চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকেরা বেশ খুশি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা পাট কেটে নদী ও জলাশয়গুলোতে জাগ দিচ্ছেন। আবার কোথাও পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় পাট চাষ ও ফলন কম এ বছর। গত বছর অনেক পাট কৃষকেরা বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে না পারায় এবার তেমন একটা আবাদ করেননি। তবে চলতি বছর ফলন কম হলেও দামে খুশি তাঁরা। তবে বাজারে পাটের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মৌসুমে এ অঞ্চলের পাট চাষের পরিমাণ বাড়বে।
উপজেলার ছেংগারচর, আমিরাবাদ বাজার ও ঠেটালীয়া বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে।
উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই মৌসুমে একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ভালো বাজারমূল্য না পাওয়ায় কৃষকেরা পাট চাষের জন্য বেশি মনোযোগী ছিলেন না। কৃষি বিভাগের আশা, এবার পাটের দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় আগামী মৌসুমে পাটের চাষ বাড়বে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও চাষিরা পাট চাষ করে লোকসানে পড়েছিলেন। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়েন। মাঝে স্বল্প পরিসরে যাঁরা আবাদ ধরে রেখেছিলেন, তাঁরাই লাভবান হয়েছেন। তাঁদের দেখেই অন্যরা আবারও পাট চাষে ফিরেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের দাম ভালো আছে।
উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নের চরপাথালীয়া গ্রামের কৃষক হারাধন দাস বলেন, ‘আমি ধান চাষের পাশাপাশি প্রায় তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। অনাবৃষ্টিতে পাটের ফলনে বেশি সুবিধা না হলেও বাজারদর ভালো পেয়েছি। এবার খরচ পুষিয়ে লাভবান হব।
ছেংগারচর পৌরসভার জোরখালী গ্রামের পাটচাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে পরে একটু করে বৃষ্টি হওয়ায় আগের তুলনায় ভালো হয়েছে। এবার আমি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় অর্ধেক উৎপাদন হলেও এবার বাজারে পাটের দাম ভালো আছে।
ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের ঠেটালীয়া গ্রামের মৌসুমি পাট ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান সজীব বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর আগে থেকে পাটের ব্যবসা করি। বিগত দিনে পাটের মূল্য কৃষকেরা ভালো পায়নি। এবার পাটের বাজারদর ভালো আছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে খুব একটা বেশি জমিতে পাট চাষ হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পাটের আবাদ গত বছরের চাইতে কিছুটা কম। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম বেশি পাওয়ায় ভবিষ্যতে কৃষকদের মধ্যে পাট চাষে আগ্রহ বাড়বে।