে হতাশ। তাদের মতো আরো অনেকেই টাকা পাবেন বলে এসে ফেরত গেছেন।

৫টি মামলার বাদী উত্তরবানাইল গ্রামের আনোয়ার হোসেন, চরভেলামারী গ্রামের রফিক সিকদার, জামাল উদ্দিন ও জয়নাল মিয়া এবং দত্তগ্রাম গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, প্রত্যাহারের খবর পেয়ে ওসি ফরিদ উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরকোমড়ভাঙ্গা চরওভেলামারী গ্রামের ৪টি, মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম এলাকার ১টি, গাঙাইল ইউনিয়নের উত্তর বানাইল গ্রামের ১টি সহ মোট ৫টি মামলা রেকর্ডভুক্ত করেন। এ ৫টি মামলা থেকে ৭৮ হাজার টাকা নেন। তাদের মধ্যে সবাই ১০ হাজার করে টাকা ওসি ফরিদের হাতে দিলেও চরভেলামারী গ্রামের জয়নাল মিয়া দুই বারে মোট ৩৮ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

এসব বিষয়ে জানতে প্রত্যাহার হওয়া ওসি ফরিদ আহম্মেদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওসির কাছে সাধারণ লোকজন টাকা পায়, এটি খুবই দুঃখজনক।’ এ বিষয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

এক রাতে ৫টি মামলা রেকর্ডভুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তো দুটির কথা বলা হয়েছিল। বাকিগুলো তো জানাননি।’

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

সর্বাধিক পঠিত

ভোজ্যতেলের দাম বিশ্বে কমছে, দেশে বাড়ছে

ওসি প্রত্যাহারের খবরে থানায় পাওনাদারদের ভীড়

আপডেট: ১১:৪২:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ছাড়াও নানাবিধ কর্মকাণ্ডের কারণে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার ওসিকে নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছিল। অবশেষে হঠাৎ প্রত্যাহার হলে আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) ভোরে কর্মস্থল ত্যাগ করেন তিনি।

এদিকে ওসির কর্মস্থল ত্যাগের খবর দেরিতে পেয়ে কমপক্ষে ৩০ জন পাওনাদার বিচ্ছিন্নভাবে থানায় এসে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে এক রাতেই তুচ্ছ ঘটনায় পাঁচটি অভিযোগ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রেকর্ডভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে এ ওসির বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নান্দাইল থানায় ওসি হিসেবে গত ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর যোগ দিয়েছিলেন ফরিদ আহম্মেদ। এর পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে তিনি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি চুরি ছিনতাইসহ আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে পুরো উপজেলার আনাচে-কানাচে ইয়াবার কারবার, গ্রেপ্তার বাণিজ্য চলছিল নির্বিঘ্নে।
বিভেদপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না নান্দাইল থানার ওসি ফরিদ আহম্মেদ।

আরো পড়ুন- গভীর রাতে প্রবাসীর স্ত্রীর ঘর থেকে মসজিদের ইমাম আটক

অন্যদিকে মামলা নেওয়ার নামে বিচার প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছিল নিয়মিত। এমতাবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকালে তাকে প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি পেয়ে ওসি ফরিদ সবকিছু গুছিয়ে আজ শুক্রবার ভোরে চলে যান জেলা শহর ময়মনসিংহে।
এ খবর বিভিন্ন মাধ্যমে পেয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানের দোকানদার, ব্যবসায়ী ও এমনকি অনেক বিচার প্রার্থী তার সন্ধানে থানায় আসতে থাকেন।

থানায় আসা নান্দাইল পৌর বাজারের ইসহাক মার্কেটের প্রাইম কালেকশনের মালিক মো. মোফাজ্জল হোসেন খান রেনু জানান, তার দোকান থেকে বিভিন্ন সময় পরিবারের জন্য পোশাক নিয়েছেন ওসি ফরিদ। তাছাড়া গত শীতের শুরুতে নিয়েছেন তিনটি কাশ্মেরী শাল। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ২৫০ টাকা বকেয়া।

আরো পড়ুন-চাঁদপুরে চুলার গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৬জন দগ্ধ, ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

আসানান্দাইল সদরের সুবর্ন ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক ফরহাদ জানান, তার দোকান থেকে ফ্যানসহ বেশ কিছু মালামাল নিয়েছেলন ওসি। গত এক বছর ধরে তার কাছে ১১ হাজার টাকা পান তিনি।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে ৫ জন জানান, তারা বিভিন্ন কারণে ওসিকে লাখের ওপরে টাকা দিয়েছেন। এখন উনাকে না পেয়ে হতাশ। তাদের মতো আরো অনেকেই টাকা পাবেন বলে এসে ফেরত গেছেন।

৫টি মামলার বাদী উত্তরবানাইল গ্রামের আনোয়ার হোসেন, চরভেলামারী গ্রামের রফিক সিকদার, জামাল উদ্দিন ও জয়নাল মিয়া এবং দত্তগ্রাম গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, প্রত্যাহারের খবর পেয়ে ওসি ফরিদ উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরকোমড়ভাঙ্গা চরওভেলামারী গ্রামের ৪টি, মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম এলাকার ১টি, গাঙাইল ইউনিয়নের উত্তর বানাইল গ্রামের ১টি সহ মোট ৫টি মামলা রেকর্ডভুক্ত করেন। এ ৫টি মামলা থেকে ৭৮ হাজার টাকা নেন। তাদের মধ্যে সবাই ১০ হাজার করে টাকা ওসি ফরিদের হাতে দিলেও চরভেলামারী গ্রামের জয়নাল মিয়া দুই বারে মোট ৩৮ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

এসব বিষয়ে জানতে প্রত্যাহার হওয়া ওসি ফরিদ আহম্মেদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওসির কাছে সাধারণ লোকজন টাকা পায়, এটি খুবই দুঃখজনক।’ এ বিষয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

এক রাতে ৫টি মামলা রেকর্ডভুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তো দুটির কথা বলা হয়েছিল। বাকিগুলো তো জানাননি।’