মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে এক আদম ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ সময় তিনি বাড়িতে না এসে ঢাকায় ব্যবসা করছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা করা হয়েছে। যা একেবারেই মিথ্যা এবং হাস্যকর বলে দাবী করছেন আসামীর স্ত্রী। ঘটনাটি অনেকটা ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ এর মতো।
সিরাজুল ইসলাম (৪০) দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ঢাকায় কাগজের ঠোঙ্গা/ প্যাকেট বিক্রি করে সংসার চালান। স্ত্রী, ২ মেয়ে, ১ ছেলে নিয়ে কোনো রকম সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করছেন। নিতান্তই সহজ সরল জামেলাহীন জীবন যাপন করছিলেন সিরাজ আখনজী ও তার স্ত্রী ছকিনা বেগম। প্রকারান্তে তার ভাই বির্তকীত আদম ব্যবসায়ী ওসমান গণি নিজ এলাকা এবং পাশর্^বর্তী এলাকার যুবকদের কাছ থেকে বিদেশ নেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার অর্থ লিপ্সা এবং সম্পত্তির লোভ তাকে এতোটাই আসক্ত করেছে যে নিজ ভাইও তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ওয়ারিশ সম্পত্তি থেকে নিজ ভাইকে বঞ্চিত করতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তার ভাই সিরাজ আখনজী বিষয়টি প্রতিকার চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। বিষয়টি কেন আদালতে নিয়েছে, তার জন্য ক্ষীপ্ত হন ওসমান। সে সময় ওসমান নিজ ভাই সিরাজকে ‘দেখে নিবে’ বলে হুমকিও দেয়।
এ ঘটনার কয়েক মাস পর গত ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার ওসমান গণির স্ত্রী রহিমা বেগমের ভাই ‘সালমান আখনজী’ ফজরের আযান দেয়ার কিছুক্ষণ পর কে বা কারা তার উপর অতর্কিত হামলা করে তাকে রক্তাত জখম করে চলে যায়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সালমান আখনজীর (৫০) স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে হাইমচর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার আরজিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার স্বামী প্রতিদিনের মতো সেদিনও জনতাবাজারের পূর্ব পাশে থাকা আখন বাড়ি জামে মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। ফজরের আজানের পর অজ্ঞাত লোক দারালো অস্ত্র দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্যে পিছন থেকে উপর্যপুরি কয়েকটি কোপ দিলে তিনি মসজিদে লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে লোকমান মিজি (৭০) দেখতে পেয়ে ডাক চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এসে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চাঁদপুর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।’ মামলা নং ০১/১১০। তারিখ ০১/০৮/২৪ খ্রি.। মামলায় বিবাদী করা হয় সিরাজ আখনজী ও তার স্ত্রী সকিনা বেগমসহ আরো কয়েকজনকে। সিরাজ আখনজী হলো ওসমান গণির ভাই। সালমান আখনজী হলো ওসমান গনির শালা। তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে ওয়ারিশ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ। আর এই সুযোগে নিজ ভাইকে দুলা ভাইয়ের মাধ্যমে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছে। ঘটনার বিশ্লেষণে একটি ব্যক্তির নাম বার বার ওঠে আসে, তিনি হলেন ওসমান গণি। বলা যায় ওসমান গণি ক্যামরার পিছনের মানুষ বা পর্দার আড়ালের মানুষ।
মামলার দ্বিতীয় আসামী সকিনা বেগম বলেন, যিনি মামলার বাদী তার এবং তার স্বামীর সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কোনো ঝড়গা ঝাটি নেই। আমরা আমাদের নিয়ে আছি। আমার স্বামীর সাথে তার ভাই ওসমান গনির সাথে ওয়ারিস সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা আছে। কে বা কারা তার দুলা ভাইকে আঘাত করেছে। তারা কোনো ধরনের যাচাই বাছাই না করেই আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
মামলার বাদী মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে সন্ত্রাশী হত্যা করে ফেলছিলো। আল্লার রহমতে বেঁচে আছেন।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আপনি শুনেননি? তাকে জেলা পাঠিয়েছি।’ একথা বলেই তিনি ফিক করে হেঁসে দেন।
আঘাতপ্রাপ্ত সালমান আখনজী বলেন, ‘আমার সাথে তার কোনো বিরোধ নেই। তাদের ভাইদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ। ওসমান গনি আমাকে শালিসে নেয়। আমি কেন গেছি, এটাই সমস্যা।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রথম কোপ দেওয়ার পর তাকে ধরতে গেলে আরো কয়েকটি কোপ দিলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’ তাকে চিনতে পেরেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেন, ‘চিনেছি। সে হলো সিরাজ।’ সে তো ঢাকায় থাকে, ঢাকায় থেকে আপনাকে কীভাবে কোপাতে পারে? জবাবে সলেমান বলেন- আমি শুনেছি সে রাত ১১ টায় বাড়িতে এসেছে।
যদিও মামলার আরজি সালমান এর স্ত্রী স্পষ্ট লিখেছেন কে তাকে আঘাত করেছে তা তারা জানেন না। বর্তমানে তারা তাদের বয়ান পাল্টিয়ে পেলেন, যা রহস্যের সৃষ্টি করেছে।
একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত ওসমান গণি বলেন- ‘আমি ঢাকায় ছিলাম, শুনেছি সালামান আখনজিকে কে বা কারা মসজিদে কুপিয়েছে। এটা মসজিদ কমিটি ভালো বলতে পারবে। আমি জানি না।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সাথে আমার কোনো বিরোধ নেই।’ মামলার বিষয়ে তিনি বলেন সেটা সিরাজই ভালো বলতে পারবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিদেশ নিবো বলে যাদের টাকা নিয়েছি তাদেরকে বলেন আমার সাথে যোগাযোগ করতে। আপনাকে বলে কী লাভ হবে?