হাজীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য অফিসের সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো. নাছিমুল করিম, খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী মো. কামাল হোসেন ও মো. নজরুল ইসলামের শাস্তিমূলক বদলীর দাবি জানিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছেন মো. নাহিদ হোসেন নামের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুরের প্যাডে দেওয়া ওই চিঠিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ আ. সালাম ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহা. আব্দুল হামিদকে স্বাক্ষী রাখা হয়েছে। অথচ তিনজনের স্বাক্ষর জাল এবং ওই নামে কোন সমন্বয়ক নেই বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন, ভুক্তভোগী উপজেলা খাদ্য অফিসের সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো. নাছিমুল করিম ও খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী মো. কামাল হোসেন। এছাড়াও অপর নিরাপত্ত প্রহরী মো. নজরুল ইসলামও সাধারণ ডায়েরী করবেন বলে জানা গেছে।
সাধারণ ডায়েরীতে উপজেলা খাদ্য অফিসের সাবেক নিরাপত্তা প্রহরী, বর্তমানে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলায় কর্মরত মোহাম্মদ নাজমুছ ছায়াদাৎ পাটোয়ারীকে বিবাদী করা হয়েছে। তিনি হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুহিলপুর গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীন মাষ্টার পাটোয়ারীর ছেলে।
ডায়েরীতে উল্লেখ করা হয়, নাজমুছ ছায়াদাৎ পাটোয়ারী হাজীগঞ্জে থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন অফিসারদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন। তিনি নাছিমুল করিম ও কামাল হোসেনকে খাদ্য মন্ত্রণালয়/খাদ্য সচিব এবং মহাপরিচালক ও পরিচালক প্রশাসনের কাছে বেনামে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে থাকেন।
এর মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজীগঞ্জ শাখার সমন্বয়ক মো. নাহিদ হোসেন নামে ও স্বাক্ষরিত উল্লেখিত নাছিমুল করিম, কামাল হোসেন ও নজরুল ইসলামকে বদলীর দাবি জানিয়ে গত ৭ আগস্ট খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ৩০ সেপ্টেম্বর খাদ্য সচিব/মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়।
ওই দুইটি চিঠিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জি. মমিনুল হকের নাম, পদবি ও স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ উল্লেখিত স্বাক্ষরগুলো জাল বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়াও মো. নাহিদ হোসেন নামে হাজীগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন সমন্বয়ক নেই বলে সংবাদকর্মীদের নিশ্চিত করেন, ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রহমান সানী ও ফয়সাল হোসেন। সানী বলেন, এই চিঠির মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বিভ্রান্ত ও সম্মানহানী করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তাই প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সংবাদকর্মীসহ জনসাধারণকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান তারা।
এছাড়া ওই চিঠিতে হাজীগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ স্বাক্ষরটি জাল বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। অপর দিকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অ.দা.) শেখ আ. ছালাম সংবাদকর্মীদের নিশ্চিত করেছেন, তাঁর স্বাক্ষরটিও জাল। তিনি লিখিত এক পত্রে উল্লেখ করেন, খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও খাদ্য গুদামের তিনজন কর্মচারীর শাস্তিমূলক বদলীর আবেদনে স্বাক্ষরটি তার নয়। উক্ত আবেদন সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক।
অপর দিকে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এমন কোনো পত্রে তিনি স্বাক্ষর করেন নি। অর্থ্যাৎ ওই স্বাক্ষরটি জাল। এ ব্যাপারে তিনি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
স্বাক্ষর জালের বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নিশ্চিত করেছেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জি. মমিনুল হক।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন, ভুক্তভোগী উপজেলা খাদ্য অফিসের সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো. নাছিমুল করিম, খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী মো. কামাল হোসেন ও মো. নজরুল ইসলাম।
বিষয়টি অস্বীকার করেন মোহাম্মদ নাজমুছ ছায়াদাৎ পাটোয়ারী। একজন সংবাদকর্মীর নেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, এই ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই।
এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।