লুটের পর গাজী টায়ার কারখানায় আগুন ২০ ঘন্টা পরেও আসেনি নিয়ন্ত্রণে, নিখোঁজ ১৭৩

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসীতে গাজী টায়ার কারখানায় গতকাল রাতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারাখানায় আগুনের ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিখোঁজ আছেন। তাঁদের কেউ কারখানার শ্রমিক নন বলে দাবি কারখানা কর্তৃপক্ষের। কারখানায় হামলা চালিয়ে লুটপাট কিংবা অন্য কোনো কাজে তাঁরা এসেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আজ সোমবার দুপুরে আগুনে পুড়ে যাওয়া কারখানার সামনে নিখোঁজ মানুষের স্বজনেরা ভিড় জমাতে থাকেন। তখন ফায়ার সার্ভিস নিখোঁজের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত ১৭৩ জনের নিখোঁজের তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক এই তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা করার পর তা পুলিশকে দেওয়া হবে। পুলিশ তদন্ত করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য জানাবে। আজ বেলা ২টা পর্যন্ত এই ঘটনায় কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, কারখানাটির ছয়তলার একটি ভবনে বেলা দুইটার দিকেও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ভবনগুলোর ভেতর যাওয়া যাচ্ছে না। আগুন নিভে গেলে তাঁরা ভবনের ভেতরে যাবেন। তখন বোঝা যাবে, কেউ পুড়ে মারা গেছেন কি না। এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এদিকে নিখোঁজদের খোঁজে কারখানার সামনে স্বজনেরা ভিড় জমিয়েছেন। এমন অন্তত ২০ জন স্বজনের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, গতকাল বিভিন্ন সময় তাঁদের স্বজনেরা কারখানায় এসেছেন। তাঁরা কেউই কারখানার শ্রমিক নন। পরে আর তাঁদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাত থেকে মুঠোফোনও বন্ধ।

কারখানার সামনে দুই বছরের ছেলে আদনানকে নিয়ে বিলাপ করছিলেন গৃহবধূ মোসা. রুবি। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী মো. সজিব (২৬) গত রাত ৯টা থেকে নিখোঁজ। সজিব উপজেলার মুড়াপাড়া গঙ্গানগর এলাকার শহীদ মিয়ার ছেলে। সজিব রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতেন জানিয়ে রুবি বলেন, ‘কারখানায় লুটপাট হইতাছে শুনে সজিব কারখানায় আসে। রাত ৯টায় শেষবার কথা হয়। তখন সে কারখানায়ই ছিল। পরে আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’

নিখোঁজের তালিকায় নাম আছে একটি অ্যাগ্রো ফার্মের রাখাল মো. শাওন (১২), একটি সিমেন্ট কারখানার শ্রমিক আবদুর রহমান (৩০), ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সুজন (২৮), তাঁর বোন মাফিয়া বেগম (৩০), বোনের স্বামী মো. রতন (৩৫), বড়ালু এলাকার রাজমিস্ত্রি হাসান আলী (৩২), তাঁর দুই বন্ধু অহিদ (৩২), রুবেল (৩০), মুদিদোকানি শাহাদাত সিকদার (২৯), তাঁর ভাই সাব্বির সিকদারসহ (২৫) অনেকে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান মাহমুদ বলেন, আগুন লাগানো ও লুটপাটের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নেবে। নতুন করে কেউ যেন লুটপাটে না জড়ায়, সে বিষয়ে তাঁরা সতর্ক আছেন।

সর্বাধিক পঠিত

মতলব উত্তর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ কুদ্দুস’সহ ২০৬ জনকে আসামী করে মামলা

লুটের পর গাজী টায়ার কারখানায় আগুন ২০ ঘন্টা পরেও আসেনি নিয়ন্ত্রণে, নিখোঁজ ১৭৩

আপডেট: ০৬:১৯:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারাখানায় আগুনের ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিখোঁজ আছেন। তাঁদের কেউ কারখানার শ্রমিক নন বলে দাবি কারখানা কর্তৃপক্ষের। কারখানায় হামলা চালিয়ে লুটপাট কিংবা অন্য কোনো কাজে তাঁরা এসেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আজ সোমবার দুপুরে আগুনে পুড়ে যাওয়া কারখানার সামনে নিখোঁজ মানুষের স্বজনেরা ভিড় জমাতে থাকেন। তখন ফায়ার সার্ভিস নিখোঁজের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত ১৭৩ জনের নিখোঁজের তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক এই তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা করার পর তা পুলিশকে দেওয়া হবে। পুলিশ তদন্ত করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য জানাবে। আজ বেলা ২টা পর্যন্ত এই ঘটনায় কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, কারখানাটির ছয়তলার একটি ভবনে বেলা দুইটার দিকেও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ভবনগুলোর ভেতর যাওয়া যাচ্ছে না। আগুন নিভে গেলে তাঁরা ভবনের ভেতরে যাবেন। তখন বোঝা যাবে, কেউ পুড়ে মারা গেছেন কি না। এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এদিকে নিখোঁজদের খোঁজে কারখানার সামনে স্বজনেরা ভিড় জমিয়েছেন। এমন অন্তত ২০ জন স্বজনের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, গতকাল বিভিন্ন সময় তাঁদের স্বজনেরা কারখানায় এসেছেন। তাঁরা কেউই কারখানার শ্রমিক নন। পরে আর তাঁদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাত থেকে মুঠোফোনও বন্ধ।

কারখানার সামনে দুই বছরের ছেলে আদনানকে নিয়ে বিলাপ করছিলেন গৃহবধূ মোসা. রুবি। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী মো. সজিব (২৬) গত রাত ৯টা থেকে নিখোঁজ। সজিব উপজেলার মুড়াপাড়া গঙ্গানগর এলাকার শহীদ মিয়ার ছেলে। সজিব রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতেন জানিয়ে রুবি বলেন, ‘কারখানায় লুটপাট হইতাছে শুনে সজিব কারখানায় আসে। রাত ৯টায় শেষবার কথা হয়। তখন সে কারখানায়ই ছিল। পরে আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’

নিখোঁজের তালিকায় নাম আছে একটি অ্যাগ্রো ফার্মের রাখাল মো. শাওন (১২), একটি সিমেন্ট কারখানার শ্রমিক আবদুর রহমান (৩০), ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সুজন (২৮), তাঁর বোন মাফিয়া বেগম (৩০), বোনের স্বামী মো. রতন (৩৫), বড়ালু এলাকার রাজমিস্ত্রি হাসান আলী (৩২), তাঁর দুই বন্ধু অহিদ (৩২), রুবেল (৩০), মুদিদোকানি শাহাদাত সিকদার (২৯), তাঁর ভাই সাব্বির সিকদারসহ (২৫) অনেকে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান মাহমুদ বলেন, আগুন লাগানো ও লুটপাটের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নেবে। নতুন করে কেউ যেন লুটপাটে না জড়ায়, সে বিষয়ে তাঁরা সতর্ক আছেন।