ডেঙ্গু মশা নিধনের ওষধের কার্যকরিতায় খুশি নন ডিএসসিসি কর্মকর্তারা

  • আপডেট: ০৮:৫৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৯
  • ৭৩

অনলাইন ডেস্ক:

থামছে না ডেঙ্গু রোগীর ঢল। প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ‘তিল ধারণের ঠাঁই নেই’। প্রকট আকার ধারণ করেছে শয্যা (সিট) সংকট। শয্যা বাড়িয়ে পৃথক সেল করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না।

দেশের এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মশা নিধনের কার্যকর ওষুধ এখনও আনা যায়নি। তবে হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ইতিমধ্যে একটি বিদেশি ওষুধ সংগ্রহ করেছেন তারা। যা ডেঙ্গু মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ বলে বিবেচ্য হবে। তবে এর জন্য তিন ধাপে কয়েকটি টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে নমুনা ওষুধকে।

শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে ডিএসসিসি’র নগর ভবনের বারান্দায় বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে ওই ওষুধ কতটা কার্যকর তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।

প্রথমে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে দুই বর্গ স্কয়ার ফুটের তিনটি মশারির খাঁচায় ৫০টি করে মশা রাখা হয়। এরপর মাত্র এক হাত দূর থেকে এর চারপাশে একবার করে বিদেশি ওষুধটি ছিটানো হয়।

ফলাফলে দেখা গেল, মাত্র এক হাত দূর থেকে ফগিং (ছিটানো) করার পরও খাঁচায় থাকা মশাগুলো মরেনি। মাত্র ২৪ শতাংশ মশা অচেতন অবস্থায় পড়েছিল। তিনটি খাঁচার প্রথমটি ৫০টি মশার মধ্যে ১৩টি, ২য়টিতে ১৪টি এবং তৃতীয়টিতে ৯টি মশা জ্ঞান হারিয়েছিল।

প্রথম পরীক্ষায় সন্তুষ্ট না হতে পারলেও জানা গেছে আজ (শনিবার) আবার এই খাঁচাগুলো দেখা হবে। কয়টি মশা মরেছে তা গোনা হবে। যদি মৃতের সংখ্যা ৮০ শতাংশ হয় তাহলে ধরে নেয়া হবে এই ওষুধের মান ঠিক রয়েছে।

এটাই শেষ নয়, দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য ওষুধের নমুনাটি পাঠানো হবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও খামার বাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে। সেখানেও দুটি পরীক্ষায় ওষুধটি উত্তীর্ণ হলে তা ছিটানোর কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তবে ওষুধটির প্রথম পরীক্ষার ফলাফলে খুশি হননি সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তা।

গণমাধ্যমকর্মীদের মতো তারাও প্রশ্ন ছুড়েছেন নমুনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের বায়ার করপোরেশনের কাছে, এত কাছ থেকে ওষুধ ছিটানোর পরও কেন মশাগুলো মারা গেলো না? তাছাড়া এগুলো সব বন্দী অবস্থায় ছিল। তাই পুরো ওষুধের মোকাবেলা করতে হয়েছে তাদের। কিন্তু বাইরের মশাদের বাতাস ও ওষুধের প্রকোপ থেকে দূরে সরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ওষুধ ছিটালে তারা দূরে সরে যাবে, খাবার ও বাতাস গ্রহণ করে আবার সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসবে। তাছাড়া সেখানে এত কাছে থেকে ওষুধ ছিটানো সম্ভবও হবে না।

এসব বিবেচনা এই ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডিএসসিসির কর্মকর্তারা।

এমন প্রশ্নের জবাবে নমুনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের বায়ার করপোরেশনের মুখপাত্র শুভ দে বলেন, ‘এই ওষুধের পরীক্ষা এভাবেই হয়। এটিই নিয়ম।’

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তো আর টেকনিক্যাল পারসন না। পরীক্ষার কাজে যারা নিয়োজিত, তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা বলেন, ‘পরীক্ষায় যেই মশা মরবে সেটি মাঠ পর্যায়েও মরার কথা। এখানেই যদি না মরে তাহলে সেটি বাইরে দিব্যি বেঁচে থাকবে। পরীক্ষাতে সময় নেয়া হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা। আর একটি পরিপূর্ণ মশা না খেয়ে পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। সে হিসেবে ২৪ ঘণ্টা কিছুই না। তবে ২৪ ঘণ্টায় যদি মশা মরে সেটি মাঠ পর্যায়েও মারা যাবে।’

