‘মসজিদের ইমাম পাল্টানো যায়, ঘুষখোর আর সুদখোর পাল্টানো যায় না’ ফেইসবুকে কমেন্টস করায় ৪ পরিবার সমাজচ্যুত

  • আপডেট: ০৮:১৮:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪
  • ৫৮

ছবি-সংগৃহিত।

‘মসজিদের ইমাম পাল্টানো যায়, ঘুষখোর আর সুদখোর পাল্টানো যায় না’ এমন লেখা ফেসবুক পোস্ট ও ওই পোস্টে কমেন্ট করায় চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জোড়খালী গ্রামে।

ভুক্তভোগীরা হলেন- বেপারী বাড়ির সাইফুদ্দিন, সরকার বাড়ির গোলাম নবী সরকার, জোবায়ের ও মানিক সরকার। ওই চার পরিবারে ৩৯ সদস্যের বসবাস। সাইফুদ্দিনের পোস্টে মসজিদ কমিটির সম্মানহানি হয়েছে বলে এই সিদ্ধান্ত। এমনটা দাবি করছেন মসজিদ কমিটির সদস্য রুহুল আমিন মিয়াজীর।

জানা গেছে, পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড জোড়খালী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন স্থানীয় মসজিদের ইমামকে চাকরি থেকে বাদ দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২২ জুন তার ফেসবুকে একটি মতামত পোস্ট করেন। ওই পোস্টে কমেন্টস করে একই এলাকার আরও তিন পরিবারের সদস্য। ফেসবুকে মতামত পোস্ট করায় গত ২৯ জুন রাতে মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে চার পরিবারকে সমাজ্যুত করেন তারা। তবে তারা মসজিদ কমিটির কাছে ক্ষমা চাইলে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে।

সিদ্ধান্তের পরপরই শিপন আহম্মেদ নামের স্থানীয় বাসিন্দার ফেসবুক আইডি থেকে সাইফুদ্দিনের ছবি সম্বলিত ‘সমাজ থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে’ বলে প্রচার করা হয়। তারপর থেকে সমাজের লোকজন এই চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা ও চলাফেরা বন্ধ করে দেয়।

সাইফুদ্দিন বলেন, ‘পৌর কাউন্সিলর সবুজ বেপারী গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। তার যোগসাজশে আমাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। আমি ফেসবুকে কারও নাম নিয়ে পোস্ট করিনি।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সবুজ বেপারী ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই বৈঠকে গ্রামের ৮০ থেকে ১০০ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিল। তখন চার পরিবারকে সমাজ থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুই পরিবার ক্ষমা চেয়েছে। বাকি চার পরিবার ক্ষমা চাইলে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আসবে গ্রামবাসী।

চাঁদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য ও সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একজনকে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সমাজ বা সরকার কাউকে দেয় নাই। এটাকে যত দ্রুত নিবারণ করা যায়, ততই মঙ্গল। সমাজচ্যুতের এই বিষয়টিকে প্রশাসনের শক্তভাবে মোকাবিলা করা উচিত।

এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ইমামকে বিদায় দেয়ার বিষয়টি জেনেছি। পরবর্তী ঘটনা জানা নাই। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী’র সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম

‘মসজিদের ইমাম পাল্টানো যায়, ঘুষখোর আর সুদখোর পাল্টানো যায় না’ ফেইসবুকে কমেন্টস করায় ৪ পরিবার সমাজচ্যুত

আপডেট: ০৮:১৮:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

‘মসজিদের ইমাম পাল্টানো যায়, ঘুষখোর আর সুদখোর পাল্টানো যায় না’ এমন লেখা ফেসবুক পোস্ট ও ওই পোস্টে কমেন্ট করায় চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জোড়খালী গ্রামে।

ভুক্তভোগীরা হলেন- বেপারী বাড়ির সাইফুদ্দিন, সরকার বাড়ির গোলাম নবী সরকার, জোবায়ের ও মানিক সরকার। ওই চার পরিবারে ৩৯ সদস্যের বসবাস। সাইফুদ্দিনের পোস্টে মসজিদ কমিটির সম্মানহানি হয়েছে বলে এই সিদ্ধান্ত। এমনটা দাবি করছেন মসজিদ কমিটির সদস্য রুহুল আমিন মিয়াজীর।

জানা গেছে, পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড জোড়খালী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন স্থানীয় মসজিদের ইমামকে চাকরি থেকে বাদ দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২২ জুন তার ফেসবুকে একটি মতামত পোস্ট করেন। ওই পোস্টে কমেন্টস করে একই এলাকার আরও তিন পরিবারের সদস্য। ফেসবুকে মতামত পোস্ট করায় গত ২৯ জুন রাতে মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে চার পরিবারকে সমাজ্যুত করেন তারা। তবে তারা মসজিদ কমিটির কাছে ক্ষমা চাইলে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে।

সিদ্ধান্তের পরপরই শিপন আহম্মেদ নামের স্থানীয় বাসিন্দার ফেসবুক আইডি থেকে সাইফুদ্দিনের ছবি সম্বলিত ‘সমাজ থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে’ বলে প্রচার করা হয়। তারপর থেকে সমাজের লোকজন এই চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা ও চলাফেরা বন্ধ করে দেয়।

সাইফুদ্দিন বলেন, ‘পৌর কাউন্সিলর সবুজ বেপারী গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। তার যোগসাজশে আমাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। আমি ফেসবুকে কারও নাম নিয়ে পোস্ট করিনি।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সবুজ বেপারী ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই বৈঠকে গ্রামের ৮০ থেকে ১০০ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিল। তখন চার পরিবারকে সমাজ থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুই পরিবার ক্ষমা চেয়েছে। বাকি চার পরিবার ক্ষমা চাইলে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আসবে গ্রামবাসী।

চাঁদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য ও সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একজনকে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সমাজ বা সরকার কাউকে দেয় নাই। এটাকে যত দ্রুত নিবারণ করা যায়, ততই মঙ্গল। সমাজচ্যুতের এই বিষয়টিকে প্রশাসনের শক্তভাবে মোকাবিলা করা উচিত।

এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ইমামকে বিদায় দেয়ার বিষয়টি জেনেছি। পরবর্তী ঘটনা জানা নাই। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।