চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এক যুবককে মারাত্মক জখম করার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে হামলার শিকার যুবকটি। সে পেশায় একজন সিএনজি চালক। পরে হামলাকারীদের বিচারের দাবীতে ফুঁসে উঠে এলাকার বিক্ষুদ্ধ জনতা। খবর পেয়ে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স্বপন মাহমুদ সহ চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার আহবান জানান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী শনিবার দিবাগত রাত ১১টার কিছু পর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মহামায়া শতরূপা গুচ্ছগ্রামের সামনের একটি কনফেকশনারি দোকানে।
হামলাকারী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরজু আহমেদ ফুটন ও তার ছোট ভাই তামিম বেপারী বলে প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান। ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত দুইদিন আগে মধুরোড এলাকার এক অটোচালক রাতের বেলায় মহামায়া থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে তার পথ আটকিয়ে সাথে থাকা নগদ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় কিশোর গ্যাং এর কয়েকজন। তার সাথে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা পরিচিত পেয়ার আলীর বড় ছেলে রুবেলকে জানালে তিনি সন্দেহজনকভাবে ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মৃত আলাউদ্দিন বেপারীর ছেলে তামিমের কাছে জানতে চাইলে একটা পর্যায়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এসময় সে তার বড় ভাই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারী আরজু আহমেদ ফুটনকে বিষয়টি জানালে কিছুক্ষণ পরেই তিনি এসে তার ভাইসহ দোকানে বসে থাকা রুবেলের উপর ধারালো অস্ত্র ও জিয়ার পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে চলে যায়। এতে রুবেলের মাথা, হাত ও পেট কেটে ভুঁড়ি বের হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক প্রত্যক্ষদর্শীরা উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তবরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করেন। তিনি বর্তমানে আইসিউতে আছেন এবং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে পরদিন অর্থাৎ গতকাল রবিবার সকালে শাহমাহমুদপুরের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি স্বপন মাহমুদ সহ দলীয় লোকজন হাসপাতালে ছুটে যান। এসময় তিনি বিচারের দাবীতে ফুঁসে ওঠা বিক্ষুব্ধ জনতাকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে শান্ত করেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন মাহমুদ বলেন, অপরাধী যেই হোক উক্ত ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ভাইয়ের নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া একই সময় চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের এস আই সেলিম সহ সঙ্গীত ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করে বিষয়টি জানেন। এবং উক্ত ঘটনার ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়। এলাকার কয়েকজন জানান, ফুটনের বিরুদ্ধে এর পূর্বেও কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। এবং সে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আসছে। তার বাবা একজন সম্মানিত ব্যক্তি থাকলেও ছেলেরা মানুষের সাথে সব সময় খুবই খারাপ আচরন করে থাকে। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে উশৃংখল স্থান হচ্ছে মহামায়া টু মধুরোড স্টেশন সড়ক। এ সড়ক দিয়ে দূরদূরান্ত থেকে আগত চলাচলকারীরা অনিরাপদে থাকতে হয় প্রতিনিয়ত। এতে রেহাই পাননি স্থানীয় সহজ সরল ও সামাজিক বাসিন্দারা। তারা নিজেদের আত্মসম্মান ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে কখনো প্রতিবাদও করতে পারেন নি। এই সড়কটি একদল কিশোর গ্যাং, নেশাখোর, ছিনতাইকারী ও উত্যক্তকারীদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান।
অপরাধকারীরা প্রায় সময় এলাকার সামাজিক ব্যক্তিদেরকেও ছাড় দেন না। এমনকি মহামায়ার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষগুলোও তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি। পূর্বে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করার পরেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের অনুরোধে বিষয়গুলো ধামাচাপা হয়েছে বলে জানা যায়। এর কয়েকটি পরে পূণরায় আগের রূপে ফিরে যায় অপরাধচক্ররা। ভুক্তভোগী ও এলাকার সাধারণ মানুষের একটাই চাওয়া- যারা এসব অপরাধের সাথে জড়িত তাদেরকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে এলাকা থেকে বিতারিত করতে হবে। নতুবা তারা কখনো সুধরাবে না। এবং প্রশাসনের লোকজন মাঝে মধ্যে সিভিল পোশাকে অভিযান পরিচালনা করলে প্রকৃত অপরাধীদের আটক করতে সুবিধা হবে।
এব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যায় হামলার শিকার রুবেল এর পিতা পেয়ার আলী বলেন, আমার ছেলের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। আপাতত তার চিকিৎসা নিয়েই ভাবছি। আর কথা বলতে পারবো না। তার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। উক্ত ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত আরজু আহমেদ ফুটন, তার ভাই তামিম বেপারী সহ পরিবারের লোকজন পলাতক থাকায় তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।