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

চাঁদপুরে ৪’শ নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

ডেঙ্গু মশা নিধনের ওষধের কার্যকরিতায় খুশি নন ডিএসসিসি কর্মকর্তারা

আপডেট: ০৮:৫৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

থামছে না ডেঙ্গু রোগীর ঢল। প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ‘তিল ধারণের ঠাঁই নেই’। প্রকট আকার ধারণ করেছে শয্যা (সিট) সংকট। শয্যা বাড়িয়ে পৃথক সেল করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না।

দেশের এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মশা নিধনের কার্যকর ওষুধ এখনও আনা যায়নি। তবে হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ইতিমধ্যে একটি বিদেশি ওষুধ সংগ্রহ করেছেন তারা। যা ডেঙ্গু মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ বলে বিবেচ্য হবে। তবে এর জন্য তিন ধাপে কয়েকটি টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে নমুনা ওষুধকে।

শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে ডিএসসিসি’র নগর ভবনের বারান্দায় বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে ওই ওষুধ কতটা কার্যকর তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।

প্রথমে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে দুই বর্গ স্কয়ার ফুটের তিনটি মশারির খাঁচায় ৫০টি করে মশা রাখা হয়। এরপর মাত্র এক হাত দূর থেকে এর চারপাশে একবার করে বিদেশি ওষুধটি ছিটানো হয়।

ফলাফলে দেখা গেল, মাত্র এক হাত দূর থেকে ফগিং (ছিটানো) করার পরও খাঁচায় থাকা মশাগুলো মরেনি। মাত্র ২৪ শতাংশ মশা অচেতন অবস্থায় পড়েছিল। তিনটি খাঁচার প্রথমটি ৫০টি মশার মধ্যে ১৩টি, ২য়টিতে ১৪টি এবং তৃতীয়টিতে ৯টি মশা জ্ঞান হারিয়েছিল।

প্রথম পরীক্ষায় সন্তুষ্ট না হতে পারলেও জানা গেছে আজ (শনিবার) আবার এই খাঁচাগুলো দেখা হবে। কয়টি মশা মরেছে তা গোনা হবে। যদি মৃতের সংখ্যা ৮০ শতাংশ হয় তাহলে ধরে নেয়া হবে এই ওষুধের মান ঠিক রয়েছে।

এটাই শেষ নয়, দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য ওষুধের নমুনাটি পাঠানো হবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও খামার বাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে। সেখানেও দুটি পরীক্ষায় ওষুধটি উত্তীর্ণ হলে তা ছিটানোর কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তবে ওষুধটির প্রথম পরীক্ষার ফলাফলে খুশি হননি সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তা।

গণমাধ্যমকর্মীদের মতো তারাও প্রশ্ন ছুড়েছেন নমুনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের বায়ার করপোরেশনের কাছে, এত কাছ থেকে ওষুধ ছিটানোর পরও কেন মশাগুলো মারা গেলো না? তাছাড়া এগুলো সব বন্দী অবস্থায় ছিল। তাই পুরো ওষুধের মোকাবেলা করতে হয়েছে তাদের। কিন্তু বাইরের মশাদের বাতাস ও ওষুধের প্রকোপ থেকে দূরে সরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ওষুধ ছিটালে তারা দূরে সরে যাবে, খাবার ও বাতাস গ্রহণ করে আবার সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসবে। তাছাড়া সেখানে এত কাছে থেকে ওষুধ ছিটানো সম্ভবও হবে না।

এসব বিবেচনা এই ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডিএসসিসির কর্মকর্তারা।

এমন প্রশ্নের জবাবে নমুনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের বায়ার করপোরেশনের মুখপাত্র শুভ দে বলেন, ‘এই ওষুধের পরীক্ষা এভাবেই হয়। এটিই নিয়ম।’

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তো আর টেকনিক্যাল পারসন না। পরীক্ষার কাজে যারা নিয়োজিত, তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা বলেন, ‘পরীক্ষায় যেই মশা মরবে সেটি মাঠ পর্যায়েও মরার কথা। এখানেই যদি না মরে তাহলে সেটি বাইরে দিব্যি বেঁচে থাকবে। পরীক্ষাতে সময় নেয়া হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা। আর একটি পরিপূর্ণ মশা না খেয়ে পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। সে হিসেবে ২৪ ঘণ্টা কিছুই না। তবে ২৪ ঘণ্টায় যদি মশা মরে সেটি মাঠ পর্যায়েও মারা যাবে।’