চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ি ইউনিয়নে দেবর-ভাবির পরকীয়ার সম্পর্কের জেরে একই এলাকার বখাটেদের মারধরের অপবাদ সইতে না পেরে ইকবাল হোসেন (২৩) নামে এক শ্রমিক আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু পরিবারের দাবি এটি একটি হত্যাকান্ড। এ ঘটনায় নিহত ইকবাল হোসেনের বাবা খোরশেদ খলিফা বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। গতকাল শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুর উপজেলার কালীরবাজার এলাকার রায়েরকান্দি খলিফা পাড়ার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি কালীরবাজারের ইব্রাহিম খানের জাহাজের ডগ এ নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
জানা যায়, নিহত ইকবাল হোসেন তার ভাবি ময়না বেগমের সাথে পরকীয় সম্পর্ক ছিল। এই বিষয়টি আশেপাশের এবং তার গ্রামের কিছু লোকজন জেনে ফেলে পরবর্তীতে ময়না বেগমের মোবাইলটি কৌশলে চুরি করে নিয়ে যায় এবং মোবাইলটির রেকর্ডিংয়ে পরকীয়া সংক্রান্তে কিছু কথাবার্তার তথ্য পাওয়া যায়। গত ৭ নভেম্বর রাতে এই রেকর্ডের কথাগুলোকে কেন্দ্র করে ইকবাল হোসেন একই এলাকার মো. নাসিরের ছেলে মিল্লাত হোসেন (৩৫), মরন সর্দারের ছেলে মো. সুজন সহ ৪/৫ জন বখাটে মিলে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। টাকা না দিলে রেকর্ডিংয়ের কথাবার্তা ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকে। একপর্যায়ে ইকবাল হোসেনকে ডেকে কালির বাজার লঞ্চঘাটে মারধর করে তারা ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আবার ইকবাল হোসেনের ভাবি ময়না বেগমের কাছে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন তারা। তিনি টাকা দিতে না পারায় ইকবাল হোসেনের মোবাইলটি নিয়ে যায় সুজন ও মিল্লাত হোসেন। মোবাইলের জন্য ইকবাল হোসেন তাদের কাছে গেলে আবারো মারধরের শিকার হন। পরবর্তীতে লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে না জানিয়ে বিষাক্ত কেরির ট্যাবলেট (কীটনাশক) খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
এ বিষয়ে নিহত ইকবাল হোসেনের ভাবি ময়না বেগম পরকীয়ার সম্পর্ক স্বীকার করে জানান জানান, আমি আমার আমার দেবরের সাথে মোবাইলে কথা বলতাম। সেই কথার রেকর্ডিং ও দুটো ছবি ছিল আমার মোবাইলে। কিছুদিন আগে আমার মোবাইলটি ঘর থেকে চুরি করে নিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে তারা ওই মোবাইলের রেকর্ডিং ও ছবি দেখিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে এবং আমার কাছ থেকে টাকা পয়সা চেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সুজন ও মিল্লাত সহ আরো কয়েকজন ইকবালকে ধরে নিয়ে মারধর করে ও তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে কীটনাশক ওষুধ খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন আমার দেবর।
ইকবাল হোসেনের বোন রুপালি বেগম জানান, আমার ভাবি ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে যদি অবৈধ সম্পর্ক থাকত তাহলে আমাদেরকে জানাতো তারা অথবা এলাকার সামাজিক লোকজনকে জানাতো। মিল্লাত, সুজন ও তার সহযোগী আরো ৪-৫ জন মিলে আমার ভাইকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বেদম মারে। ব্যাথা সহ্য করতে না পারলে আমার ভাই ডাক চিৎকার দিলে তারা আমার ভাইকে জোর করে কিছু একটা খাইয়ে দেন। পরবর্তীতে ডাক চিৎকার শুনে আমরা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসলে ইকবাল বলে আমার শরীর ভালো লাগছে না আমাকে একটু পানি দাও। আমরা তাকে পানি দিলে পানি খেয়ে অচেতন হয়ে যায় আমার ছোট ভাই ইকবাল। তড়িঘড়িত করে তাকে অটো গাড়ি করে দাউদকান্দি নিয়ে যাওয়ার পথে আমার ভাই মৃত্যুবরণ করেন। এখন এ ঘটনার প্রশাসনের কাছে আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।
ইকবাল হোসেনের মা জাহানারা বেগম জানান, আমার কলিজার ধন তারা নিয়ে মেরে ফেলেছে। এখন আমারে কে দেখবে? আমাকে কে ওষুধ কিনে দেবে? আমার তো আর কেউ রইল না। আমি আইনের কাছে এর সঠিক বিচার চাই। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করছে তাদের আমি ফাঁসি চাই।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল হক জানান, ঘটনার পর আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। পোস্টমর্টেম এর রিপোর্ট আসলে ঘটনার সত্যতা জানা যাবে। এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পুলিশ কাজ করছে।